চাঁদপুরে সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে মাঠে সাংবাদিকরা

ফয়েজ আহমেদ :
‘আপনারা ঘরে থাকুন, আমরা সংবাদ পৌঁছাবো ঘরে’- ফেসবুকের নিউজ ফিডে একজন গণমাধ্যমকর্মীর দায়িত্ববোধ সংক্রান্ত স্ট্যাটাস। নিরাপত্তার কারণে সবাইকে ঘরে থাকার আহবান জানিয়ে পাঠকের সংবাদ তৃষ্ণা মেটাতে অহর্নিশ ছুটে চলা একজন খবরের ফেরিওয়ালা নিজে কতটুক নিরাপদ? কোন প্রকার প্রণোদনা বা সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া রাত-দিন ছুটে চলা এসব গণমাধ্যমকর্মীর পরিবারের সদস্যরা কি ঝুঁকিতে নেই?

চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলায় করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন ৩ শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী। বিভিন্ন উপজেলায় কোন প্রকার সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক হয়ে দুঃস্থ-অসহায়দের খবর সংগ্রহ, গ্রামেগঞ্জে সচেতনতামূলক মাইকিং, ঝুঁকিপূর্ণ লকডাউন এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ পৌঁছানো, ঘরে থাকা লোকজনদের বাজার ও ঔষধ পৌঁছে দেয়া এমনকি কারোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির জানাজায় পর্যন্ত উপস্থিত হচ্ছেন।

জানা যায়, মরণঘাতি কোভিড-১৯ সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ঘোষিত লকডাউনে চাঁদপুরের জেলা সদরের প্রায় ১০০জন, হাইমচরে ২০জন, মতলব উত্তর ও দক্ষিণে ৫০জন, ফরিদগঞ্জে ২৫জন, হাজীগঞ্জে ৩০জন, শাহরাস্তিতে ২০জন ও কচুয়ায় ২০জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করে আসছে। (প্রকৃতপক্ষে জেলায় সংবাদকর্মীর সংখ্যা আরও বেশি থাকলেও বিভিন্ন উপজেলার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে এই সংখ্যা ধরা হয়েছে।)

পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে প্রশাসনের পক্ষ হতে ত্রাণ পৌঁছানো, নিজেদের অর্থায়নে ত্রাণ বিতরণ, করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ্য রোগীদের খবর প্রশাসন ও হাসপাতালে দেয়ার কাজ করে আসছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। কোন প্রকার সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়া এসব কাজের কারণে সাংবাদিকদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যরাও করোনা আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছেন। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৬জন সাংবাদিক আক্রান্ত ও তিন শতাধিক সাংবাদিক হোম কোয়ারেন্টেনে থাকার সংবাদে স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।

মতলব উত্তর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহবুব আলম লাবলু জানান, জেলায় মতলব উত্তরে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিন গণমাধ্যমকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করছে। কোন সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) ছাড়াই ছুটতে হয় এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্তে। নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রচুর লোক মতলবে আসায় প্রতিদিন লকডাউনকৃত বাড়িগুলোর খোঁজখবর নিতে হয়। ফলে নিজেদের পাশাপাশি পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ছে।

হাইমচর প্রেসক্লাব সভাপতি খুরশিদ আলম জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতে গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি ত্রাণ সমন্বয়ে ভূমিকা রাখছে। আমরা ব্যক্তিগত অর্থায়নে হাইমচর প্রেসক্লাবের পক্ষে ত্রাণ বিতরণ করেছি। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের ত্রাণ বিতরণে কল সেন্টারে সাংবাদিকরা কাজ করছে। ফোনকল পেয়েই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাংবাদিকরা ত্রাণ পৌঁছিয়ে দিচ্ছে।

হাজীগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিক ও সাপ্তাহিক সকলের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সিফাত জানান, সরকারি ত্রাণ ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ন্যায্যমূল্যে বিনা পারিশ্রমিকে উপজেলার যে কোন প্রান্তে পৌঁছে দেয়া, ২৪ ঘন্টা ঔষধ পৌঁছে দেয়া, মানুষকে ঘরমুখো করতে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ভলান্টিয়ারের দায়িত্বপালন, করোনায় বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আসা লোকদের নিরাপদে রাখতে হোমকোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে সাংবাদিকরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া প্রতিরাতে হাজীগঞ্জ উপজেলার ছিন্নমূল ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।

চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্যাহ জানান, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যেহেতু মফস্বল সাংবাদিকদের কোন বেতন-ভাতা নেই, অনির্দিষ্টকালের এই অচলাবস্থার সময়ে সাংবাদিকদের বিজ্ঞাপনসহ সব ধরনের রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। তাছাড়া এ দুর্যোগ মুহূর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া সংবাদ দেশের সর্বত্র পৌঁছে দিচ্ছে সংবাদকর্মীরা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের সকল স্তরের সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রেও সংবাদকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনের বিষয় ও দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে চাঁদপুরসহ সারাদেশের মফস্বল সাংবাদকিদের কথা বিবেচনা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)