Site icon Chandpur Probaha | চাঁদপুর প্রবাহ

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ-রূপসা সড়কটি যেন ধূলিমাখা প্রান্তর

কে এম নজরুল ইসলাম :
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ-রূপসা সড়কটির বর্তমান দৃশ্য দেখলে মনে হবে এটি লাল বালির কোনো মরুভূমির অংশবিশেষ। ধুলোয় যেন গড়াগড়ি খাচ্ছে মানুষ। রাস্তার পাশের সবুজ গাছপালা যেন লালচে আকার ধারণ করেছে। আশপাশের বাড়ি-ঘরে যেন বালির রঙ করেছেন বাড়িওয়ালারা! এ সড়ক দিয়ে মানুষ এবং যান চলাচল করাটা এখন যেন দায় হয়ে পড়েছে।

চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার অতীব গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি এখন পথচারী এবং রাস্তার পাশের বসতীদের কাছে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। একে তো ভাঙাচোরা রাস্তা, তার ওপর ধুলোয় মাখামাখি। ৫.৭৪ কিলোমিটার সড়কটিতে সারাক্ষণ ধুলোবালি উড়তে থাকে। এর সাথে ৩নং সুবিদপুর থেকে মুন্সিরহাট সড়কের ৪.৬০ কিলোমিটার রাস্তাও যুক্ত রয়েছে। ধুলোবালির জন্য একদিকে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, অন্যদিকে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।

চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী রূপসা জমিদার পরিবারের গড়া এই সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সড়কটি দিয়ে শুধু রূপসা বাজারই নয়, উপজেলার পূর্বাঞ্চলের সাথে যোগাযোগের সংক্ষিপ্ত রাস্তাও বটে। বিশেষ করে উপজেলার পূর্বাঞ্চলে রূপসা, খাজুরিয়া, লাউতলী, রুস্তমপুর, পাইকপাড়া, আমিরা বাজার, আষ্টা, গুপ্টি, গল্লাক ও সুবিদপুর এলাকার হাজার হাজার মানুষকে প্রতিনিয়ত উপজেলা সদর, পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ উপজেলায় যাতায়াতের জন্য ফরিদগঞ্জ-রূপসা সড়কটি ব্যবহার করতে হয়।

কম সময়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোতে যাওয়ার জন্য অনেকেই এই সড়কটি ব্যবহার করতো। কিন্তু কোনো এক রহস্যজনক কারণে দীর্ঘ ২/৩ বছর ধরে কাজ শুরু হলেও এখনও সম্পন্ন হচ্ছে না! টেন্ডার-বাতিল আবার পুনঃটেন্ডারের মধ্যেই চলে গেছে প্রায় দেড় বছর। কেন এমন জটিলতা- সাধারণের কাছে তা এক রহস্য।
ফরিদগঞ্জ-রূপসা জিসি সড়কের ৮ কোটি ৬৭ লাখ ৮৬ হাজার টাকার কাজটি পান মেসার্স শহীদ এন্ড ব্রাদার্স।

টেন্ডার প্রক্রিয়ার জটিলতা কাটিয়ে উঠলেও কাজ চলছে একেবারে শামুক গতিতে। এতে মানুষের ভোগান্তিও বাড়ছে। সর্বশেষ টেন্ডারের পর কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল। কিন্তু, এক বছরের অধিক সময় পার হলেও এখনও রাস্তার কাজ শেষ হয়নি। এরকম নজির বাংলাদেশের আর কোথায়ও আছে কী না তা এই রাস্তা ব্যবহারকারীদের জানা নেই। কেনইবা কাজের এত ধীরগতি? কবেইবা শেষ হবে কাজ- কেউ বলতে পারে না।

এ সড়কের বেহাল দশার কারণে রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়ার ঘটনা রয়েছে অনেক। দীর্ঘদিন থেকে চলাচলের অনুপযোগী এ সড়কে চলতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পথচারীরা। জনসাধারণের কাছ থেকে পরিবহনগুলো আদায় করে নিচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। মাঝখানে ১৫ লাখ টাকার দায়সারা সংস্কার কাজ হলেও মানুষের দুর্ভোগ কমেনি একটুও, বরং বেড়েছে। মূল কাজ শুরুর দীর্ঘসময় পার হলেও শেষ না হওয়াতে মানুষের কষ্টের শেষ নেই।

সড়কটির এ দূরাবস্থা বিরাজ করলেও এলাকার মানুষের জনদুর্ভোগ লাঘবে কোনো প্রচেষ্টা নেই জনপ্রতিনিধিদের। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের আগস্ট মাসের ১১ তারিখে কাজের মেয়াদ শেষ হবে। ৬০ পার্সেন্ট কাজ বাকী থাকলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ৯৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলী এ.এস.এম রাশেদুর রহমান জানান, কাজের ধীরগতির জন্য ঠিকাদারকে এ পর্যন্ত ৪টি নোটিশ করেছি। তারপরও ওনারা কাজের গতি বাড়াচ্ছেন না। কাজের মেয়াদ শেষ হতে আর বেশিদিন নেই। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করতে না পারে, তাহলে আমি নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ৪০ পার্সেন্ট কাজ হয়েছে। তবে বাকী কাজ আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে। আশা করি আগামী জুনের মধ্যেই ফরিদগঞ্জ থেকে রূপসা পর্যন্ত সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ শেষ হবে।

সিএনজিচালক নজরুল, জব্বার, গিয়াস, মিন্টু, বাপ্পীসহ অনেকেই জানান তাদের সীমাহীন কষ্টের কথা। বহুকষ্টে পেটের তাগিদে সংসার পরিচালনার জন্য বাধ্য হয়ে ধুলোবালির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন তারা এবং তাদের মতো ড্রাইভাররা। তারা বলেন সড়ক উন্নয়নের সময় ধুলো প্রতিরোধের জন্য পর্যাপ্ত পানি না ছিটানোর কারণে সড়কে ধুলোর ওড়াউড়ি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সিএনজি স্কুটার মালিক মহসিন ও বাচ্চু বলেন, এ সড়কের চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডের কারণে সড়কে ধুলোবালির পরিমাণ সীমাহীন বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে প্রতিনিয়ত সড়কে চলাচলরত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে পড়ছে। গাড়ির শ্রমিকরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যদি কর্তৃপক্ষ রাস্তায় পর্যাপ্ত পানি ছিটাতো, তাহলে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও মানুষ ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেতো। মালিক সমিতি না থাকায় আমরা বিষয়টি নিয়ে কারো সাথে কথাও বলতে পারছি না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আশরাফ আহমেদ চৌধুরী বলেন, সড়কের ধুলোবালির কারণে মানুষের ফুসফুসের সমস্যা এবং শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের এ রোগে আক্রান্ত হবার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া যাদের এজমা এবং এলার্জির সমস্যা রয়েছে, তাদের স্কিনে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তিনি সড়কের ধুলোবালি প্রতিরোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

এ বিষয়ে ঠিকাদার আমির আজম রেজা বলেন, আগে শুনতাম মাজা ভাঙ্গে, এখন কি সেটা শুনা যায়? জুন-জুলাইয়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।

Exit mobile version