Site icon Chandpur Probaha | চাঁদপুর প্রবাহ

শাহরাস্তিতে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে ত্রাণ আত্মসাতের অভিযোগ

ফয়েজ আহমেদ :
শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম পাটোয়ারী লিটন ও ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মনির চৌধুরীর বিরুদ্ধে ত্রাণের চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে ওই ইউনিয়নের দহশ্রী গ্রামের মৃত আঃ হাকিমের পুত্র মোঃ আজাদ হোসেন বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ মে ওই ইউনিয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিনামূল্যের চাল বিতরণকালে ১০ কেজির পরিবর্তে সাড়ে ৭ কেজি হতে ৮ কেজি করে চাল বিতরণ করে। এ ব্যাপারে অভিযোগকারী আজাদ হোসেন চেয়ারম্যানকে চাল কম দেয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি চাল কম পেয়েছেন, তাই কম বিতরণ করছেন বলে জানান।

এক পর্যায়ে ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মনির চৌধুরী আজাদকে ঘাড় ধাক্কা দেয় এবং এ বিষয়ে কথা বললে কল্লা (মাথা) কেটে ফেলার হুমকি দেয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগে আরও জানানো হয়, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মনির চৌধুরী তার এলাকায় ভিজিডির কার্ড নিজের কাছে জমা রেখে সাধারণ মানুষের চাল আত্মসাত করে আসছেন।

সরেজমিনে ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে চাল ওজনে কম দেয়ার বিষয়ে খোঁজ নিলে সরকারি সহায়তা পাওয়া লোকজন সাংবাদিকদের কাছে চাল ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ আনে। আনন্দপুর গ্রামের নোয়াব আলী মেম্বার বাড়ির মৃত সেকান্দার আলীর পুত্র আলী আকবর জানান, তাকে ১০ কেজির পরিবর্তে ৮ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। একই গ্রামের গুজরত আলী মিস্ত্রী বাড়ির মৃতঃ দুলাল হোসেনের পুত্র ইমান হোসেন জানান, সে ৭ কেজি চাল পেয়েছে। মিয়াজী বাড়ির আঃ মান্নানের পুত্র ইমান হোসেন সোহেল জানায় সে ৭ কেজি ২০০ গ্রাম চাল পেয়েছে। গাজী বাড়ির হারুন রশিদের পুত্র রিপন পেয়েছে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম, নতুন বাড়ির হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী সুফিয়া বেগম পেয়েছে ৭ কেজি ৭৫০ গ্রাম।

আতাকরা গ্রামে গেলে ইউনিয়ন ত্রাণ কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ আঃ রব জানান, ওই গ্রামের আঃ সাত্তার, নজরুল ইসলাম ও সাফিয়া বেগমকে চাল ওজনে কম দেয়া হয়েছে। হাজী বাড়ির আম্বর আলীর পুত্র নজরুল ইসলাম এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, তাকে সাড়ে ৭ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। বোগরা গ্রামের আরিফ উল্যাহকে সাড়ে ৮ কেজি ও রহিমা বেগমকে ৮ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। দহশ্রী গ্রামের মোঃ মোস্তফার পুত্র ওসমান গনী জানান তাকে সাড়ে ৭ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। একই গ্রামের বোরহান উদ্দিনের স্ত্রী নাজমা বেগম জানান, তাকে ৮ কেজি চাল দেয়া হয়েছে।

৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ আসলাম ভুঁইয়া জানান, প্রতিটি ব্যক্তিকে সাড়ে ৭ কেজি থেকে ৮ কেজি ৩০০ গ্রাম করে চাল দেয়া হয়েছে। ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ মমিনুল হক খোকন জানান, চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা মিলে অসহায় লোকদের ত্রাণের চাল কম দিচ্ছে। তিনি বিএনপির চেয়ারম্যান হওয়ায় আওয়ামী লীগের লোকদের মূল্যায়ন করেন না।

৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ রতন চৌধুরী জানান, ইতোপূর্বে যতবার চাল বিতরণ করা হয়েছে তাতে ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। আমি চেয়ারম্যানকে এ ব্যপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে জানান, গুদাম হতেই চাল কম দেয়া হচ্ছে। আমার বিশ্বাস না হলে গ্রামপুলিশ সাথে নিয়ে গুদাম হতে চাল মেপে আনতে বলেছে। এক পর্যায়ে ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার মনির চৌধুরী আমার সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং সাথে থাকা আজাদকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় এবং আজাদের মাথা কেটে ফেলার হুমকি দেয়।

ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম পাটোয়ারী লিটন জানান, ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ মিজানুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তার প্রতিনিধি হিসেবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি রতন চৌধুরী ৩০জন লোকের জন্য ১০ বস্তা চাল বুঝিয়ে দিয়েছি। ওই ওয়ার্ডের সভাপতি ও গ্রামপুলিশ মিলে চাল বিতরণ করেছেন। বিতরণ সম্পন্ন হওয়ার পর আজাদ মুন্সী ঘটনাস্থল ত্যাগরত ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ মনির চৌধুরীকে মোটর সাইকেল হতে নামিয়ে লাথি মেরে লাঞ্ছিত করে। এ সময় অন্যান্য ইউপি সদস্যরা এগিয়ে এসে তাকে রক্ষা করে। গোডাউন হতে চাল আসার পর আনলোড করে সাথে সাথে লোকের সংখ্যা অনুপাতে মেম্বারদের মাঝে বস্তা ভাগ করে দেয়া হয়েছে। চাল বিতরণকালে ট্যাগ অফিসার নিজে উপস্থিত থেকে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছেন।

Exit mobile version