- মমিনুল ইসলাম
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাড়ে পাঁচআনী গ্রামের ক্ষুদে ফুটবলার সোহান এখন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের আলোচ্য মুখ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘খুদে মেসি’ হিসেবে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে এই ছোট্ট ফুটবল প্রতিভাকে ঘিরে চলছে একের পর এক ইতিবাচক সংবাদ।
সোমবার (১০ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে সোহানকে নিয়ে একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, “খুদে ফুটবলার সোহানকে বিকেএসপি স্কলারশিপ দেওয়া হবে। বিকেএসপিতে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হবে সোহান।
এই ঘোষণার মাধ্যমে মতলবের ছোট্ট ফুটবলারটির জীবনে খুলে যাচ্ছে এক নতুন অধ্যায়। দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে ভর্তি হয়ে সে এখন পেশাদার প্রশিক্ষণের সুযোগ পাচ্ছে যা কোনো গ্রামীণ শিশুর জন্য এক ঐতিহাসিক অর্জন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর প্রথমবারের মতো সোহানের প্রতি দায়িত্ব নেওয়ার আগ্রহ দেখান বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি লন্ডন থেকে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন সোহানের পড়াশোনা ও চিকিৎসা-সহ সামগ্রিক দায়িত্ব নেওয়ার। সেই সময় থেকেই সোহান ও তার পরিবার নিয়মিত সহায়তা পেতে শুরু করে।
তারেক রহমানের নির্দেশে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক সোহানের পাশে দাঁড়ান তার স্কুলে যাওয়া, অনুশীলনের সরঞ্জাম ও পড়াশোনার খরচ বহন করেন। সেই ধারাবাহিকতায় এখন বিকেএসপির সুযোগ পেয়ে সোহানের প্রতি জাতীয়ভাবে নতুন আগ্রহ দেখা দিয়েছে।
সোহানের বাবা মো. সোহেল প্রধান আনন্দে আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আমি সোহানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি। আল্লাহ যেন আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেন। আমি আমার ছেলেকে বাংলাদেশের জন্য উৎসর্গ করলাম।
তিনি আরও বলেন, আমি গরিব মানুষ, তবুও ছেলেকে কখনো থামাইনি। এখন অনেকেই পাশে এসেছে। আল্লাহর রহমতে আমার ছেলে একদিন দেশের নাম উজ্জ্বল করবে।
বিকেএসপি স্কলারশিপের খবর ছড়িয়ে পড়তেই মতলব উত্তরের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় অভিনন্দনের ঢল। স্থানীয় শিক্ষক, খেলোয়াড় ও ক্রীড়ামোদীরা বলেন, সোহানের মতো গ্রামীণ প্রতিভারাই একদিন দেশের ফুটবলে নতুন ইতিহাস গড়বে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, আমরা গর্বিত যে মতলবের একটি শিশু এখন বিকেএসপিতে যাচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সোহানের পরিবারকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।
ক’দিন আগেও গ্রামের মাঠে খালি পায়ে বল নিয়ে দৌড়াত সোহান। কিন্তু এখন তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে জাতীয় ক্রীড়ামহলে। ভাইরাল একটি ভিডিও বদলে দিয়েছে তার জীবন। সামাজিক মাধ্যমে কেউ বলছে ‘বাংলার মেসি’, কেউ বলছে ‘মতলবের গর্ব’।
এখন বিকেএসপির স্কলারশিপ পেয়ে সোহানের হাতে ধরা দিয়েছে বাস্তব স্বপ্নের সুযোগ। তার ছোট্ট মুখে এখন একটাই কথা, আমি মেসির মতো খেলোয়াড় হতে চাই, বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চাই।
