চাঁদপুরের প্রাইভেট হাসপাতলগুলোতে করোনার চিকিৎসা নেই!

রহিম বাদশা :
উন্নত ও ভালো চিকিৎসার জন্য এতদিন চাঁদপুরের বেসরকারি (প্রাইভেট) হাসপাতালের প্রতি মানুষের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও করোনাকালে এসব হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ এসব হাসপাতালে এমন কোনো রোগ নেই যার প্রাথমিক চিকিৎসা করা হতো না। চাঁদপুর শহরস্থ ১৫টিসহ জেলার ২৯টি বেসরকারি হাসপাতালের একটিতেও করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করা হয় না। এমনকি করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আগ্রহ দেখিয়ে একটি হাসপাতালও সিভিল সার্জন অফিসে লিখিত/মৌখিক আবেদন/আহ্বান জানায়নি। অথচ পাশ্ববর্তী জেলা কুমিল্লার ৮টি বেসরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা চলছে।

চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতালের করোনা আইসালেশন ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত কয়েকজন রোগীর স্বজন বলেন, এতদিন আমরা জানতাম ভালো চিকিৎসা করাতে হলে প্রাইভেট হাসপাতালের বিকল্প নেই। কিন্তু করোনায় সেই ধারণা পাল্টো গেছে। চাঁদপুরের কোনো প্রাইভেট হাসপাতালেই করোনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি করাচ্ছে না। করোনার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সাপোর্ট পর্যন্ত অনেক হাসপাতালের নেই। সেন্ট্রাল অক্সিজেন বা হাইফ্লো অক্সিজেন সিস্টেম নেই কোনো প্রাইভেট হাসপাতালে। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে সবাই রোগী নিয়ে সদর হাসপাতালে চলে আসছি।

রোগীর সাথে আসা এসব স্বজন আরো বলেন, অথচ সদর হাসপাতালকে যুগ যুগ ধরে অবজ্ঞা করে আসছিলাম আমরা। অতি দরিদ্র ছাড়া অন্যরা খুব কম’ই এখানে আসতো চিকিৎসা নিতে। নানা সমস্যা, অবহেলা ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও করোনাকালে সদর হাসপাতাল’ই জেলাবাসীর একমাত্র ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে। একই সাথে এই সময়ে আমরা উপলব্ধি করছি স্থানীয় প্রাইভেট হাসপাতালগুলো উন্নত সেবা দিতে অনেক সীমাবদ্ধতায় আবদ্ধ। তারপরও প্রাইভেট হাসপাতালগুলো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে করোনার চিকিৎসা শুরু করলে সরকারি হাসপাতালে চাপ অনেক কমতো। তখন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো অনেক সহজলভ্য হতো।

চাঁদপুর শহরের ষোলঘরস্থ হানী ছিদ্দিক মেমোরিয়াল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এস এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের হাসপাতালে আইসিইউ’সহ অনেক অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। তবে লোকবলের অভাবে আমাদের আইসিইউ বন্ধ। অক্সিজেন সাপোর্টও পর্যাপ্ত নয়। এসব কারণে আমরা করোনা রোগীদের চিকিৎসার চিন্তা-ভাবনা করছি না। তবে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ চাইলে এবং লোকবলসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহযোগিতা করলে আমরা আমাদের হাসপাতালে করোনা রোগীর চিকিৎসা দিতে পারি। বিশেষ করে আমাদের আইসিইউ ইউনিটে করোনা রোগীদের সেবা প্রদানে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।

চাঁদপুর বেলভিউ (প্রা.) হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. হারুন-অর-রশিদ সাগর বলেন, মূলত প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সাপোর্ট না থাকায় এবং অন্য রোগী ও চিকিৎসকদের ঝুঁকির কথা চিন্তা করে আমরা আমাদের হাসপাতালে এখনো করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা শুরু করছি না। আমাদের হাসপাতাল ভবনে কয়েকজন ডাক্তার স্বপরিবারে বসবাস করেন। এটিও আমাদের ভাবনায় নিতে হচ্ছে। তবে করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের আমরা ফিরিয়ে দিচ্ছি না। করোনা টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে আমরা রোগীদের ভর্তি ও চিকিৎসা দিচ্ছি। কারো করোনা শনাক্ত হলে তাকে সরকারি হাসপাতালে রেফার করছি।

জেলা বিএমএ’র সাবেক এই সভাপতি বলেন, করোনায় আক্রান্ত রোগীদের আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে টেলি মেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া আমাদের হাসপাতালের আরো কয়েকজন ডাক্তার করোনা রোগীদের টেলি মেডিসিন সেবা দিচ্ছেন। আমাদের হাসপাতালে চেম্বার করা অনেক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিয়মিত করোনা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। তবে স্থানীয় আরেকটি প্রাইভেট হাসপাতালের সাথে যৌথভাবে পৃথক একটি ভবনে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল চালুর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

চাঁদপুর সেন্ট্রাল (প্রা.) হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রাইভেট হাসপাতাল ওনার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. এস এম শহিদ উল্লাহ বলেন, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা ২টি বেড করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য বরাদ্দ রেখেছি। তবে করোনার চিকিৎসা এখনো শুরু করিনি আমরা। আপাতত কোনো পরিকল্পনাও নেই। কারণ, করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় আইসিইউ, হাইফ্লো অক্সিজেন, করোনার জন্য প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্স নেই আমাদের। তবে আমরা আমাদের হাসপাতাল থেকে এ পর্যন্ত সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে বিভিন্ন সময়ে অনেক অক্সিজেন সিলিন্ডার ও মিটার দিয়ে সহেযোগিতা করেছি।

চাঁদপুর বিএমএ’র সাবেক এই সভাপতি বলেন, চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করা জরুরী। চাঁদপুরের সরকারি-বেসরকারি সকল ডাক্তার, হাসপাতাল মালিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং বিত্তশালীদের নিয়ে যৌথ সভা আহ্বান করতে পারেন জেলা প্রশাসক। এ ধরণের উদ্যোগ নিলে ও সবাই মিলে কাজ করলে করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো সহজ করা সম্ভব।

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, চাঁদপুর জেলায় ২৯টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে জেলা শহরে ১৫টি। এখন পর্যন্ত কোনো হাসপাতাল করোনার চিকিৎসা করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেনি বা আবেদন করেনি। এখানকার হাসপাতালগুলোর একটিতেও হাইফ্লো অক্সিজেন সেবা নেই। তবে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও অক্সিজেন দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে তাদের। তারা কেউ আবেদন করলে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আমরা চিকিৎসার অনুমতি দেব। তখন সরকারি হাসপাতালে রোগীর চাপ কমবে।

এদিকে কুমিল্লার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসেন শনিবার চাঁদপুর প্রবাহকে জানান, সেখানকার মেডিক্যাল কলেজ ও সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি ৮টি বেসরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা চলছে। ওইসব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাই করে তাদের অনুমিত দেওয়া হয়। এর মধ্যে কয়েকটি হাসপাতালে আইসিইউ ও হাইফ্লো অক্সিজেন সেবাও রয়েছে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)