চাঁদপুরে ৩১ ইউনিয়নের ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী : চরম দুর্ভোগে

শরীফুল ইসলাম :
গত ৪ দিন টানা বৃষ্টিতে পানি নিস্কাশন না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা। শত শত পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। যার ফলে লোকজন খাবারের কষ্ট এবং গৃহপালিত পশু নিয়ে খুবই দুর্বিসহ দিনযাপন করছেন। একই সাথে গত দুই দিন এই এলাকায় পল্লী বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। জেলায় গত ২৪ ঘন্টায় ১০২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সদর উপজেলার বাগাদী, ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা, কড়ইতলি, পৌরসভা, গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, অতি বৃষ্টির কারণে বহু ঘর বাড়ি ও সড়ক পানিতে নিমজ্জিত। এখন পর্যন্ত চাঁদপুর জেলার ৩১টি ইউনিয়নে ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

এদিকে চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের সদর উপজেলার বাগাদি পাম্প হাউজ পানি নিষ্কাশনে দিন ও রাতে সেচ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে জোয়ারের সময় মেশিনগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

বাগাদি ইউনিয়নের বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, গত ৪ দিনের বৃষ্টিতে আমার তিনটি ঘরে পানি। গবাদি পশু নিয়ে আছি খুবই বিপাকে। রান্নাও করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ নেই গত দু’দিন। আমাদেরকে কেউ এসে খোঁজ-খবরও নেয় না।

একই এলাকার বাসিন্দা জোৎস্না বেগম বলেন, জলাবদ্ধতায় পরিবারের সদস্যরা খুবই কষ্ট আছেন। পানি কমছে না। তিনি সরকারি সহায়তা কামনা করেন।

ফরিদগঞ্জ বালিথুবা ইউনিয়নের চান্দ্রা বাজার এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, অতিবৃষ্টিতে আমাদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবকিছুই পানির নিচে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে সবকিছুই পানিতে তলিয়ে যাবে।

ওই ইউনিয়নের মদনেরগাঁও গ্রামের সৈয়দ গাজী বলেন, টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হয়ে গ্রামের অনেকেই পানিবন্দি। রাস্তায় পানি থাকায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না।

পাশের মানিকরাজ গ্রামের সোহেল আহমেদ বলেন, আজকে দুদিন এলাকার প্রায় ১০ বাড়ির লোকজন পানির কারণে বাড়ি থেকে নামতে পারছে না। বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের নিয়ে অনেক কষ্টে রাস্তা পার হতে হয়। পানি না কমায় ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে।

চরবাগাদি পাম্প হাউজের মেশিন অপারেটর মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি পানি নিষ্কাশনের। দিন ও রাতে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বর্তমানে সেচ প্রকল্পের ভেতরে পানির লেভেল ৩.৯৫ থেকে ৪.২০ মিলিমিটার। এটি বাড়ছে এবং কমছে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌলি মন্ডল বলেন, উপজেলার প্রায় সবগুলো ইউনিয়নে অতিবৃষ্টির কারণে লোকজন পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। আমাদের সকল দপ্তরের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. রহুল আমিন বলেন, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সেচ প্রকল্প এলাকায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রকল্প এলাকা হচ্ছে ১০০ কিলোমিটার। আমরা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছি। পানি কমালেও বৃষ্টিতে আবার একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের পাম্প হাউজ ছাড়াও প্রকল্প এলাকার হাজিমারা পাম্প হাউজ দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা হচ্ছে। আশা করি, বৃষ্টি কমলে দু’দিনের মধ্যে পানি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে।

চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদ বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতায় জেলার কয়েকটি উপজেলায় লোকজন পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে শাহরাস্তি উপজেলায় ২৮ হাজার ৯৪০ পরিবার, হাজীগঞ্জ উপজেলার এক ইউনিয়নে ১২ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৪ইউনিয়নে ৬০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সদরের ৮ ইউনিয়নে ৮০০ এবং হাইমচরে ১ হাজার পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ নরজদারিতে রাখা হয়েছে। পদ্মা-মেঘনার পানির বর্তমান লেভেল হচ্ছে ৩.৭৮ মিলিমিটার।

শেয়ার করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)