করোনা সংক্রমণে সামাজিক দূরত্ব মানছে না বাবুরহাটবাসী

গাজী মো. মহসিন :
বর্তমান করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব মানছেন না চাঁদপুর সদর উপজেলার পৌর ১৪নং ওয়ার্ডস্থ বাবুরহাটবাসী। ঐতিহ্যবাহী বাবুরহাট বাজারটি একটি সুবিশাল বাজার। এই বাজারটি চাঁদপুর পৌরসভার ১৪নং ওয়ার্ডে অবস্থিত এবং এর আশেপাশে রয়েছে কল্যাণপুর, আশিকাটি, মৈশাদী, তরপুরচন্ডীসহ কয়েকটি ইউনিয়ন। এই কয়েকটি ইউনিয়নের বাসিন্দাদের দৈনিক নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার স্থায়ী ঠিকানা এই বাজার।

এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই ক্রেতা সাধারণ তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে আসেন এই বাজারে। এছাড়া এই এলাকার পাশেই রয়েছে জেলা পরিষদ, জেলা পুলিশ লাইন, জেলা কারাগার ও বিসিক শিল্প নগরী থাকার কারণে এই এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্বও অনেক। ফলে প্রতিনিয়তই বাবুরহাট বাজারে ভিড় লেগে থাকাটাই স্বাভাবিক।

বর্তমান করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে সংক্রমণ রোধে সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যে বিধি নিষেধ মানতে বলেছেন, সেই সময়ে আগের স্বাভাবিক ভীড় বা জনসমাগম কতটুকু যৌক্তিক। জনসমাগম রোধে জেলা প্রশাসন গত গত ৯ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা থেকে লকডাউন ঘোষণা করেছেন এবং জরুরী সেবা ও খাদ্য ও ঔষধ ব্যতিত সকল দোকান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে জরুরী সেবা ও ঔষধ ব্যতিত সকল ব্যবসা
প্রতিষ্ঠান দুপুর ২টার পর বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করেন।

এছাড়া এ সময়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভীড় না করে কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেন। এছাড়া অতিপ্রয়োজন ব্যতিত কাউকেই বাসা থেকে বের না হওয়ারও নির্দেশ দেন এবং যদি বাসা থেকে বের হন তাহলে প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র সাথে রাখার নির্দেশ দেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসনের এই নির্দেশ এখন সকলেরই জানা।

কিন্তু বাবুরহাট বাজারে প্রশাসনের এমন নির্দেশের কোনটিই মানা হচ্ছে না। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় বাবুরহাট বাজার প্রদক্ষিণ করে দেখা যায়, প্রায় সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই খোলা রয়েছে এবং বাজারে উপচে পড়া ভীড়। প্রতিটি দোকানেই সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি মানাই হচ্ছে না। যেখানে সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশ যখন করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে লগডাউন ঘোষণাসহ নানা কঠিন কর্মসূচি পালন করেও হিমশিম খাচ্ছে।

তখন বাজারে এই অবস্থা দেখলে সত্যিই গা শিউরে উঠে। বাজারের কাপড়, কসমেটিকস, হার্ডওয়ারসহ বিভিন্ন দোকানের সার্টার খুলে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত বা মডেল থানা পুলিশ আসছে খবরে বন্ধ হয়ে যায় ওই সকল দোকানপাট। আবার ভ্রাম্যমাণ আদালত ও মডেল থানা পুলিশ চলে গেলে আবার সেই আগের অবস্থার সৃষ্টি হয়।

এদিকে এমন অবস্থায় বাজারে ফুটপাতে অস্থায়ী কাচামালের দোকানও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকাংশে যার ফলে রাস্তার পরিধি কমে যাওয়ারও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বাজারের আগত কয়েকজন ক্রেতা সাধারণকে কি প্রয়োজনে বাজারে আশা হয়েছে এমন প্রশ্নে অনেকেই সঠিক কোন জবাব দিতে পারেনি। যারা এসেছেন বেশির ভাগই ছোটখাটো প্রয়োজনে বাজারে এসেছেন। যেগুলো না হলেও দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানো যায়। সবচেয়ে আতংকের বিষয় হচ্ছে বাজারে আগত ক্রেতা সাধারণের অধিকাংশই মহিলা এবং এদের অনেকের সাথে শিশু সন্তান রয়েছে।

এছাড়া মতলব থেকে চাঁদপুরগামী বিভিন্ন সিএনজিগুলো বাবুরহাট বাজারের সড়কটি ব্যবহার করে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। বিষয়টি নিয়ে প্রতিদিনই ফেসবুকে ছবি দিয়ে সমালোচনা করছেন বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও অতি প্রয়োজনে আশা কয়েকজন ক্রেতা সাধারণ।

বাবুরহাট বাজারে একটি নির্বাচিত বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি থাকলেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাজারে জেলা প্রশাসনের জরুরি বিজ্ঞপ্তিটি ব্যতিত কোন কার্যক্রমই পরিচালনা করেনি বলে জানা যায়। যেখানে জনসচেতনা বৃদ্ধি ও জনসমাগম রোধে এবং অতি প্রয়োজনীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যতিত সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধে জেলা প্রশাসনের নির্দেশ কার্যকর করা বাজার ব্যবস্থাপনা কিমিটিরই দায়িত্ব ছিল সেখানে তারা রয়েছেন পুরো নিস্ক্রিয়। বিষয়টিও নিয়েও এলাকার সচেতন কয়েকজন হতাশা প্রকাশ করেছেন।

এদিকে বাজারে জনসমাগম রোধে প্রশাসনের কম নজরদারির কারনেই এমন অবস্থা বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিমত প্রকাশ করেন। তারা জানায়, এই রকম পরিস্থিতি রোধে প্রশাসনকে ফোন করলে কেউই বিষয়টি কর্ণপাত করে না। তারা আরও বলেন, প্রশাসন দুপুরে বাজারে প্রবেশ করেন যখন বর্তমান পরিস্থিতি ছাড়াও বাজার জনসমাগম কম থাকে। লকডাউন চলাকালীন সময়ে সামাজিক দূরত্ব না মেনে বাবুরহাট বাজারের মধ্যে কয়েকটি সড়কে উপচেপড়া ভিড়।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন