অনৈতিহাসিক : করোনা-বিরোধী যুদ্ধেও দেশপ্রেম সবার ওপরে

মুহম্মদ শফিকুর রহমান :
লকডাউন তুলে জীবনের সুযোগ করে দেবার পর থেকে করোনার আক্রমণ বেড়েই চলেছে, দিনে মৃত্যুও ৪০ থেকে ৪৫ পর্যন্ত এসে দাঁড়িয়েছে।আজ বৃহস্পতিবার কত জানিনা তবে বিশ্ব পরিস্থিতির দিকে তাকালে দেখব সব দেশই কোভিড ১৯ বা করোনা বিরোধী সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ। আর কেউ ঘরে বসে থাকতে চাইছে না। মানুষ জীবিকার তাগিদে করোনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মাঠে বন্দরে অফিস-আদালতে নেমে পড়েছে। কি করবে কাজ না করলে খাবে কী। যারা দিনমজুর বা দিন এনে দিন খায় তাদের পরিবার নিয়ে চলার ভিন্ন কোনো উপায়তো নেই। উপায় নেই চাপোষা মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত্তের। কৃষকরাতো ক্ষেতে নামতেই হবে। কোনো এককালে শরৎবাবু বলেছিলেন জলে নেমে কুমিরের সাথে ঝগড়া করা বোকামি। কিন্তু আজ সময়টা এমনই যে জলে কুমির থাকুক আর যা-ই থাকুক মানুষকে জলে নামতেই হবে এবং প্রয়োজনে কুমিরের সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে হবে।আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এ মুহূর্তে যখন এই লেখা লিখছি তখন তিনি বাজেট পূর্ব সর্বশেষ কেবিনেট সভা করছেন। যেদিন থেকে করোনা সংক্রমণ শুরু হয়েছে সেদিন থেকেই মানুষকে সুরক্ষার সাথে বিশেষজ্ঞদের অভিমত নিয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পরামর্শ দিয়ে চলেছেন যা কেউ ধারণাও করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী অনেক কাজ করেন জানি কিন্তু সেই অনেক যে এতোতা অনেকই আমরা জানতাম না। আজ এই ১১ জুন তার কারামুক্তি দিবস তাও আমরা মনে রেখেছি কি? তিনি না। তাইতো তিনি কেবিনেট সভা করছেন। গতবছর বাজেট দেবার দিন অর্থমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় বাজেট পেশ করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রী দাঁড়িয়ে দক্ষ অর্থমন্ত্রীর মত সংসদে বাজেট পেশ করলেন। উপস্থিত সংসদ সদস্যগণ অবাক হয়ে কেবল শুনছিলেন।আজও হয়তো কেবিনেট থেকে বেরিয়েই আবার জাতির সুরক্ষার নির্দেশনা প্রদানে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন।

এই ভাবেই জাতির পিতার সারা জীবনের সংগ্রাম আন্দোলন আর ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে এবং শেখ হাসিনার ৪৫ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং তার ধীশক্তি সম্পন্ন দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হয়ে আছে।
আজ সবচেয়ে বড় প্রয়োজন দেশপ্রেম।বিএনপি’র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বা রুহুল কবির রিজভীর মত দেশপ্রেম নয় যে ঘর পুড়ছে আর তাতে আলু পোড়া দিয়ে খাবে।না ঘরে আগুন লাগলে সঙ্গে সঙ্গে আগুন নেভানোর কাজে এবং ঘরে কোন মানুষ থাকলে তাকে উদ্ধারে লাগতে হবে। গরু ছাগল কুকুর বিড়াল পড়লেও তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসতে হবে।দেশপ্রেম জন্ম নেয়া কোনো সহজ ব্যাপার নয়।যে মানুষ বা বাঙালি বাংলাদেশের জন্মের সাথে জড়িত নয় দেশের প্রতি তার দরদ মায়ের চেয়ে মাসির মতই। যে বাঙালি বাংলাদেশের জন্মের সাথে সম্পৃক্ত কতগুলো জন্মদিন জানেননা বা কতগুলো স্থান বা ঐতিহাসিক স্থাপনা চেনেননা বা এসবের পেছনের ঘটনা জানেননা তার স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এখনো পূর্ণতা লাভ করেনি। এরই মধ্যে অর্ধশতাব্দী পার হয়ে যাচ্ছে আর দেরী করা ঠিক হবেনা। বাংলাদেশে একাত্তরের মত আজ আবার মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ন। এ যুদ্ধে দেশপ্রেম সবার উপরে। আর দেশপ্রেম জন্ম নেবে এর ইতিহাস ঐতিহ্যের ওপর :
• বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
: জন্মস্থান- টুঙ্গিপাড়া গোপালগঞ্জ
: বাড়ি- প্রাচীন শেখ বাড়ি
: জন্ম – ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ
: পিতা- শেখ লুৎফর রহমান
: মাতা- শেখ সায়েরা খাতুন
: মৃত্যু (নিহত) – সহধর্মিণী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবসহ ধানমন্ডির বাড়িতে নিহত ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট
: শিক্ষা- গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (ইসলামিয়া কলেজ),থেকে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ (১৯৪৭) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি। আন্দোলন করার কারনে রাষ্টিকেট হন।

• বাংলাদেশের চার বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
: জাতির পিতার জন্মস্থান টুংগীপাড়া গোপালগঞ্জ
: বাড়ি প্রাচীন শেখ বাড়ি
: জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর
: পিতা মাতা- ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাত বরণকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব
: শিক্ষা – গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢাকা আজিমপুর গার্লস হাই স্কুল, ইডেন গার্লস কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি অর্জন। ১৫ আগস্ট বর্বর হত্যাকাণ্ডের কারনে এম.এ পরীক্ষা দিতে পারেননি
: স্বামী মরহুম ডঃ এম ওয়াজেদ মিয়া প্রখ্যাত অনুবিজ্ঞানী
: সন্তান পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএস এবং প্রখ্যাত আইটি বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশকে ডিজিটাইজেশনে মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা (অবৈতনিক)
: কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএস এবং অটিজমের ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ এবং জাতিসংঘের উপদেষ্টা।

• বাঙালির কবি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার লেখা গান
“আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি” বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত
: জন্ম ১৮৬১ সালের ২৫ শে বৈশাখ কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে যদিও আদি বাড়ি এ বাংলায়
: মৃত্যু ১৯৪১ সালের ২২ শে শ্রাবণ।

• জাতীয় কবি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম
: জন্ম – ১৮৯৯ সালের ২৫ শে মে পশ্চিমবাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামের কাজী বাড়ি
: মৃত্যু ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট।

কতগুলো তারিখ :
• ১৯৪৮ সালের ৪ঠা জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম
• ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের সভা, সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান
• ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার রোজ গার্ডেনে বৈঠক করে মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি শামসুল হককে সাধারণ সম্পাদক ও শেখ মুজিবুর রহমানকে এসিস্ট্যান্ট সাধারণ সম্পাদক করে আওয়ামী লীগ গঠন করা হয়।
• একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ রাষ্ট্রভাষার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর গুলি এবং রফিক শফিক বরকত সালাম জব্বার সহ ছাত্র নিহত। সেদিন থেকে শহীদ দিবস এবং বর্তমানে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস
• ১৯৫৪ সালে ২১ দফার ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্ট গঠন এবং নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয়লাভ ও পাকিস্তানের সরকার গঠন। এই সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেন
• ১৯৫৭ সালে টাঙ্গাইলের কাগমারি সম্মেলনে মাওলানা ভাসানী আওয়ামীলীগ ত্যাগ করেন, মাওলানা আব্দুর রশিদ এর্ক বাগিশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের সভাপতি হন।
• ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধীদলীয় নেতাদের শীর্ষ বৈঠকে শেখ মুজিব তাঁর ঐতিহাসিক ৬ দফা পেশ করেন। বৈঠকে তা গ্রহন করেনি। শেখ মুজিব বৈঠক থেকে বেরীয়ে প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যেমে ৬ দফা পেশ করেন।
• ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ফিরে বিমান বন্দরে ৬ দফা ব্যাখ্যা করেন এবং এর পক্ষে আন্দোলনের ডাক দেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটিতে ৬ দফা অনুমোদন করেন। মূলত ৬ দফা দেবার পর থেকে প্রতিটি দিনই গুরুত্বপূর্ণ। শেখ মুজিব ৬ দফার পক্ষে জনমত গঠনে গোটা পূর্ববাংলা সফর শুরু করেন। তিনি যেখানে যেতেন সেখানেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হতো এবং ফেরার পথে গ্রেপ্তার করা হত। ৮ মে নারায়ণগঞ্জে জনসমাবেশেষে ঢাকায় ফিরে এলে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।এবং এপর্যায়ে তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে পাকিস্তানকে খন্ডিত করার অভিযোগ এনে প্রতিরক্ষা আইনে রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দেওয়া হয়। ৬ দফায় প্রদেশগুলোর স্থায়ত্ব-শাসন দাবি করা হয় কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা তা সমর্থন করেননি।বস্তত ৬ দফায় আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনসহ কর ধার্য করার ক্ষমতা প্রদেশগুলোকে দিতে হবে। কেন্দ্রের হাতে থাকবে কেবল প্রতিরক্ষা ও বিদেশনীতি। অন্য সব ক্ষমতা প্রদেশগুলোকে দিতে হবে। এর মূল কথা হচ্ছে স্বাধীনতা। যে কারণে ৬ দফাকে বলা হয় ‘বাঙালির মুক্তির সনদ’।
• ১৯৬৬ সালের ৭ জুন সর্বাত্মক হরতাল পালিত হয়। এই হরতালটি ছিল নজিরবিহীন। এরপর শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা শুরু করে।এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসুর নেতৃত্বে (ভিপি তখন তোফায়েল আহমেদ) ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়।ছাত্ররা ১১ দফা দাবি প্রণয়ন করে ৬ দফা ১১ দফার ভিত্তিতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে রাজপথের আন্দোলনকে গণঅভ্যুত্থানে রূপ দেয়। মিলিটারি স্বৈরাচার আইয়ুব এর পতন ঘটে এবং ১৯৬৯ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মামলা প্রত্যাহার ও ২২ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্যদের মুক্তি দেয়া হয়।২৩ শে ফেব্রুয়ারি রেসকোর্স ময়দানে ১০ লাখ জনতার বিশাল জনসমুদ্রে জাতির পক্ষে তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১০ লাখ মানুষ বিশ লাখ হাত তুলে তা সমর্থন করেন।
• ১২ নভেম্বর ১৯৭০ একটি বেদনার্ত দিন।ঐদিন দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ১০ লাখ লোক নিহত হয়েছিল
• ৭ ডিসেম্বর ১৯৭০ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।এতে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের পূর্ববাংলার ১৬৯ আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ২ টি বাদে ১৬৭ আসনে জয়লাভ করে পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টি হিসেবে এবং বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের একক নেতা আবির্ভূত হন।কিন্তু পাকিস্তানি মিলিটারি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরে তথা বঙ্গবন্ধুকে সরকার গঠন করতে দেয় না।
• একাত্তরের মার্চ-এ বঙ্গবন্ধুর ডাকে ইতিহাসের নজিরবিহীন অসহযোগ আন্দোলন হয়
• ৭ মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্সে ১০ লক্ষাধিক জনতার উত্তাল সমুদ্রে তার ৭ ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
• ২৫ মার্চ ১৯৭১ ছিল কালো রাত। এই সাড়ে আটটা থেকে পাকিস্তানী আর্মি অতর্কিতে ট্যাংক কামান নিয়ে হামলা চালায় এবং নির্বিচারে গণহত্যা শুরু করে।
• ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হবার পূর্ব মুহূর্তে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন তৎকালীন ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) এর ওয়ারলেসের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রচারিত হয়। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধে ৩০ লাখ বাঙ্গালী শহীদ হন এবং ৫ লক্ষাধিক মা-বোন নির্যাতিত হন।প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী প্রথম থেকে পাশে দাঁড়ান এবং দেশ পুরোপুরি শত্রু মুক্ত হওয়া পর্যন্ত সামরিক সাহায্য সহ সবরকম সাহায্য দিয়ে যান।
• ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পাকিস্তান আর্মি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেন। দেশ শ্ত্রুমুক্ত হয়।
• ৮ জানুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বিশেষ বিমানে লন্ডন এবং দিল্লি হয়ে
• ১০ ই জানুয়ারি ১৯৭২ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন
• ০২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ ঢাকার ইডেন হোটেলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠকন্যা শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। শেখ হাসিনা কিশোর বয়স থেকেই রাজনীতির আবহে বড় হয়েছে। ঢাকার আজিমপুর গার্লস হাই স্কুল ও ইডেন কলেজে পড়ার সময় আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। ইডেন গার্লস কলেজে ইন্টারমিডিয়েট ছাত্রী হিসেবে ঐ কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে ৬ দফা ১১ দফা ভিত্তিক ছাত্র গণঅভ্যুত্থানে সামনের সারিতে ছিলেন।
• ১৭ মে ১৯৮১ দীর্ঘ ছয় বছরের প্রবাস জীবন থেকে তৎকালীন মিলিটারি শাসক জিয়ার সকল চক্রান্ত প্রতিবন্ধকতার দেয়াল ভেঙ্গে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই ভয়াবহ কালো রাতের কয়েকদিন আগে শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানা ও সন্তানদের নিয়ে জার্মানিতে স্বামী প্রখ্যাত অনুবিজ্ঞানী ডঃ ওয়াজেদ মিয়ার কাছে যান। ডঃ ওয়াজেদ তখন সেখানে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করছিলেন। ১৫ আগস্ট ঘটে যাবার পর অসহায়ের মতো কয়েকদিন জার্মানিতে তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ছিলেন।এরপরই ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর আমন্ত্রণে দিল্লি চলে যান এবং দীর্ঘ ছয় বছর ইন্দিরা গান্ধী তথা ভারত সরকারের আশ্রয়ে ছিলেন। যতবার দেশে ফিরতে চেয়েছেন ততোবারই মিলিটারি জিয়া প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন।
অবশেষে ১৭ মে ১৯৮১ সকল চক্রান্ত প্রতিবন্ধকতাকে তোয়াক্কা না করে দেশে ফিরে আসেন। ১৯৭২ সালের ১০ শে জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস এর মতোই ঢাকায় জনতার ঢল নেমেছিল। তখনো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান অপারেশন শুরু হয়নি। তেজগাঁও বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অপারেট করত।শেখ হাসিনাকে বহনকারী ফ্লাইট তেজগাঁওয়ে অবতরণ করার পর সেখান থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ ৩২ নম্বরের বাসভবন (ঢুকতে দেওয়া হয়নি) এবং ৫ নং এর সুধাসদন পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে গাছে বাড়ির ছাদে অন্তত অর্ধকোটি মানুষ বঙ্গবন্ধু কন্যাকে এক নজর দেখার জন্য জড়ো হয়। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এসেছিল মানুষ। পুরো সময়টা মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল, বৃষ্টি মানুষের আগমন রোধ করতে পারেনি।সেদিন মানিক মিয়া এভিনিউতে একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন এবং ওই বক্তৃতার পরই সামরিক স্বৈরাচারের ভিত কেঁপে উঠেছিল এবং গণতন্ত্রের ভিত রচিত হয়েছিল।
• ১১ জুন ২০০৮ আর একটি স্মরণীয় দিন এদিন শেখ হাসিনা সামরিক জান্তার কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন দীর্ঘ ১১ মাস পর। ২০০১ সালের নির্বাচনে এক কোটি ২৪ লাখ ভুয়া ভোটার প্রয়োগ করে নানান কলা কৌশলের মাধ্যমে বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে নেয় এবং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হন।পরিতাপের বিষয় হলো নির্বাচনের রেজাল্ট প্রকাশ হবার আগে এমনকি গণনা শেষ হবার আগে বিকেল থেকে শুরু হয় বিএনপি জামাতের গুন্ডা বাহিনীর তান্ডব। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অর্থাৎ নৌকার ভোটারদের হাত-পা কাটা চোখ উপড়ে ফেলা, পুকুরের মাছ গাছ গোয়ালের গরু লুট থেকে শুরু করে নারী নির্যাতন হেন অপকর্ম ব্যভিচার ছিলনা যা বিএনপি-জামাত করেননি।
এরই বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের স্বাধীনতার পক্ষের দল রুখে দাঁড়ায়।খালেদা জিয়ার গদি নড়বড়ে হয়ে যায় এবং যখন তার পতন অতি নিকটে তখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আন্দোলন স্তব্ধ করার জন্য তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উদ্দিন ফকরুদ্দিন ক্ষমতা দখল করে এবং শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে জেলে প্রেরণ করে। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের দেড় মাস পরে খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার করে তবে তা ছিল মুখরক্ষার গ্রেপ্তার।

শুরু করেছিলাম করোনা দিয়ে। আমার লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের দেশপ্রেম জাগানো। আমাদের সামনে বিশাল পরীক্ষা- প্রথম দেশপ্রেমের পরীক্ষা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সেদিন নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু আর আজ দ্বিতীয় পরীক্ষা করোনা বিরোধী যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এ যুদ্ধেও আমরা জয়লাভ করবো ইনশাআল্লাহ।
পদ্মের মতো কয়েকটি লাইন দিয়ে আজকের মত বিদায় নিচ্ছি:
১. করোনারে করোনা
আর কত রক্ত খাবি
কবে যাবি
আর তো পারি না।।
২. তোর শরীর নেই
মুখ নেই পেট নেই
তোর খিদে বড়
মানুষ দিয়ে ক্ষিধে মেটাও।।
৩. এবার তুই যাবি
কিনা বল
নইলে তোর হাড়
করব জল।।

ঢাকা- ১২ জুন ২০২০
লেখক- এমপি
সাবেক সভাপতি, জাতীয় প্রেসক্লাব
ই-মেইল- balisshafiq@gmail.com

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন