নারায়ণগঞ্জ ফেরত মানুষের কারণে চাঁদপুরে করোনার ঝুঁকি চরমে

ভিন জেলা থেকে আসা লোকের তালিকা হাজার ছাড়িয়েছে : নদীতে টহল দিবে নৌ-বাহিনীর ২টি জাহাজ

বিশেষ প্রতিবেদক :
করোনার জন্য দেশের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহর নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বেশুমার মানুষের কারণে চাঁদপুর জেলায় করোনা ঝুঁকি চরমে পৌঁছেছে। নারায়ণগঞ্জ ফেরত লোকের মধ্যে একের পর এক করোনা আক্রান্ত হিসেবে সনাক্ত হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ ফেরত দু’জন মারাও গেছে। শুধু তাই নয়, আক্রান্ত এসব লোকের সংস্পর্শে আসা লোকজন করোনায় সংক্রমিত হচ্ছেন। এসব লোকের মধ্যে মাত্র কিছু লোকের নমুনা পরীক্ষা করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। সবাইকে পরীক্ষা করা গেলে জানা যেত প্রকৃত অবস্থা। এদের পরীক্ষা করে আইসোলেশনে রাখা না গেলে ক্ষণে ক্ষণে নতুন নতুন লোক করোনায় সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এদিকে ভিন জেলা থেকে আগত মানুষের তালিকা করার যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ রোববার তা হাজার ছাড়িয়েছে। রোববার পর্যন্ত এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৭৯জন। এই তালিকা প্রণয়নের কাজ এখনো চলমান। সিভিল সার্জন ডা. মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ রোববার রাতে এই তথ্য জানান।

তালিকা প্রণয়নের কাজ এখনো চলমান থাকায় এই সংখ্যা আরো অনেক বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শুধুমাত্র নারায়ণগঞ্জ থেকে আগতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৩জন করোনায় আক্রান্ত হিসেবে পরীক্ষায় সনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ১জনের সংস্পর্শে আক্রান্ত হয়েছেন ১জন ডাক্তারও। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত চাঁদপুরে করোনা রোগীে হিসেবে সনাক্তকৃত সবাই নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রিক। সেখান থেকে আসা ২জন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন। এর মধ্যে মতলব উত্তরে মারা যাওয়া বৃদ্ধার রিপোর্ট করোনা নেগেটিভ এসেছে। অন্যজনের রিপোর্ট অপেক্ষমান।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আর কতজন স্বাস্থ্য বিভাগের তালিকার বাইরে রয়ে গেছেন তাও বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। আর কতজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে চাঁদপুর এসেছেন সবার টেস্ট করা ছাড়া তা বলাও মুশকিল। এসব লোকের কারণে চাঁদপুর জেলা এখন করোনার চরম ঝুঁকিতে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

অথচ নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য জেলা থেকে চাঁদপুরে লোক আসার শুরুর দিকে তাদের প্রতিহত করতে সাংবাদিক সমাজসহ বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠেছিল- নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ অন্য জেলার লোকজনকে চাঁদপুরে প্রবেশ প্রতিহত করতে নদী ও সড়কে চেক পোস্ট বসাতে। কিন্তু নৌ-পুলিশসহ আইনশৃৃঙ্খলা বাহিনীর শিথিলতায় হাজার হাজার মানুষ চাঁদপুরে প্রবেশ করে। তারা এখন চাঁদপুরের মানুষের জন্য চরম ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে দেরীতে হলেও চাঁদপুরের নদীপথকে সুরক্ষিত করতে রোববার রাতে নৌ-বাহিনীর দু’টি টহল জাহাজ চাঁদপুর পৌঁছার কথা। সোমবার থেকে এসব জাহাজ নদীতে টহল দিবে। গতকাল থেকে নৌ-পুলিশ ৩টি লঞ্চে করে নদীতে টহল দেওয়া শুরু করেছে।

ভিন জেলা থেকে আসা এসব মানুষের মাধ্যমে করোনা সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকায় এদের সবাইকে টানা ১৪ দিন বাধ্যতামূলকভাবে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। আগত লোকজন যেসব বাড়ি-ঘরে উঠেছেন তার মধ্যে অনেক বাড়ি-ঘর লকডাউন করা হয়েছে গত কয়েক দিন ধরে। কিন্তু বাস্তবে খুব সংখ্যক মানুষ হোম কোয়ারেন্টাইন মানছে।

চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, অতি মাত্রায় আক্রান্ত ঢাকা-নারায়নগঞ্জসহ অন্য জেলা থেকে নতুন করে যাতে আর কেউ চাঁদপুরে প্রবেশ করতে না পারে সে বিষয়ে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চাঁদপুর জেলাকে লকডাউন করা হয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে চলে আসা লোকদের তালিকা করে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করছি।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন