চাঁদপুরে মানবিক কাজে স্পিডবোট ভাড়ার নামে নৈরাজ্য

শরীফুল ইসলাম :
টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা ঢলে দেশের ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লাসহ বেশ কিছু অঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের জীবন বিপর্যয়ের মুখে। বিশেষ করে ফেনীতে বন্যায় বিপদগ্রস্ত মানুষদের সহায়তায় চাঁদপুর থেকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা ৩০টি স্পিডবোট নিয়ে ফেনীতে বন্যায় বিপদগ্রস্ত মানুষকে রেসকিউ করতে গিয়েছে।

এদিকে স্পিডবোট ভাড়ার নামে একটি চক্র স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। প্রতিটি বোটের ভাড়া প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। চাঁদপুর থেকে ট্রাকে করে নেয়ার ভাড়াও ১০ হাজার টাকা। এছাড়া থাকা-খাওয়া সব খরচ বহন করতে হবে উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবকদের।

বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) চাঁদপুর বড়স্টেশন মোলহেড থেকে বিভিন্ন সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা একে একে ৩০টি স্পিডবোট ট্রাকে করে ফেনী বানবাসীদের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। সেখানে বোট সিন্ডিকেট চক্রটি প্রতিটি স্পিডবোট ১০ হাজার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে বাধ্য হয়েই প্রতিটি স্পিডবোট খরচসহ ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

ফেনীতে বানবাসীদের উদ্ধারে যাওয়া স্বেচ্ছাসেবক খায়রুল আলম জানান, চাঁদপুর থেকে ৩০টি স্পিডবোট ফেনীতে যাচ্ছে। আমাদের ট্রাকে ২টি বোট আছে। তাদের সব খরচ আমাদের বহন করতে হবে। তারা এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে ভাড়া বেশি নিচ্ছে। অথচ তারা ফেনী জেলার মানুষের কথা চিন্তা করে একটু মানবিক হওয়া উচিত ছিল। স্পিডবোট একটু হোক বা দুইটি প্রতি ট্রাক ১০ হাজার টাকা ভাড়া নিচ্ছে। এ সময়ে প্রশাসনের নজরদারি প্রয়োজন।

সামাজিক সংগঠক এইচএম জাকির বলেন, ঢাকা, ফেনী ও চাঁদপুরের বেশ কয়েকটি সংগঠন স্পিডবোট সহযোগিতা চায় আমার কাছে। আমি তাৎক্ষনিকভাবে চাঁদপুরে স্পিডবোট পরিচালনা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে স্পিডবোট ম্যানেজ করে ফেনীতে ট্রাকযোগে পাঠিয়েছি। ট্রাক স্বল্পতার কারণে পাঠাতে দেরি হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, একটি বিষয় না বললেই নয়। মানুষ বিপদের সময়েও সিন্ডিকেট করে ভাড়া, পরিবহন, লেবার ইত্যাদি খাতে স্বেচ্ছায় সেবা দিবে, সেখানে তা না করে চাহিদা বেশি দেখে মোটা অংকের বিনিময় ছাড়া কাজ করে না। একটা স্পিডবোট ট্রাকে তুলতে লেবার চাহিদা ৬ হাজার টাকা। অথচ স্বেচ্ছাসেবীরা টেনে ট্রাকে তুলে দেয়। অপরদিকে স্পিডবোটের ভাড়া প্রতিদিন ১০ হাজার করে। আর ট্রাক ভাড়া চাঁদপুর হতে ফেনী পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এর কম হলে কোনো পক্ষই রাজি হয় না। বন্যার্তদের সাহায্যে যত দ্রুত যাওয়া যায় বিবেচনায় স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠনগুলো টাকার কথা না ভেবে বাধ্য হচ্ছে নিতে। চট্টগ্রাম থেকে যারা স্পিডবোট নিয়ে ফেনীতে আসছে এবং সেবা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের সাথে কথা বলে জেনেছি তেল খরচ হয় প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে একটি স্পিডবোটের পেছনে দৈনিক খরচ আছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

স্পিডবোট চালক মো. জাকির বলেন, আমাদের চালক কতৃপক্ষ থেকে ভাড়া নির্ধারণ হয়েছে। আমাদের সকল খরচসহ ১০ হাজার টাকা প্রতিদিন দিতে হবে।

চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, মূলত স্পিডবোটের ভাড়া নির্ধারিত না। তারা এক এক ভাবে ভাড়া নিয়ে থাকে। যেহেতু ভালো কাজে স্বেচ্ছাসেবকরা স্পিডবোট ভাড়া নিচ্ছে, আমাদের পক্ষ থেকে ভাড়া যাতে আরো কম নেয় আমরা ব্যবস্থা নিবো।

শেয়ার করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)