একজন তৃষা


মোঃ জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় :
——————————
আল্লাহ মোদের তুমি কবুল করো, সকল গুনাহ ক্ষমা করো, মনের কালিমা দূর করো, জীবনটাকে পবিত্র করো।
আজ বিশ্বজুড়ে মুসলিম, হিন্ধু, বৌদ্দ, খৃষ্টান ধর্মালম্বীদের একটাই কথা সকল পাপমোচন করে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরেয়ে দাও, আজ সবাই এক বাক্যে বলছে বিশাল আকাশ, জমিন এবং সারাজাহানের মালিক আল্লাহর কাছে আমাদের ক্ষমা করে করোনা ভাইরাস মুক্ত জীবন দান করো। আজ নিজেই নিজের ঘরে বন্দি, বিশ্ব জুড়ে সরকার বাহাদুরদের সাস্থ্যসেবা, প্রশাসন সহ সবার শুধু একটাই চেস্টা করোনা ঝুকি থেকে বেঁচে থাকার।

বিশ্বের উন্যত দেশ আছে সব নেই শুধু জানা এই করোনা থেকে বাঁচার রাস্তা। এই অবস্থা থেকে আমাদের সবাইকে বাঁচাতে পারেন একমাত্র মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন। যে যেই ভাবে পারছেন দোয়া করছেন, নিরাপদে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন।

এমন এক মহামারী করোনা যার আঘাতে কেউ মারা গেলে তার নিকট, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু এমনকি গোসল, নামাজ কিছুই হয়না। হে আল্লাহ তুমি রক্ষা করো, তোমার প্রিয় বন্ধু, প্রিয় হাবিব বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত হিসাবে আমাদের ক্ষমা করে দাও। এই একি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন আমেরিকা প্রবাসীর স্ত্রী তৃষা, যার মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়, স্বামী সন্তান কেউ কাছে যেতে পারেনি, সংবাদ টুকু নাসিমা সোমা এবং মোহনা টেলিভিশনের নিউজ প্রেজেন্টার কাজী তামান্না তৃষা আপার মাধ্যমে জেনেছি।
এই লেখা টুকু লিখতে গিয়ে আমি আমার দুচোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি, এই ভেবে আমার মৃত্যু কিভাবে আছে আমি নিজেও জানিনা, সৌদি আরব রিয়াদ প্রবাসে নিজেও বসবাস করছি। মহান আল্লাহর কাছে একটাই দোয়া হে আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন রহমত দিন।
আমেরিকা প্রবাসী তৃষাকে যে ভাবে দাফন দেয়া হয়েছে

ক্রেনের মাধ্যমে কবরস্থ করা হলো সুদর্শনা আমিনা তৃষাকে। নিসপাপ চেহারার এই বাঙালি নারী কি কখনো ভেবেছিলেন– যান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাঁর দাফন-কাফন সম্পন্ন হবে; শেষ বারের মতো দেখতে আসবে না কোন স্বজন-পরিজন; ভাগ্যে জুটবে না শেষ বিদায়ের সম্মানটুকু; আহা! ফুটফুটে তিনটি অবুঝ সন্তান রেখে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন গুণবতী ও রুপবতী এই নারী। ছবিতে দৃশ্যমান রমণী ও তার সন্তানগুলো দেখলে বড্ড বেশি কষ্ট লাগে।

স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে নিউইয়র্কে জ্যামাইকার হাইল্যান্ড অ্যাভিনিউয়ে বাস করতেন তৃষা। তাঁর পুরো নাম আমিনা ইন্দালিব তৃষা। স্বামী বোরহান হাওলাদার। এই দম্পতির রয়েছে দু’টি মেয়ে ও একটি ছেলে। কনিষ্ঠ কন্যাটির বয়স মাত্র ১৪ মাস। এই দুধের শিশুকে এখন দেখবে কে? নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ বিভাগ সরকারিভাবে বাচ্চাটিকে লালন-পালনে আগ্রহী। ১৯৮২ সালে জন্ম নেওয়া এই বাঙালিনী ‍বাংলার আলো-বাতাসেই বেড়ে ‍উঠেছিলেন। নিউইয়র্কে তৃষার প্রবাসজীবন মাত্র চার বছরের। তাঁর বাবার নাম মনির হোসেন হাওলাদার। পৈতৃক নিবাস মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার মধ্যপাড়া-তেলিপাড়ায়।

মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন আমিনা তৃষা। জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে জ্যামাইকা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। মেডিকেল টেস্টের পর জানা গেলো, তিনি কোভিড-১৯ এ আকান্ত্র হয়েছেন। এই হাসপাতালে এক সপ্তাহ চিকিৎসাধিন থাকাবস্থায় ২৩ মার্চ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন আমিনা তৃষা। তিনদিন পর তাঁকে কবরস্থ করা হয় লং আইল্যান্ডে। ক্রেন দিয়ে কবরে নামানো হলো ৩৮ বছর বয়সী এই নারীর লাশ। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া কারো লাশ দাফন করা হয় এভাবেই। হাত দিয়ে লাশ কবরে নামানোর সুযোগ নেই। সংক্রমণ হওয়ার ভয়ে। ফলে কফিনে ভরা লাশ ক্রেন দিয়ে নামানো হয় কবরে এবং ক্রেন দিয়েই কবরের মাটি দেওয়া হয়।

আমিনা তৃষার এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে মনটা কেঁদে ওঠে। তাঁর জন্য জান্নাত কামনা করছি। নিজের জন্য এবং সকলের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে একটাই দোয়া হে আল্লাহ এমন মরন কাউকে দিওনা, একদিন তো আমরা তোমার কাছে ফিরে যেতেই হবে। রহমত দান করুন করোনা ভাইরাস মুক্ত জীবন দান করুন।

লেখক পরিচিতি- সাংবাদিক, নাট্যকার, লেখক, কবি ও মানবাধিকার কর্মী, রিয়াদ, সৌদি আরব।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)