চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি বন্ধ রাখা ও পাশের জেলা থেকে লোক আসা ঠেকানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

করোনা মোকাবেলায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যক্রম ও জেলা আওয়ামী লীগ
সভাপতির বক্তৃতার প্রশংসা : চাঁদপুরের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী

শাওন পাটওয়ারী/শরীফুল ইসলাম :
করোনার সংক্রমণ রোধে চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরি বন্ধ রাখা ও পাশের জেলা থেকে নৌযান কিংবা অন্য উপায়ে লোক আসা ঠেকানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা মোকাবেলায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে এসবের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মনে হয় আপনি যেভাবে কাজ করছেন অন্যরা উৎসাহিত হবেন’। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদের বক্তব্যের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক ধন্যবাদ। খুব খুশি হলাম।’


করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যেসব ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্য খাতে যারা দায়িত্ব পালন অব্যাহত রেখেছেন তাদের তালিকা করে বিশেষ প্রণোদনা (পুরস্কার) দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা পালিয়ে আছেন, তারা এই প্রণোদনা পাবেন না।

তিনি মঙ্গলবার গণভবন থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এসব কথা বলেন। এছাড়া ভিডিও কনফারেন্সে সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চাঁদপুর জেলার সাথেও সরাসরি কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ। সবশেষে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত এক নার্সের সাথে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথোপকথনে জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খান শুরুতেই চাঁদপুরবাসীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানান। এ সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার আজকের নির্দেশনা ও বিগত দিনের নির্দেশনা আমরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি। আপনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ কাজ করে যাচ্ছেন, আজকে যে প্রণোদনা ঘোষণা দিয়েছেন এটি আমাদদের জন্যে অত্যন্ত খুশি করেছে ও আমরা অনেক বেশি সাহসী হয়েছি।

তিনি আরো বলেন, চাঁদপুর জেলায় ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ২জন প্রবাসী আছেন। ২ হাজার ১শ’ ৭৫জনকে আমরা হোম কোয়ারান্টিনে রেখেছিলাম। আমরা প্রথম দিকেই তাদের শনাক্ত করতে সক্ষম হই। আজকে পর্যন্ত মাত্র একজন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে। বাকি সবাই ১৪ দিন অতিক্রান্ত করেছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, চাঁদপুর থেকে ১৭জনের নমুনা গিয়েছে। তার মধ্যে ১০জন নেগেটিভ হয়েছে। বলা যায় এই মুহূর্তে চাঁদপুর জেলায় কোন করোনা রোগী নেই। আমরা জেলায় ৬৪ হাজার লোকের কাছে ত্রান পৌঁছে দিয়েছি। ২ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকা মূল্যের পণ্য সততা স্টোরের মাধ্যমে হ্রাসকৃত মূল্যে দুই হাজার লোকের কাছে বিক্রয় করা হয়েছে। জেলা শহরে বিনামূল্যে চারটি হোটেলে হতদরিদ্রদের খাওয়াচ্ছি। এ পর্যন্ত ২ হাজার লোককে খাইয়েছি। এই জেলায় সকলের সহযোগিতায় একজন মানুষও না খেয়ে নেই। এই জেলায় শিক্ষকরা নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। এছাড়া সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা ফেসবুক লাইভে ও ইউটিউবে তাদের পরিবেশনা করে যাচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমরা ওয়ার্ডভিত্তিক অসহায় মানুষের তালিকা করে তাদের সহায়তা দিচ্ছি।


করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দুঃসময় আসছে। এপ্রিল মাসে করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে হানা দিতে পারে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যারা জীবন বাজি রেখে সেবা কাজে নিয়োজিত, তাদের জন্য বিশেষ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা করা হবে। দায়িত্ব পালনের সময় কেউ আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার সব ব্যবস্থা সরকার করবে। পদমর্যাদা অনুযায়ী ৫ থেকে ১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবীমা করা হবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এই বীমা পাঁচগুণ বাড়ানো হবে। যারা করোনার সময় কাজ করছেন, জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন, এই প্রণোদনা শুধু তাদের জন্য। তিনি আরো বলেন, যারা পালিয়ে আছেন, তারা ভবিষ্যতে ডাক্তারি করতে পারবেন কি না, সে চিন্তাও করতে হবে। কেউ যদি এখন কাজে আসতে চান, তবে তিন মাস তার কাজ দেখে চিন্তা-ভাবনা করা হবে। কাউকে শর্ত দিয়ে কাজে আনা হবে না।
দুর্ভোগের সময় কেউ অনিয়ম করলে কোনো ছাড় দেয়া হবে না হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, উপসর্গ দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগ লুকাবেন না। এটা লজ্জার বিষয় না। মাঠপর্যায়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় কাজ করা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

চাঁদপুর জেলা প্রশসকের কার্যালয়ে ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ ওচমান গনি পাটওয়ারী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, সিভিল সার্জন মো. শাখাওয়াত উল্লাহ, চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. এ এইচ এম সুজাউদৌলা রুবেল প্রমুখ।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)