চাঁদপুরে এক মাসে রেকর্ড ৪৩৭১জনের করোনা শনাক্ত : সর্বোচ্চ ৪২জনের মৃত্যু

“চাঁদপুর জেলায় এখন পর্যন্ত ২৪৬জন পুলিশ কর্মকর্তা-সদস্য করোনায় আক্রান্ত”

বিশেষ প্রতিবেদক :
চাঁদপুর জেলায় করোনা শনাক্তের পর প্রায় দেড় বছরের মধ্যে বিগত জুলাই মাসে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৭১জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৪২জনের মৃত্যু হয়েছে। চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ এসব তথ্য জানিয়েছেন।

চাঁদপুর জেলা করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কমিটির সভায় এসব তথ্য জানান সিভিল সার্জন। রোববার বিকেলে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোহসীন। জেলা প্রশাসক চাঁদপুর অঞ্জনা খান মজলিশ সভা সঞ্চালনা করেন।

চাঁদপুর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব মোহসীন বলেন, চাঁদপুর এমন একটি জেলা যার সাথে রাজধানী ঢাকাসহ অনেকগুলো জেলা সংযুক্ত এবং নানা বিষয়ে সহসা সম্পর্কিত। এখানে তাই লোক চলাচলও বেশি। এখানে বর্তমান সময়ে জেলা প্রশাসনের ত্রাণ বিতরণ প্রশংসিত। এখানে আপনারা রিক্সা আটকেছেন আবার ওই শ্রমিকদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর উপহার তুলে দিয়েছেন। এছাড়া আরো ভালো কাজ করছেন।

সচিব বলেন, চাঁদপুরের সংক্রমণটা কমছে না। সংক্রমণ কমিয়ে আনতে হবে। আগামী ১ সপ্তাহের মধ্যে করোনা সংক্রমনের হার আপনারা কমিয়ে আনতে পারবেন বলে আমি আশাবাদী। আর এটি একটি কঠিন কাজ হবে না যদি আপনারা রাজনীতিক, প্রশাসন, সামাজিক, সুশীল সমাজ সবাই সমন্বয় করে কাজ করেন।

তিনি রাজনীতিক সরকার হিসাবে রাজনীতিক নেতা-কর্মীরা এ দুর্যোগে এগিয়ে আসবেন এবং তাদের আরো বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন। উনাদের এগিয়ে আসতে হবে। করোনা প্রতিরোধ কমিটিগুলোতে দলের লোকদের আরো সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, কাজ করতে হবে! না হয় করোনা উত্তরণে বেগ পেতে হবে।

সভায় সিভিল সার্জন জানান, জুলাই মাসে চাঁদপুরে করোনায় ৪২জন মারা গেছেন। একই মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৩শ’ ৭১ জন। শনিবারের হিসেব দিয়ে তিনি বলেন, ওইদিন টেস্টের বিপরীতে আক্রান্তের শতকরা হার ৪৪ ভাগ। উপজেলায় বেড বাড়ানো হয়েছে। অক্সিজেন সংকটও কেটে যাবে বলে তিনি জানান। কারণ হাসপাতালের অক্সিজেন প্লান্টটি ২/১ দিনের মধ্যেই চালু হয়ে সেখান থেকে অক্সিজেন সাপ্লাই দিতে পারবে বলে কর্তৃপক্ষ তাদের জানিয়েছেন।

সিভিল সার্জন আরো বলেন, জেনারেল হাসপাতালে আমরা বেড বাড়িয়েছি। উপজেলায় ২০টা করে বাড়ানো হয়েছে। রোগী বাড়তে থাকলে আমরা এখানের ৫০টা সাধারণ রোগীর বেড পাশের নার্সিং ইনস্টিটিউটে নেয়ার পরিকল্পনা আছে।

পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, গতকাল পর্যন্ত জেলায় আমার ২৪৬জন পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিদিনই হচ্ছে। ডিসি মহোদয়ের অফিসাররা আক্রান্ত হচ্ছেন। মানুষকে সচেতন করতে ত্রান দিতে আমাদের এখানে সরকার দলের নেতা কর্মিরা বর্তমান সময়ে একটু সরব হয়ে উঠেছেন। আশা করি আমাদের পাশাপাশি উনারা এবং অন্যান্য সামাজিক মানুষগুলো এগিয়ে আসেন, তাহলে আমাদের কাজগুলো সহজ হয়ে যায়। তিনি বলেন, এখানের সাংবাদিক ভাইরা অনেক আন্তরিকভাবে কাজ করেন। করোনার এই সময়ে আমরা প্রশাসন তাদের যথেষ্ট সাপোর্ট পাচ্ছি কাজ করতে গিয়ে।

জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নঈম দুলাল পাটওয়ারী বলেন, মসজিদের ইমাম সাহেবরা মাস্ক পরেন না, মুসল্লীদেরও উৎসাহ দেন না। এতো বলা সত্ত্বেও তারা ঠিক কাজটি করছেন না। তিনি বলেন, আমরা এই যুদ্ধ মোকাবিলায় আছি, থাকবো।

পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান বলেন, প্রশাসনের অনেক লোকজন আক্রান্ত হচ্ছেন। এটি অনেক কষ্টের। তিনি বলেন, করোনা মোকাবেলায় আমরা পৌরসভা থেকে কাজ করছি, দল থেকেও করছি, করবো। তিনি ত্রাণ সচিবকে বরাদ্দ আরো বাড়িয়ে দেয়ার আহবান জানান।

চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, জেলা প্রশাসনের এবং তাদের পরিবার সদস্য আক্রান্ত হচ্ছে। এভাবে আক্রান্ত হতে থাকলে কাজের ব্যঘাত ঘটতে পারে। এই অবস্থায় লোকবল সংকট কাটানোর ক্ষেত্রে সচিবকে তিনি অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, এখানে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়হীনতা রয়েছে। বিশেষ করে জেনারেল হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের।

সবশেষ জেলা প্রশাসক সচিবকে জানান, ৩৩৩ নাম্বারটি অনেকেই ব্যবহার করতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন। ফলে অনেকের কাছেই সাহায্য পৌঁছানো যাচ্ছে না। ডিসির এই কথা শুনার পর nত্রাণ সচিব বলেন, তাহলে ভিন্নভাবেও আমি এখানে বরাদ্দ রাখবো।চাহিদা দিলে সেটা পেয়ে যাবে।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, আমরা কাজ করতে এসেছি মানুষের জন্য। আর কাজ করতে এসে আমরাও এখন এই মহামারির শিকার হচ্ছি। আমাদের পরিবার পরিজন হচ্ছে। তবুও আমরা পিছাতে চাই না। মনোবল আছে, থাকবে। তিনিও তার প্রশাসনের অফিসার শূন্যতা তুলে ধরেন।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)