করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত চাঁদপুরবাসী

তালহা জুবায়ের :
করোনার ভাইরাসের কারণে বর্তমানে পুরো দেশ বিপর্যস্ত। এরই মাঝে চাঁদপুরে নতুন আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে প্রাণঘাতী ডেঙ্গু জ্বর। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই বাড়ছে মশার প্রাদুর্ভাব। সকাল-সন্ধ্যা সারা বেলা মশার কামড়ে অতিষ্ট সাধারণ মানুষ, বাধাগ্রস্থ হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন-যাপন।

চাঁদপুর শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া এসবি খালসহ পাড়া-মহল্লার ড্রেনগুলোতে অবস্থিত লার্ভা থেকে জন্ম নিচ্ছে মশা। রাস্তার আশপাশে ফেলে রাখা ময়লা-আবর্জনার কারণে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে মশা-মাছির সংখ্যা। তাছাড়া বৈশাখের বৃষ্টিতে বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতেও ডিম পাড়ছে মশা। অতিমাত্রায় বংশবৃদ্ধির ফলে মশার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে মানুষ। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কের পাশাপাশি নতুন করে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে আতঙ্কিত চাঁদপুরবাসী।

মশা এখন শুধু রাতেই নয়, দিনের বেলায়ও কামড়াচ্ছে মানুষকে। মশার হাত থেকে বাঁচতে অনেকই বাধ্য হয়ে দিনের বেলাও ব্যবহার করছে মশারী। মশা নিধনে পৌরসভার পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি তেমন কোন কার্যকর ব্যবস্থা। শহরের বিভিন্ন স্থানে কিছু মশার ঔষধ ছিটালেও তা পর্যাপ্ত নয় বলছেন শহরবাসী।

শহরের প্রতাপ সাহা রোড এলাকার বাসিন্দা রেদওয়ান আহমেদ, প্রফেসর পাড়া এলাকার ওমর ফারুক ও চেয়ারম্যান ঘাট এলাকার বাসিন্দা সামীর বলেন, বর্ষার মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই মশার উপদ্রপ বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাপক হারে। শুধু রাতের বেলায় নয়, দিনেও কামড়াচ্ছে মশা।

মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য এখন দিনের বেলায়ও মশারী টানাতে হচ্ছে। কয়েল জ্বালিয়ে বা এ্যারোসল স্প্রে করেও মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এতে করে মশার কামড় খেয়ে ডেঙ্গু জ¦র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একদিকে মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের স্বাভাবিক জনজীবন ব্যহত হচ্ছে। নতুন করে ডেঙ্গু জ¦র হলে এর পরিনতি হবে ভয়াবহ।

পৌরবাসী জানায়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মশার কামড় থেকে বাঁচার কোন উপায় দেখছি না। মশা নিধনের জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে লক্ষনীয় কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। এখনই যদি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তবে আমাদের দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না। তাই ডেঙ্গু জ¦রের হাত থেকে বাঁচতে মশা নিধনে অতিদ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানাচ্ছি।

চাঁদপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, গেল বছর জেলায় ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হয়েছিল প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। এসব রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেয়েছে চিকিৎসকরা। এই করোনা মহামারিতে জেলায় নতুন করে ডেঙ্গু দেখা দিলে তা সামাল দেওয়া হয়ে পড়বে অনেকটাই অসম্ভব।

এ ব্যাপারে আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. এ এইচ এম সুজাউদ্দৌলা রুবেল চাঁদপুর প্রবাহকে বলেন, বর্ষার শুরুতেই দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তাই মশা নিধনের জন্য এখনই ঔষধ ছিটানো প্রয়োজন। পাশাপাশি বাসা-বাড়ির যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে সকলকে। বিশেষ করে ফুলের টব, ডাবের খোসা, প্লাস্টিকের বোতলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রে পানি জমতে দেওয়া যাবে না।

তিনি আরো বলেন, গত বছর দেশে করোনা ভাইরাস ছিল না। তারপরেও জেলায় ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্ত হওয়া প্রায় আড়াই হাজার রোগীতে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেয়েছে চিকিৎসক ও নার্সরা। এখনকার এই করোনা পরিস্থিতিতে যদি ডেঙ্গু জ¦রে মানুষ আক্রান্ত হয়, তাহলে ভয়াবহ পরিণতির সৃষ্টি হবে। যা সামাল দেওয়া হয়ে পড়বে প্রায় অসম্ভব।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র সিদ্দিকুর রহমান ঢালী চাঁদপুর প্রবাহকে বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে কাজ করার পাশাপাশি মশা নিধনের কাজও করা হচ্ছে। ইতমধ্যে ড্রেনসহ বিভিন্ন স্থানে চাঁদপুর পৌরসভার উদ্যোগে মশা মারার ঔষধ ছিটানো হয়েছে। আামদের নিকট পর্যাপ্ত পরিমাণে ঔষধ রয়েছে। প্রয়োজন পড়লে আবারো মশা মারার ঔষধ ছিটানো হবে পাড়া-মহল্লায়।

পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আহ্বান জানিয়ে পৌরবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যার যার স্থান থেকে সকলকে সচেতন থাকতে হবে। সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করলে মশা নিধন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। অতীতের যেকোন সংকটময় সময়ের মত ডেঙ্গু মোকাবেলায় সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন