করোনায় বদলেছে ইফতার সামগ্রীর বাজার

শরীফুল ইসলাম :
মহামারি করোনাভাইরােেসর কারণে বদলে গেছে ইফতার সামগ্রীর বাজার। অধিকাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ। ফুটপাতেও বিক্রি করতে দেওয়া হচ্ছে না ইফতার সামগ্রী। তবে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার ছোট ছোট রেস্তোরাঁয় অল্প পরিমাণে ইফতার সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।

যেখানে রমজান আসার আগেই টানানো হতো রং-বেরঙের সামিয়ানা। অভিজাত রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে ফুটপাথ। সর্বত্রই বসতো ইফতারের বাজার। বেলা ১২টার পর থেকেই জ্বলতো চুলা। নানা ধরনের মুখরোচক খাবারের সৌরভ বাতাসে মৌ মৌ করতো। দুপুর গড়াতেই বাহারি সব ইফতারের পসরায় সেজে বসত বাজার। বিকেল হলেই ঢল নামত মানুষের। মোটকথা দিনশেষে ধুম পড়ে যেত ইফতার সামগ্রী কেনাবেচার।

কিন্তু করোনাভাইরাসের ককারনে এখন ফুটপাত বা রাস্তার পাশে ইফতার সামগ্রীর দোকান নেই। তাই অন্যান্য বছরের মতো ইফতার সামগ্রীর ব্যবসায়ীদের হাকডাকও নেই। কিছু রেস্তোরাঁয় একটা ঝাঁপ বা সাটার খুলে অল্প পরিমাণ ইফতার সামগ্রী বিক্রি করা হচ্ছে। আবার সেসব দোকানেও মানুষের ভিড় দেখা যায়নি।

চাঁদপুর শহরের রমজানের হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো এখন যেন কেবলই ফেলে আসা স্মৃতি! কোথাও কেউ নেই। এক গভীর শূন্যতায় যেন চারিদিক খা খা করছে। ফাঁকা, সুনসান সড়কগুলো যেন নিষ্প্রাণ হয়ে আছে। খুব সম্ভবত এবারই প্রথম পবিত্র রমজান মাস শুরু হলো এমন এক সময়ে, যখন করোনায় সমগ্র বিশ্বের পাশাপাশি আক্রান্ত বাংলাদেশ।

বর্তমানে চাঁদপুর জেলা লকডাউন চলছে। তাই সব জায়গাতেই প্রায় অচলাবস্থা। করোনার প্রাণঘাতী ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার অন্যতম উপায় সঙ্গনিরোধসহ শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা। সে অবস্থায় দৈনন্দিন জীবনে ধর্মীয় আচার-আচরণসহ বিধিবদ্ধ নিয়মে পরিবর্তন এসে গেছে।

মসজিদে গিয়ে সংঘবদ্ধভাবে নামাজ না পড়ে ঘরে বসে পড়া; জানাজায় যথাসম্ভব কম যাওয়া ইত্যাদি। বিধি-নিষেধ এসেছে পবিত্র রমজানে তারাবিসহ ঈদের জামাতে নামাজ পড়া নিয়েও। তাই কালের পরম্পরায় চলে আসা ঐতিহ্যবাহী সব ইফতার আয়োজনেও করোনার আঁচ পড়েছে। গেলো বছরও যেসব স্থানে জমজমাট ইফতার বাজার ছিল; সেখানে এখন ভর করেছে পিন পতন নিরবতা। বাঙালির সেহরী, ইফতার ও তারাবিহ কেন্দ্রীক মাহে রমজানে এসেছে অচেনা এক ভিন্নতা।

এদিকে চাঁদপুর হোটেল মালিক সমিতির সাথে জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ক্রমে পবিত্র মাহে রমজানের ইফতার বিক্রির জন্য বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৫টি হোটেল খোলা রাখা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হোটেলগুলো হলো শহরের কালীবাড়ি প্ল্যাটফর্মে চাঁদপুর হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, আল আরাফাহ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট ও বাসস্ট্যান্ডে ও নতুনবাজার শাখার দি ক্যাফে ঝিল হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট এবং চেয়ারম্যান ঘাট ক্যাফে নূর হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট।

চাঁদপুর হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট মো. জাকির হোসেন বেপারী, আল আরাফাহ আনোয়ার হোসেন আনু ও বাসস্ট্যান্ডে ও নতুনবাজার শাখার দি ক্যাফে ঝিল হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট মো. মাসুদ আখন্দ ও ক্যাফে নূর হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টের মালিক নুরু গাজী বলেন, করোনার কারণে এবার হাকডাক দিয়ে ইফতার বিক্রি করতে পারছি না। একটি ঝাপ খুলে ইফতার বিক্রি করছি। ক্রেতাদের সবাইকে বলেছি, সবাই যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে।

ব্যবসায়ীরা আরো জানান, প্রতিবছর রমজান মাসে ইফতার সামগ্রীতে ১০ থেকে ১৫ আইটেম সাজিয়ে বিক্রি করা হতো কিন্তু এবারের মতো অবস্থা আগে কখনো হয়নি। বছরের এই সময়ে আমরা ভালো বিক্রি করে থাকি। কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে আজ তার চিত্র ভিন্ন।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন