চাঁদপুরে যত্রতত্র সড়কে মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস ফেলায় ঝুঁকি

শরীফুল ইসলাম :
চাঁদপুরে বৈশ্বিক করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ মহামারি থেকে রক্ষা ও প্রতিকারের জন্য নিত্যদিন এখন বলা চলে সকলেই হাট-বাজার, যানবাহন, মেডিসিনের দোকান, চিকিৎসা কেন্দ্র, হাসপাতালসহ সকল স্থানে এখন মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার করে চলাচল করছে। সকলের উদ্দেশ্য এবং ব্যবহার নিশ্চিত হলেও নিশ্চিত হচ্ছে না ব্যবহারের পর এসব সামগ্রীর নিরাপদে সঠিকভাবে নিষ্পত্তি করার কলাকৌশল।

এখন সাধারণ মানুষ নিজের জীবন ও পরিবারে সকলের জীবন রক্ষায় সচেতন হয়ে পড়েছেন। তারা খাদ্য সামগ্রী কম কিনলেও মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস, হাতধোয়ার হ্যান্ডসেনিটাইজার ও অনেকে চিকিৎসকদের জন্য তৈরী করা পিপিই পর্যন্ত ক্রয় করে পরিধার করতে ভুল করেন না। এত সচেতন হওয়ার পরও ওইসব মানুষেরা আবার কিছু সময়ের জন্য উদাসীন হয়ে পড়ায় তারা তাদের নিত্যদিন ব্যবহৃত মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহার করার পর সুনির্দিষ্ট স্থানে বা নিজেদের বাসা-বাড়িতে রাখা ময়লার ঝুড়িতে না ফেলে ঘরের বাহির হতেই দেখা যায় নিজেদের অজান্তে যেখানে-সেখানে রাস্তায় বা শিশুদের নাগালের মধ্যে মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস ফেলে সকলের তথা শত শত মানুষের জীবনের ঝুঁকির মাত্রা মারাত্মকভাবে বাড়াচ্ছে।

এতে গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনে চলাচলের মধ্যে এসব ব্যবহৃত রোগী কিংবা যে কারো ব্যবহার করা মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস রাস্তা বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পড়ে থাকতে দেখে মানুষজন আতকে উঠে আতংকিত হচ্ছেন। ফলে রাস্তায় পড়ে থাকা ব্যবহৃত মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভসের কারণে সাধারণ মানুষ প্রতিদিন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে।

বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) থেকে সুরক্ষায় মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস ব্যবহারের পর তা সড়ক, ফুটপাত, হাসপাতাল, হাট-বাজার, স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে ফেলে যাচ্ছেন শহর ও গ্রাম থেকে শত শত এলাকাবাসী। এই শত শত ব্যবহৃত মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস রাস্তা, সড়কে ও ফুটপাতে পড়ে থাকার দৃশ্য সকলের নজরে পড়তে দেখা গেছে। তবুও এ মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস রাস্তা বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ফেলা বন্ধ হচ্ছে না। এসব করোনা আক্রান্ত মানুষের প্রতিদিন ব্যবহৃত এসব বিষাক্ত জিনিস থেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

কয়েক দিন ধরে চাঁদপুর শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায়, শহরের মেডিসিনের দোকানের সামনে, কালীবাড়ি মন্দিরের সামনে, রেলওয়ে স্টেশন এলাকায়, রেলস্টেশন ফ্লাটফর্মের ভিতরে, বিভিন্ন হোটেলের সামনে, ব্যাংকের সামনে, বিভিন্ন হাট-বাজারে, সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল, প্যাথলজি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সামনে, শহরের পালবাজারের প্রধান ফটকে, থানা সড়কে, শহরে যানবাহন চলাচলের প্রধান সড়কে, জনবহুল স্থানে, পৌরসভা কর্তৃক নতুন করে নির্মাণ করা ফুটপাতে, পয়ঃনিষ্কাশনের খালে, বিলে, ক্ষেতে, চাষাবাদের জমিতে, বাসা-বাড়ির ছাদে, টিনসেড ঘরের চালায়, দুই বিল্ডিংয়ের মাঝখানে থাকা খালি জায়গায়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বাইরে ও ভিতরে টয়লেটের সামনে এসব ব্যবহার করা মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস ফেলে রাখার চিত্র দেখা যাচ্ছে।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শহরবাসীকে নিজ নিজ বাসস্থানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। কোনো জরুরী প্রয়োজন থাকলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস ও পিপিই ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম দিকে মাস্কের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি করে বিক্রি করেছে, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারে নির্দেশে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন কঠোর হাতে তা জরিমানার মাধ্যমে তাৎক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ করায় এখন তা মানুষের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রয়েছে। পলিথিনের পঞ্চাশ জোড়া হ্যান্ডগ্লাভস পাওয়া যাচ্ছে দুইশ’ টাকায়। রাবারের তৈরি সাধারণ হ্যান্ডগ্লাভস মিলছে প্রতি জোড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। মাস্ক পূর্বের চাইতে অনেক দাম কমেছে, সাধারণ মাস্ক ২০ টাকা, সার্জিক্যাল মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায় ও এন-৯৫ মাস্ক ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় পাওয়া গেলেও চাঁদপুরে সে মাস্ক-৩২০ টাকায় বিক্রি হচেছ।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, এভাবে রাস্তায় ফেলে যাওয়ার কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত যে কোন জিনিসপত্র থেকে ভাইরাসটি অন্যদের মধ্যে ব্যাপক সংক্রমিত হতে পারে। চাঁদপুর শহরবাসীর মতে, অসচেতনভাবে মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস রাস্তায় ফেলে রাখার প্রবণতায় ভাইরাসটির সংক্রমণের বৃদ্বিতে( বিস্তারকরতে) সহযোগী হতে পারে।
আইয়ুব আলী নামের একজন পথচারী বলেন, মানুষ যে এভাবে যেখানে সেখানে মাস্ক, হ্যান্ডগ্লাভস ফেলে যাচ্ছে, এটা তো অন্যদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ চলার পথে এসব জিনিস অন্যদের হাতে-পায়ে লাগতে পারে, বাতাসে ছড়াতে পারে।

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন মোঃ সাখায়াত উল্লাহ বলেন, ব্যবহার করা মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস মারাত্ম ঝুঁকিপূর্ণ। এগুলো সুনির্দিষ্ট বক্সে ফেলা উচিত। পড়ে থাকা মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস থেকে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে এতে কোন সন্দেহ নেই। পড়ে থাকা মাস্ক স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। চাঁদপুর পৌর কর্তৃপক্ষ এগুলো অপসারণ করা অতি জরুরী প্রয়োজন। পড়ে থাকা ব্যবহৃত মাস্ক থেকে বাতাসেও ভাইরাস ছড়াতে পারে।

বাংলাদেশ কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি মোস্তফা রুহুল আনোয়ার বলেন, দেশের এ ভয়াবহ অবস্থায় চাঁদপুরে ওষধ ব্যবসায়ীরা তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রকাশ্যে ঔষধ বিনিময়ের মধ্য দিয়ে করোনা আক্রান্তসহ সকল প্রকার রোগীর জন্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে। চাঁদপুর শহরের রাস্তাঘাট, ফুটপাত যেখানে সেখানে পড়ে থাকা মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস থেকে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে শতভাগ। ব্যবহৃত মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস পড়ে থাকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। আসলে এ মাস্ক এখন সবাই ব্যবহার করছে। এগুলো যেখানে সেখানে না ফেলার জন্য পৌরসভা ও প্রশাসন থেকে শহরের প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে নির্দিষ্ট স্থানে ঢাকনা যুক্ত বক্স দেয়া একান্ত প্রয়োজন। এ ছাড়া চাঁদপুর তথা সারা দেশের মানুষকে সচেতনতা জন্য যেখানে সেখানে ব্যবহৃত এ মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস না ফেলার জন্য ব্যাপক প্রচার করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন