Site icon Chandpur Probaha | চাঁদপুর প্রবাহ

করোনা ভাইরাস : চাঁদপুরে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য ৮ উপজেলায় সততা স্টোর

তালহা জুবায়ের/শরীফুল ইসলাম :
করোনা ভাইরাসের প্রভাবে স্থবির হয়ে পড়া সাধারণ হতদরিদ্র মানুষের জন্য চাঁদপুরে চালু হয়েছে ‘সতত স্টোর। বিক্রেতা ছাড়াই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নারী-পুরুষ লাইনে দাঁড়িয়ে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাঁটানো মূল্য তালিকা দেখে ক্রয়মূল্য নির্ধারিত বাক্সে পরিশোধ করছেন সাধারণ ক্রেতারা।

গত বৃহস্পতিবার থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে সততা স্টোরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে তার জেলায় ৮ উপজেলায় শুরু হয়েছে। সংকটময় সময়ে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে পেরে খেটে খাওয়া মানুষ অনেক খুশি। সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায়, একে একে প্যাকেটজাত করা হচ্ছে চাল, ডাল, লবণ থেকে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য। আর সামাজিক দূরত্ব বযায়ে রেখে নারী-পুরুষ তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করছেন নির্ধারিত বাক্সে টাকা রাখার বিনিময়ে। বাজার মূল্যের চেয়ে কমে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পেরে বেজায় খুশি খেটে খাওয়া এই প্রান্তিক মানুষরা।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচে চালুকৃত সততা স্টোরে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে আসা কয়েকজন নারী-পুরুষ বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমনরোধে গত দুই দিন থেকে ঘর থেকে বের না হতে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। একই সাথে গণযানবাহন ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। এতে করে আমাদের মত নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়করা কঠিন হয়ে পড়ে। একেতো যানবাহন নেই, তার উপরে বাজারে জিনিসপত্রে দাম অনেক বেশি। সেই তুলনায় প্রশাসনের দেওয়া এই সততা স্টোরে তুলনামূলক কম দামে আমাদের জিনিসপত্র কিনতে পারি। যা এই বিপদের সময় আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে ধরা দিয়েছে।

গত বুধবার থেকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণরোধে চাঁদপুর জেলায় ঔষধ ও জরুরী পণ্যের দোকান ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয় সকল ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। রাস্তায় সাধারণ যানবাহান চলাচলেও দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। ওই সময় থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া জনসাধারণের ঘর থেকে বের হওয়ায় নিষেধ নিষেধাজ্ঞা দেয় প্রশাসন। এতে করে অনেক নিম্ন আয়ের মানুষের কাজ-কর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। এই প্রান্তিক জনগণের জন্য মূলত জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সততা স্টোর চালু করেন চাঁপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান।

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলছে এই সততা স্টোর। চাল, পেঁয়াজ, লবণ, আলু, আটা, রসুন, সয়াবিন তেল, সরিষার তেল, চিনি, মশুর ডাল, আদাসহ বর্তমানে ১২টি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পাওয়া যায়।

জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, অনেক মানুষ আছেন, যারা কারোন কাছে হাত পাতা বা কারো সাহায্য নিতে পছন্দ করেন না। এই ধরনের মানুষসহ সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট কিছুটা লাগব করার উদ্দেশ্যে আমরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সততা স্টোর চালু করেছি। পাশাপাশি জেলার আটটি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদেরকেও সততা স্টোর চালু করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। ইতমধ্যে বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়েও সততা স্টোর চালু করা হয়েছে। মূলত বাজার মূল্যের চেয়ে কম দামে এই সততা স্টোরে মানুষ তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয় করতে পারেন। বর্তমানে চাল, ডাল, তেল, লবনসহ ১২টি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য এই স্টোর থেকে কিনতে পারছে জনগণ। আশাকরি, দুর্যোগের পুরো সময়টাতেই আমরা এই সততা স্টোর চালু রাখবো সাধারণ মানুষের জন্য। জেলায় করোনা ভাইরাস সংক্রমনরোধের ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, আমরা পুরো চাঁদপুর জেলার খোঁজ-খবর রাখছি। হোম কোয়ারেন্টাইন যেন সঠিক ভাবে পালন করে সেজন্য মানুষকে উদ্বোদ্ধ করার পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবে নজরধারিও অব্যাহত রেখেছি। আল্লাহর রহমতে এখনো পর্যন্ত জেলার কোথাও করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাইনি।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নিচে অবস্থিত সততা স্টোরে প্রতিদিন ৩শ’ থেকে ৪শ’ দরিদ্র মানুষ কেনাকাটা করছে। তাছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় চালু করা সততা স্টোরগুলোতেও খেটে খাওয়া মানুষরা ভিড় করছে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করার জন্য।

Exit mobile version