Site icon Chandpur Probaha | চাঁদপুর প্রবাহ

করোনা : যে কৌশলে জার্মানীতে মৃত্যুর হার সর্বনিম্ন

জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৬ হাজার হলেও মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ১৬জন


আলী মোঃ ওয়াহেদ, কোলন, জার্মানি থেকে :
করোনার ভয়াবহ আক্রমণে বিশ্ব আজ স্থবির হয়ে পড়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে আজ গোটা বিশ্ববাসী। ইউরোপের যে কয়েকটি দেশে মারাত্মকভাবে করোনা হানা দেয় সেগুলো হচ্ছে- ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড এবং জার্মানি। ইতালিতে বর্তমান আক্রান্তের পরিমাণ ১ লাখ ৩৬ হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ১৭ হাজার ১২৭জন। স্পেন আক্রান্তের পরিমাণ ১ লক্ষ ৩০ হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ১৪ হাজার ৫৫৫জন। ফ্রান্স আক্রান্তের পরিমাণ ১ লক্ষ ৯ হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ৩২৮জন। ইংল্যান্ডে আক্রান্তের পরিমাণ ৫৫ হাজারএবং মৃতের সংখ্যা ৬ হাজার ১৫৯জন।

অন্যদিকে জার্মানিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৬ হাজার হলেও মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ১৬জন।এদের মধ্যে কয়েকটি দেশ যেমন ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স সুইজারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ডে লকডাউন বিরাজ করছে কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, জার্মানীর কয়েকটি শহর ছাড়া পুরো জার্মানিকে এখনো লকডাউনের আওতায় আনা হয়নি। যার মূল কারণ হচ্ছে বিশ্বের এ মহামারি অবস্থায় অন্যসব দেশকে অনুসরণ না করে জার্মানি অনুসরণ করছে তাদের নিজস্ব পন্থা। জার্মানির ৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭ হাজার লোকের কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে এবং মৃত্যুবরণ করেছে ২ হাজার ১৬জন। যা ইউরোপের অন্য কয়েকটি দেশের তুলনায় অতি নগণ্য।

জার্মানিতে আক্রান্তের হারের চেয়ে মৃত্যুর হার অনেক কম কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জার্মানির ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা বলেন, এর অন্যতম কারণ হচ্ছে জার্মানিতে প্রচুর পরিমাণে করোনার ল্যাব টেস্ট করানো, দ্রুত গতিতে আইসোলেশন ইউনিট বৃদ্ধি এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ টেস্টিং কিট উৎপাদন অর্থাৎ প্রতি সপ্তাহে জার্মানিতে প্রায় ৫ লাখ লোকের করোনা টেস্ট করানো হচ্ছে। যাদের টেস্ট পজিটিভ হচ্ছে তাদের দ্রুত সম্পূর্ণরূপে আইসোলেশন রাখা এবং যাদের অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল তাদের হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। যার কারণে এখানে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হলেও মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম।

যেহেতু ভাইরাসটির বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। তাই জার্মানিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সচেতনতাকেই এ মহামারীর হাত থেকে রক্ষার একমাত্র কৌশল হিসেবে অবলম্বন করেছে। জার্মান সরকার পুরো দেশকে লকডাউনের আওতায় না আনলেও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ৫০জনের বেশি লোক এক জায়গায় সমবেত হওয়া নিষিদ্ধ, ২জন লোকের বেশি একসঙ্গে চলাফেরা করা যাবে না এবং একজন মানুষ থেকে আরেকজনের দূরত্ব কমপক্ষে দুই মিটারের বেশি বজায় রেখে কথোপকথন ও চলাফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রায় সব অফিস খোলা রাখা হলেও কাজের ঘন্টা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সুপার মার্কেট, সুপারশপ এবং গণপরিবহন গুলো সম্পূর্ণরূপে চালু থাকলেও তাতে নেয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।

আরেকটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, বাইরে বের হওয়া জার্মানিদের মধ্যে মুখে মাক্স আর হাতে গ্লাভস পড়ার প্রবণতা খুব একটা না দেখা গেলেও এরা সবাই সামাজিক গুরুত্ব দূরত্ব রেখে চলে। এসব বিষয়কে দেখা হচ্ছে জার্মানীতে মৃত্যুর সর্বনিম্ন হওয়ার কারণ হিসেবে।

Exit mobile version