চাঁদপুরে করোনা : রিপোর্ট আসার পূর্বেই রোগীকে সুস্থ ঘোষণা!

ফয়েজ আহমেদ :
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলায় করোনা টেস্টের জন্য সংগৃহীত নমুনার রিপোর্ট আসতে দেরী হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে।

বিশেষ করে উপসর্গ থাকা ব্যক্তি এবং পূর্বে আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এমন পরিস্থিতিতে চরম বিব্রতকর অবস্থায় আছেন।

এমন পরিস্থিতিতে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে পূর্বে শনাক্তকৃত অনেকের দ্বিতীয় রিপোর্ট আসতে দেরী হওয়ায় নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়াই তাদের সুস্থ ঘোষণা করা হচ্ছে।

শাহরাস্তি উপজেলায় এমন ৮জনকে দ্বিতীয় রিপোর্ট আসার আগেই সুস্থ তথা করোনামুক্ত ঘোষণা করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। তুলে নেওয়া হয়েছে তাদের বাড়ির লকডাউন।

মঙ্গলবার চাঁদপুর প্রবাহকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রতীক সেন।

এছাড়া যথাসময়ে রিপোর্ট না আসায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজনকে কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনে সমস্যা হচ্ছে। আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের।

অন্যদিকে করোনা নেগেটিভ সনদ না থাকায় অন্যান্য রোগে আক্রান্তরা প্রয়োজনীয় উন্নত চিকিৎসা নিতে পারছেন না। এতে তাদের অন্য রোগ জটিল রূপ ধারণ করছে।

জানা যায়, করোনা উপসর্গে শাহরাস্তি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৪২৪জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ২৭৭টি নমুনার ফলাফলে ৬৭জনের করোনা পজেটিভ ও ২০৮জনের নেগেটিভ এসেছে। বাকী ১৪৭টি নমুনা অপেক্ষমান রয়েছে।

গত ১০ জুন হতে উপজেলায় হটাৎ করে করে করোনা আক্রান্ত রোগী বেড়ে যায়। ১০ থেকে ১৫ জুনের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা ৯২টি রিপোর্টে ৪৪জন আক্রান্ত হয়েছে।

এরপরই নমুনার ফলাফলে ধীরগতি শুরু হয়। মাঝপথে মিডিয়া সংকটে নমুনা দিতে না পেরে ফিরে যায় অনেকেই। ১৬ জুন হতে ২৩ জুন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মাত্র ১১জনের ফলাফল আসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন চিকিৎসা সহায়ক জানান, সকল প্রকার শারীরিক উপসর্গ থাকার পরও তিনি নমুনার ফলাফল না পাওয়ায় নিজের চিকিৎসা নিয়ে বিড়ম্বনায় আছেন।তদুপরি একজন চিকিৎসা সহায়ক হওয়ায় নিজেকে কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করে যেতে হচ্ছে।

একই হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক জানান, নিজে নমুনা দেয়ার ১ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও ফলাফল হাতে না আসায় এক অনিশ্চয়তাকে সামনে রেখে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হচ্ছে।

শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ আলম জানান, থানা পুলিশের ৩জন আক্রান্তের দ্বিতীয় নমুনার ফলাফল অপেক্ষমান থাকায় তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না।

তিনি আরো জানান, নতুন করে নমুনা দেয়া ৪ সদস্যের নমুনাসহ ৭জনের ফলাফলের জন্য তিনি অপেক্ষায় আছেন।

এদিকে গত ২১ জুন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রতীক সেন নমুনার ফলাফল ছাড়াই দিন হিসেব করে মুঠোফোনে সুস্থতার খোঁজ নিয়ে আক্রান্ত ৮জনকে সুস্থ ঘোষণা করেছেন। ইতোমধ্যে তাদের বাড়ির লকডাউন প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রতীক সেন চাঁদপুর প্রবাহকে জানান, কিছু নমুনার ফলাফল আটকে থাকায় প্রথম নমুনা দেওয়ার ২১ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর দ্বিতীয় নমুনার ফলাফল না পাওয়ায় তাদের সুস্থ ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এসব আক্রান্ত ব্যক্তি বর্তমানে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকায় সিভিল সার্জনের সাথে পরামর্শ করে তাদের করোনামুক্ত তথা সুস্থ ঘোষণা করা হয়েছে।

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ মঙ্গলবার চাঁদপুর প্রবাহকে জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির ২১ দিন পূর্ণ হলে এবং তার মধ্যে তেমন উপসর্গ না থাকলে তাকে সুস্থ ঘোষণা করা যায়। পরবর্তীতে ওই লোকের রিপোর্ট পজেটিভ আসলেও তার মাধ্যমে আর করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা নেই।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন