চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি : রাতে নীরব, দিনে সরব

কবির হোসেন মিজি :
মহামারী করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে চাঁদপুরে সন্ধ্যার সাথে সাথে পুরো শহর শুনশান নীরবতা নেমে এলেও ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে চিত্র পাল্টে যায়। প্রতিদিন দিনের বেলায় মিলছে বিভিন্ন যানবাহন ও মানুষের আনাগোনা। গত কয়েক দিন ধরে দেখা গেছে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতে প্রতিদিন সন্ধ্যার সাথে, সাথে পুরো শহর যানবাহন এবং মানুষ শূন্য থাকলেও দিনের বেলায় শহরের চিত্র অনেকটাই বদলে যায়। সকাল হওয়ার সাথে শহরের বিভিন্ন স্থানের হাট, বাজার, রাস্তাঘাট ও বিভিন্ন সড়কে ছোট-বড় যানবাহন এবং মানুষের উপস্থিতি বেড়ে যায়। তাই এসব মানুষের উপস্থিতিতে করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে জেলাবাসী।

মহামারী করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে সচেতনতার জন্য সকলকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য বার সর্তকতা ঘোষণা দিলেও প্রশাসনের সেই নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে এবং তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন ঘরের বাইরে বের হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এ কারণে চাঁদপুরে ঢিলেঢালাভাবেই হোম কোয়ারেন্টাইন পালিত হচ্ছে। করোনা ভাইরাস সচেতনতায় হোম কোয়ারেন্টাইন মানছেন না অনেকেই। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য রাস্তাঘাটে কাউকে অতি প্রয়োজন ছাড়া েেবর না হবার কথা ঘোষণা দেয়া হলেও হাট, বাজার, দোকানপাটে মিলছে মানুষের কম-বেশি উপস্থিতি। সড়কে চলছে ছোট-বড় বিভিন্ন যানবাহন।

বাংলাদেশে মরণঘাতী করোনা ভাইরাস যাতে ছড়াতে না পারে সেজন্য সরকার গত ২৬ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। একই সাথে জেলা প্রশসনের পক্ষ থেকে চাঁদপুরের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন এবং শহর কিংবা গ্রামে প্রত্যেক স্থানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গণজমায়েত এড়াতে বিভিন্ন দোকানপাট ও যানবাহন চলাচল না করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। তারই প্রেক্ষিতে ২৬ মার্চ থেকে চাঁদপুর শহরের বিভিন্নস্থানে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সদস্যরা কঠোর নজরদারি জোরদার করেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনী সদস্যদেরও টহল লক্ষ্য করা গেছে। যাতে করে শহরে কোন প্রকার যানবাহন এবং মানুষজন বাইরে বের হতে না পারেন।

প্রথম দু’তিন দিন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে রাস্তাঘাটে তেমন কোন যানবাহন কিংবা মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। এমন কি শহরের কোন স্থানেই চায়ের দোকানসহ তেমন কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে দেখা যায়নি।

প্রশাসনের এমন ঘোষণার কয়েক দিন পর থেকেই ধীরে ধীরে চাঁদপুর শহরের বিভিন্নস্থানে যানবাহন ও মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। গত কয়েক দিন ধরে দেখা যায়, চাঁদপুর শহরের শপথ চত্বর কালীবাড়ি, বাসস্ট্যান্ট, ছায়াবানী মোড়, নতুন বাজার, পুরানবাজার, মিশন রোড, চিত্রলেখা মোড়, চেয়ারম্যান ঘাটা, ওয়্যারলেসসহ শহরের বিভিন্ন সড়কে ট্রাক পিকআপ ভ্যান, রিক্সা অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহন সড়কে চলতে দেখা গেছে। এসব যানবাহনের সাথে সাথে বাড়ছে মানুষের উপস্থিতিও। মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে সচেতনতার লক্ষে এসব জনসাধারনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার জন্য বার বার সতর্কতা ও ঘোষনা দিলেও অনেকেই তা না মেনে অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতোই প্রতিনিয়ত বাইরে বের হচ্ছেন। তাই ঢিলে ঢালাভাবেই চাঁদপুরে পালিত হচ্ছে হোম কোয়ারেন্টাইন। জন সাধারনের বাইরে ঘোরাফেরার এমন উপস্থিতিতে মহামারী করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ঝুঁকি থাকতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

এদিকে গত কয়েকদিন পূর্বে বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন আরো কঠিন নজরদারি জোরদার করেন। বিভিন্ন স্থানে মোবাইলকোটের মাধ্যমে অনেক অর্থদন্ডও প্রদান করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগন। কিন্তু তবুও যেনো সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ব্যর্থ হচ্ছেন প্রশাসন। তাই সন্ধ্যা এবং রাতের মতো যেনো দিনের বেলায়ও প্রশাসন এমন কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এমনটাই দাবি সচেতন মহলের। তবেই চাঁদপুরে করোনা ঝুঁকিমুক্ত থাকতে এবং হোম কোয়ারেন্টাইন সঠিকভাবে পালিত হবে বলে মনে করছেন জেলাবাসী।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর সার্কেল জাহেদ পারভেজ চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, হোম কোয়ারেন্টাইন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই আমরা কঠোর নজরদারিতে রয়েছি। আমাদের আগে যতজন পুলিশ ফোর্স ছিলো বর্তমানে তার চেয়ে অনেক ফোর্স বাড়িয়ে পুলিশ সদস্যরা প্রতিনিয়ত দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। তিনি বলেন, আইনীসেবার ক্ষেত্রে মামলার তদন্তসহ অন্যান্য কাজ কমিয়ে দিয়ে প্রতিদিনই জনসাধারণকে সচেতন করতে কাজ করে চলেছি। এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে আমাদের পুলিশ সদস্যরা। কারণ, আমরা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের কাছে গিয়ে কথা বলতে হয়। তাদেরকে সতর্ক এবং সচেতন করতে হয়। আমরা যদি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগনের নিরাপত্তার জন্য কাজ করে থাকি। এতে যদি জনগণ নিজেরাই সচেতন না হয়ে বাইরে বের হন তাহলে পুলিশ যত কঠোরই হোকনা কেনো কারোই সাধ্য নেই জনগণকে প্রতিরোধ করার। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং সেনা সদস্যদের পাশাপাশি জনগণকেও সচেতন হতে হবে এবং সচেতনতার জন্য কাজ করতে হবে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন