নারায়নগঞ্জ থেকে চাঁদপুরে মানুষ আসার মিছিল : করোনা ঝুঁকি চরমে

নারায়নগঞ্জ থেকে আসা সবাইকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে : সিভিল সার্জন

রহিম বাদশা :
চাঁদপুর জেলায় এখনো করোনায় আক্রান্ত কোনো রোগী সনাক্ত না হলেও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর কারণে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে এই জেলার মানুষ। বিশেষ করে অদূরবর্তী নারায়নগঞ্জ জেলায় ব্যাপক সংখ্যক লোক করোনায় আক্রান্ত হওয়া এবং সেখান থেকে প্রচুর লোক চাঁদপুর আসায় এই ঝুঁকি এখন সবচেয়ে প্রকট হয়ে দেখে দিয়েছে। প্রতিদিন নারায়নগঞ্জ থেকে নৌপথ ও সড়কপথে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থিত তাদের গ্রামের বাড়িতে আসছেন। আবার কেউ কেউ চাঁদপুরস্থ আত্মীয়ের বাড়িতে আসার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।

নারায়নগঞ্জ থেকে আসা লোকজনকে ঘরে আটকাতে গত দুই দিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় অর্ধশত বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে এসব লোককে। সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, নারায়নগঞ্জ থেকে আসা লোকের তালিকা হচ্ছে। তাদের টানা ১৪ দিন প্রবাসীদের মতো হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ্য করা হবে। এ জন্য সর্বসাধারণের সহযোগিতা চাই।

চাঁদপুরের পাশ্ববর্তী জেলাগুলোকে এখন ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন খোদ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্র্তা, জনপ্রতিনিধি, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং সচেতন মহল। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান পাশের জেলাগুলোর কারণে চাঁদপুরকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত অবহিত করেছেন। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলার সময় জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে তার শঙ্কার কথা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। তার বক্তব্যের আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি প্রতিরোধে চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটের ফেরি চলাচল বন্ধ করা এবং পাশের জেলা থেকে চাঁদপুরে লোক আসা ঠেকানোর নির্দেশ দেন।

এদিকে চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, তাদের এখন সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা কবলিত নারায়গঞ্জ থেকে চাঁদপুরে ব্যাপক হারে আসা মানুষগুলো। তাদের তালিকা করে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা এখন স্বাস্থ্য বিভাগের ফার্স্ট প্রায়োরিটি। তিনি বলেন, এখন থেকে যারা নারায়নগঞ্জ থেকে চাঁদপুর আসছেন বা আসবেন তাদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এ বিষয়ে সারা জেলায় তালিকা তৈরীর কাজ চলছে। লোকজনের আসা ঠেকাতেও প্রশাসন কাজ করছে।

অন্যদিকে চাঁদপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ ওচমান গনি পাটওয়ারী বুধবার গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে চাঁদপুরের সকল (৫টি) প্রবেশপথ লকডাউন করার প্রস্তাব দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কাছে। চাঁদপুর জেলা থেকে লোকজনকে অন্যত্র যাওয়া এবং বিশেষভাবে অন্য জেলা থেকে চাঁদপুর আসা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। অতি জরুরী ক্ষেত্রে অত্যন্ত সীমিত পরিসরে কারো কারো আসা-যাওয়ার অনুমতি প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ করোনা সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে নারায়নগঞ্জসহ পাশ্ববর্তী জেলায় অবস্থান করা লোকদের চাঁদপুরে প্রবেশ করতে না দেওয়ার ব্যাপারে চাঁদপুরের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও সুধীজন সোচ্চার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেলাবাসী এ ব্যাপারে বিভিন্ন প্রস্তাব, দাবি ও সুপারিশ করে আসছেন।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনারা অন্তত চাঁদপুরকে করোনার হাত থেকে বাঁচান। নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রচুর লোক চাঁদপুর আসছে নৌপথ ও সড়কপথে। আর নারায়ণগঞ্জ হচ্ছে করোনায় আক্রান্তের দিক দিয়ে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জেলা। তাই চাঁদপুরকে করোনার হাত রক্ষা করতে যে কোনো মূল্যে চাঁদপুর জেলায় নারায়ণগঞ্জসহ অন্যান্য জেলার মানুষ ঢুকে পড়াকে ঠেকাতে হবে।

ঝুঁকি মোকাবেলায় ইতিমধ্যে চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটে ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এছাড়া মতলব উত্তরে নদীতে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জ থেকে নৌপথে আসা প্রায় ৩০০জন গত ৩ দিনে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন স্থান দিয়ে চাঁদপুরে প্রবেশ করেছেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশি হওয়ায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

মতলব উত্তরের ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শরীফ উল্যা সরকার বলেন, আমরা নৌপথ দিয়ে নারায়ণগঞ্জসহ অন্য এলাকার লোকজনের চাঁদপুরে প্রবেশ ঠেকানোর চেষ্টা চালাচ্ছি। নদী পাড়ে লাঠিসোঠা নিয়ে সার্বক্ষণিক পাহারা বসানো হয়েছে। অনেককে ফেরতও পাঠিয়েছি।
জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, আমরা বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। একই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও কেউ এসে পড়লে সংশ্লিষ্ট এলাকা বা বাড়ির লোকজনকে কোয়ারেন্টিন করা হচ্ছে। এ জন্য প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন লোকজনের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও পুুলিশ সুপার বুধবার ফেইসবুক পোস্টে পাশ্ববর্তী জেলা থেকে চাঁদপুর আসা লোকজনের তথ্য দিতে জেলাবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন