- মমিনুল ইসলাম
মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা নদীকেন্দ্রিক হাজারো জেলে পরিবার আজ চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিদিনের মতো নদীতে মাছ ধরতে গেলেই জাল জব্দ, মামলা, এমনকি কারাদণ্ডের ভয়। জাটকা সংরক্ষণের নামে প্রায় সারাবছরই চলে অভিযান। ফলে নদীই এখন জেলেদের কাছে আতঙ্কের নাম।
নদীপাড়ের মোহনপুর, ষাটনল, এখলাসপুর, বাবুবাজার, আমিরাবাদ বাজার, জহিরাবাদ, দশানীসহ বিভিন্ন জেলে পল্লীতে ঘুরে দেখা গেছে, জেলেদের চোখে-মুখে হতাশা আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা। সংসারে আয় নেই, অথচ স্থানীয় এনজিও ও মহাজনের ঋণের কিস্তির চাপ ক্রমেই বাড়ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে এ পেশা ছেড়ে অন্য কিছু করার চিন্তাও করছেন।
মেঘনাপাড়ের হাজারো জেলে পরিবার আজ টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমেছে। নদীই তাদের জীবিকার উৎস, অথচ সেই নদীতেই এখন প্রবেশ নিষেধ। আইন প্রয়োগের কড়াকড়িতে নদী বাঁচছে হয়তো, কিন্তু জেলেরা হারাচ্ছে তাদের বেঁচে থাকার অধিকার।
ষাটনল এলাকার জেলে রফিকুল ইসলাম বলেন, নদীতে নামলেই নৌ পুলিশ, মৎস্য অফিস, কোস্টগার্ড সবাই এসে ধরে নিয়ে যায়। জাল আগুনে পুড়ায়। আমাগো কি দোষ, মাছ ধরা ছাড়া তো আর কিছু পারি না। এখন সংসার চালামু কেমনে?
বৃদ্ধ জেলে সাহেব আলী বলেন, আগে নদীতে নামলে দিনে অনেক কেজি ইলিশ পাইতাম। এখন জাটকা ধরতে গেলেও ভয়। পুলিশ ধরলে মামলা দেয়। ঘরে চুলা জ্বলে না, বাচ্চারা না খাইয়া ঘুমায়।
বাবুবাজার জেলে পল্লীর টিটু বর্মন জানান, আমাগো জীবিকা নদী, কিন্তু এখন নদীতে নামা মানে বিপদ। জালও নাই, ঋণের কিস্তিও দিতে পারতেছি না। অনেক জেলে এখন শ্রমিক কামলা হইছে।
মোহনপুর গ্রামের জেলে আবুল হোসেন বলেন, একটা ছোট জাল কিনতে গেলে ১৫-২০ হাজার টাকা লাগে। জাল জব্দ হইলে সব শেষ। এনজিও কিস্তির টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাই।
একই গ্রামের কাইল্লা বেপারী বলেন, জেলে না হইলে খামু কি? নদী তো আমাগো মা। কিন্তু এখন নদীও নিষেধ, জালও নিষেধ, মাছও নিষেধ!
মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী জানান, জাটকা সংরক্ষণে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। জেলেরা যেন নিষিদ্ধ সময়ে মাছ না ধরে, সেজন্যই কঠোর নজরদারি চলছে। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী আইন প্রয়োগ করা হয়।
মতলব উত্তর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, ১ নভেম্বর ২০২৫ থেকে ৩০ জুন ২০২৬ পর্যন্ত জাটকা সংরক্ষণ অভিযান চলবে। এর আগে ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনব্যাপী অভিযান পরিচালিত হয়। জাটকা সংরক্ষণ অভিযানে এই সময়ে জাটকা ধরা, পরিবহন, মজুত ও বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এছাড়া সারা বছর নদীতে অবৈধ কারেন্ট জাল সহ অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, জেলেদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে সরকার প্রতি বছর ভিজিএফ চাল বিতরণসহ বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়। তবে কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
