Site icon Chandpur Probaha | চাঁদপুর প্রবাহ

চাঁদপুরের শিশু আরাফ হত্যায় ৩ আসামীর ফাঁসি

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার দুই বছর বয়সী শিশু আবদুর রহমান আরাফকে পানির ট্যাংকিতে ফেলে হত্যার ঘটনায় ৩ আসামীর বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। বুধবার চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ জসিম উদ্দিন আসামীদের উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।

নিহত আরাফ হাজীগঞ্জ উপজেলার গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের তারালিয়া গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম ও ফারহানা বেগম দম্পত্তির একমাত্র সন্তান। আব্দুল কাউয়ুম একটি বেসরকারি কোম্পানীতে চাকুরি করার সুবাদে চট্টগ্রামে বাস করতেন। আরাফের বাবার দায়ের করা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ৩জনই আসামী ছিলেন। যা পরে হত্যাকান্ড সংঘটিত এলাকার সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ও আসামীদের স্বীকারোক্তিতে হত্যার রহস্য উঠে আসে।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন : চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরের মোঃ ফরিদ, আরিফদের বাসার দারোয়ান মোঃ হাসান ও হাসানের মা নাজমা বেগম। রায়ের পর সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের কারাগারে পাঠানো হয়। রায়ে বাদী পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।

২০২০ সালের ৬ জুন বিকেলে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার মিয়াখান নগরে একটি ভবনের ছাদে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয়েছিল শিশু আরাফকে। চট্টগ্রামের মিয়াখান নগরে বাড়ির মালিককে ফাঁসাতে পানির ট্যাংকে ফেলে দুই বছরের শিশু আবদুর রহমান আরাফকে হত্যা করা হয়। যা মামলার তদন্তে উঠে আসে।

গত ৩০ মার্চ উক্ত মামলার রায় হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই আরাফের বাবা মায়ের ডিএনএ টেস্টের আবেদন করে এক আসামী। সেই আবেদন নাচক হয়ে যাওয়ার পর বুধবার রায় ঘোষণা করে আদালত। রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গনে বাদী ও আসামীর স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, বাকলিয়া থানার ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী নূরুল আলম মিয়া ছিলেন আটতলা ওই ভবনের মালিক। তাকে ‘মামলায় ফাঁসাতে’ ওই ভবনের বাসিন্দা কোনো শিশুকে হত্যা করতে নাজমাকে ২০ হাজার টাকার লোভ দেখান দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী ফরিদ। ফরিদ ওই ওয়ার্ডের অপর কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারী ছিলেন।

জানা যায়, ঘটনার দিন বিকেলে মিয়াখান নগরে ভবনের সামনে গাড়ি রাখার জায়গায় খেলছিল শিশু আরাফ। মায়ের কাছে চানাচুর খাওয়ার পর সে পানি খেতে চায়। এ সময় শিশুটির মা ফারহানা ইসলাম পানি আনতে ঘরের ভেতরে যান। এ ফাঁকে আদর করার ছলে আরাফকে নিয়ে ভবনের ছাদে চলে যান নাজমা বেগম। সেখানে পানির ট্যাংকে ফেলে আরাফকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর নাজমা বেগম, তার ছেলে হাসান ও তাদের পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ।

নাজমা বেগম আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে বলেছিলেন, বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে প্রতিবেশীর শিশুকে আদর করার ছলে পানির ট্যাংকে ফেলে হত্যা করা হয়। নাজমা বেগম আরো বলেন, ঋণগ্রস্ত হয়ে অর্থের লোভ এবং পাশের ভবনের বাসিন্দা ফরিদের প্রলোভনে বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে এ ঘটনা ঘটান। ঘটনার সময় নাজমার ছেলে হাসান (২৩) গেইট খুলে দিয়ে তাকে ছাদে উঠতে সহায়তা করায় ফরিদকে উক্ত ঘটনায় আসামী করা হয়।

রায় ঘোষণার পর আরাফের বাবা আব্দুল কাইয়ুম রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এ রায়ে খুশি। দেশে আইনের শাসন রয়েছে এটাই প্রমাণ করে। এখন সরকারের কাছে একটাই দাবি আসামীদেরকে দ্রুত রায় কার্যকর করা হোক।

অন্যদিকে আসামীর স্বজনরা রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়েছেন।

Exit mobile version