চাঁদপুরের ইফার ফিল্ড সুপারভাইজার শামসুদ্দীনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) সদর উপজেলা ফিল্ড সুপারভাইজার মোঃ শামসুদ্দীন বহু বছর যাবৎ চাঁদপুরে নানা অপকর্ম ও অন্যায় করে যাচ্ছেন। এছাড়া কর্মকর্তাদের সাথে অসদাচরণ করাও তার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে।

নিজ স্ত্রীর নামে ভুয়া কেন্দ্র দেখিয়ে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎসহ নারীঘটিত বহু কেলেঙ্কারীর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিনি তার স্ত্রী জাহানারা বেগমের নামে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের (মউশিক) ভুয়া কেন্দ্র দেখিয়ে গত ৫ বছরে সাড়ে ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প চালু করেছে অনেক বছর আগে। মসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জিনগণ যারা নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্যতায় বিবেচিত হয়েছেন, তারাই এ প্রকল্পের কেন্দ্র পরিচালনা করবেন।

কিন্তু এ বিষয়টির বিপরীত করেছেন ইফার সদর ফিল্ড সুপারভাইজার মোহাম্মদ শামসুদ্দিন। মউশিকের একাধিক শিক্ষক জানান, ষোলঘর মাদ্রাসায় একটি কেন্দ্র আছে। তার পাশেই আরেকটি কেন্দ্র কী করে হয়?

শামসুদ্দিন তার স্ত্রীর নামে ভুয়া কেন্দ্র দেখিয়ে পাঁচ বছর যাবৎ এ প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিমাসে ৪ হাজার ৫শ’ করে এবং অন্যান্য ভাতাসহ পাঁচ বছরে তিনি সাড়ে ৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে।

পাশাপাশি তিনি আমাদের কেন্দ্র ভিজিটের নামে হয়রানি করেন এবং বিভিন্ন অজুহাতে মোটা অংকের টাকা চান। দেশে এখন করোনা আতঙ্ক। এ সময় তিনি আমাদের কাছে টাকা চান। আমরা নিরূপায়। চাকুরি হারাবো ভয়ে অভিযোগ করতে সাহস করছি না।

শিক্ষকদের অভিযোগের আলোকে এই প্রতিবেদক সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে বাড়ির নামে (শামসুদ্দীনের স্ত্রীর নামে) কেন্দ্র নামকরণ দেখানো হয়েছে, ওই কেন্দ্রের কোনো অস্তিত্ব এখানে নেই।

স্থানীয় ফয়সাল, ফজলে রাব্বি ও হৃদয় বলেন, আমাদের ষোলঘর মোল্লা বাড়িতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন অফিসার ভাড়া থাকতেন। এখন তিনি থাকেন না।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের মুঠোফোনে কল রিসিভ না করায় এবং তাকে অফিসে খোঁজ করে পাওয়া যায়নি বলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

ইফার উপ-পরিচালক মোহাম্মদ খলিলুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের অত্র জেলার সদর উপজেলায় কর্মরত ফিল্ড সুপারভাইজার মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের স্ত্রী জাহানারা আক্তারের নামে চাঁদপুর পৌরসভার ষোলঘর মোল্লাবাড়ি নামে একটি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র তালিকাভুক্ত আছে।

ওই কেন্দ্রে পাঠদান দীর্ঘদিন হচ্ছে না মর্মে গত ১১ জুন ২০২০ তারিখে একটি অভিযোগ পাই। অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রকল্পের ফিল্ড অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় এবং অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় উক্ত কেন্দ্র শিক্ষকের বকেয়া জানুয়ারি থেকে জুন ২০২০ সম্মানি প্রদান স্থগিত রাখা হয়।

উল্লেখ্য, শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৯২ সাল থেকে সারাদেশে মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রকল্পটির ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি ধাপ সম্পন্ন হয়েছে।

বর্তমানে ৭ম পর্যায়ে ৩ হাজার ১শ’ ২৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পে প্রায় ৮০ হাজার কেন্দ্রে আলেম-উলামা কর্মরত রয়েছেন। এ প্রকল্পে প্রায় ২৪লাখ শিশু পবিত্র কোরআন শরীফ শিক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়ে লেখাপড়া করছে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)