Site icon Chandpur Probaha | চাঁদপুর প্রবাহ

করোনা : ভারতে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা অর্থ সংকটে, আটকে পড়া রোগীরা ফিরতে মরিয়া

সংবাদদাতা, কলকাতা, ভারত থেকে :
করোনাভাইরাসের কারণে ভারত সরকার ঘোষিত লকডাউনে বেশ বিপাকে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে অবস্থান করা বাংলাদেশী (নিজ খরচে পড়ুয়া) শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে অর্থ সংকটে ভুগছে হাজার হাজার বাংলাদেশী শিক্ষার্থী। অনেকে টাকার অভাবে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। স্বদেশী অন্য শিক্ষার্থী, ভারতীয় বন্ধু-শুভাকাঙ্খীদের কাছে আপাতত ধার-দেনা করে চললেও সহসা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম শঙ্কিত তারা। দেশ থেকেও টাকা আনার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না এসব শিক্ষার্থী।

একই সাথে কলকাতা, চেন্নাইসহ ভারতের বিভিন্ন শহরে চিকিৎসা নিতে এসে আটকা পড়া রোগীরা দেশে ফিরতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। এদেরও অনেকে অর্থসংকটে ভুগছেন। অনেকের থাকার জায়গা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে খাওয়া নিয়েও। লকডাউন থাকায় তারা দেশেও ফিরতে পারছেন না। ১৪ এপ্রিল লকডাউন খুললে আটকেপড়া বাংলাদেশীদের দেশে ফেরা সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কিন্তু বিরতি না দিয়ে লকডাউন অব্যাহত থাকলে আটকেপড়া এসব রোগী ও তাদের স্বজনদের কি হবে তার সদুত্তর নেই কারো কাছেই।

ভারত ভ্রমণে এসেও আটকা পড়েছে অনেকে। তারাও পড়েছেন অর্থ সংকট। সমস্যা হচ্ছে থাকা-খাওয়াতেও।

এদিকে কলকাতার বাঙালিপাড়া হিসেবে পরিচিত নিউ মার্কেট এলাকায় এখন কেবল নীরবতা আর শূন্যতা। যুগ যুগ ধরে যে এলাকাটি প্রতিদিন হাজার হাজার বাংলাদেশীর পদচারণায় মুখরিত থাকতো তা এখন প্রায় জনমানবহীন নগরীতে পরিণত হয়েছে। ফুটপাতে নেই আগের মতো শত শত হকারের হাকডাক।

কুমিল্লার বিক্রম কর্মকার পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা করাতে এসে এখন ভেলোরে আটকা পড়ে গেছেন। পয়সার টানাটানিতে গুনেগেঁথে শুধু ডাল আর ভাত দিয়ে গতকাল দুপুরের খাওয়া সেরেছেন তাদের কেউ কেউ। লকডাউনের জেরে ভারতের বাজারেও জিনিসপত্রের দাম এখন অগ্নিমূল্য– তাতে আরও ভোগান্তি বেড়েছে এই বিদেশিদের।
দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে হার্টের চিকিৎসা নিতে এসে একইভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্বামী-পুত্রকে নিয়ে ভারতে আটকা পড়ে গেছেন চট্টগ্রামের এক নারী যিনি সংবাদমাধ্যমের কাছে নিজের নাম অবধি বলতে চান না, কারণ ভারতে তার ভিসার মেয়াদও ফুরিয়ে গেছে গত ২৫ মার্চ।

২৩ মার্চ দিল্লি থেকে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের বিমানে তার সপরিবারে ঢাকা ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তার আগেই সব আন্তর্জাতিক উড়ান বাতিল করে দেয় ভারত – অগত্যা তারা এখন দক্ষিণ দিল্লির একটি গেস্ট হাউসে গৃহবন্দী।

গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে ভারত ভ্রমণের বিশাল ট্যুর প্যাকেজ নিয়ে এ দেশে ঢুকেছিলেন বরিশালের নাবিলা আঞ্জুমান ও তার আরও জনাদশেক সঙ্গী। সাড়ে তিন সপ্তাহ নিরুপদ্রবে ঘুরে বেড়ানোর পর গত ১৮ মার্চ থেকে তারা কর্নাটকের মাইসোরে আটকা পড়ে আছেন।

নাবিলা বলছিলেন, “যে কোনওভাবে টাকা পাঠানোর জন্য আমরা দেশে খবর পাঠিয়েছি। বুঝতে পারছি না কীভাবে কী করব!”

“আমাদের পাশের একটি গেস্ট হাউসেও বাংলাদেশী ট্যুরিস্টদের আর একটি দল আটকা পড়ে আছেন”, জানান তিনি।

করোনাভাইরাসের সঙ্কট সামাল দিতে ভারত তাদের বর্ডার সিল করে লকডাউন জারি করার পর এভাবেই শত শত বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে আটকা পড়েছেন।

উপায় খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশ দূতাবাস। এখন তাদের কীভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব, তার উপায়গুলো বাংলাদেশ সরকার খতিয়ে দেখছে।
দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, ‌’আমরা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের এরকম আটকে-পড়া নাগরিকদের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করছি।’

সেই তালিকা তৈরি হলে তার মধ্যে থেকে যারা অবিলম্বে দেশে ফিরতে চান, তাদের বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করে ফেরানো যায় কি না – সেই সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।

দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফেসবুক পেজেও দিল্লি ও মুম্বাইতে দুটি হটলাইন নম্বর দিয়ে আটকে পড়া নাগরিকদের জরুরী প্রয়োজনে সেখানে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বিদেশে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক অনুমোদিত ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার ও ব্যাঙ্কগুলোর প্রতি যে জরুরী নির্দেশিকা জারি করেছে, তার একটি প্রতিলিপিও সেখানে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ভারতের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, এর মধ্যে যাদের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে তাদের কোনও জরিমানার মুখে পড়তে হবে না এবং এই বাংলাদেশীদের ভারতে ‘ওভারস্টে’-কেও বৈধ বলে গণ্য করা হবে।

সাধারণত ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরও কোনও বিদেশি নাগরিক ভারতে থেকে গেলে তাকে সরকারের এফআরআরও বা বিদেশি পঞ্জীকরণ কেন্দ্রে গিয়ে মোটা অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়। কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি নোট পাঠিয়ে বাংলাদেশকে জানিয়েছে, এই ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে সেই জরিমানা থেকে ছাড়ের ব্যবস্থা করা হবে।

চিকিৎসা বা পর্যটনের জন্য ভারতে এসে এখন আর দেশে ফিরতে পারছেন না, এরকম বাংলাদেশীর সংখ্যা মোট কত তা এখনও নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় সিকি লাখ হবে বলে বিভিন্ন সূত্র ধারণা করছে।

Exit mobile version