Site icon Chandpur Probaha | চাঁদপুর প্রবাহ

চাঁদপুরে কৃষি জমিতে ড্রেজার

জহিরুল ইসলাম জয় :
দিন দিন ফসলী মাঠগুলো অস্তিত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। বর্ষার মৌসুমে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন আর খরা মৌসুমে অবৈধ ট্রাক্টর দিয়ে মাটি কাটার ফলে ইরি বোরো চাষাবাদে চরম ভোগান্তিতে পড়তে দেখা যায় কৃষকদের। মাঝেমধ্যে প্রশাসনের পদক্ষেপে এসব অবৈধ ড্রেজার জব্দ ও জরিমানা করলেও কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এমন চিত্র চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলাজুড়ে।

দেখা যায়, হাজীগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ফসলী মাঠে মিনি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তলন চলছে। ফসলী মাঠের পাশাপাশি কেউ আবার সরকারী খাল বিল থেকেও জোরপূর্বক ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তলন করে আসছে। বেশির ভাগই স্থানীয় কিছু নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের আশ্রয়স্থলের লোকজন এ অবৈধ ড্রেজার ব্যবসার সাথে জড়িত বলে জানাযায়।

এদিকে চলতি বর্ষা মৌসমে এ পর্যন্ত হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোমেনা আক্তার ভ্রাম্যমাণ আদালতে প্রায় ১০টি ড্রেজার মালিককে ৫০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা জরিমানা ও জব্দ করেছে। তারপরও যেন কোন ভাবে থামছে না অবৈধ ব্যবসায়ীদের রাজত্ব। তবে প্রশাসনের টানা অভিযানে কিছু ড্রেজার রাতের বেলায় মাটি উত্তলন করে আর দিন হলে বন্ধ করে রাখে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ১ নম্বর রাজারগাঁও ইউনিয়নের মেনাপুর ও রামড়া কৃষি মাটে ড্রেজার চালাচ্ছে নাছির, মনির ও শহিদ বকাউল। ২ নম্বর বাকিলা ইউনিয়নের স্বর্ণা ও টেকের বাজার পশ্চিম মাঠ এবং বোরখাল মাঠে ড্রেজার চালাচ্ছে মাসুদ, রবিউল, অরুন মেম্বার, এমরান ও মানিক। ৩ নম্বর কালচোঁ উত্তর ইউনিয়নের তারাপাল্লা, ছিলাচোঁ ও কালচোঁ কৃষি মাঠে ড্রেজার চালাচ্ছে ওসমান, উজ্বল, মনির।

৪ নম্বর কালঁচো দক্ষিন ইউনিয়নে ভাটরা, নোয়াহাটা কৃষি মাঠে ড্রেজার চালাচ্ছে শহিদউল্লাহ, মানিক ও জহির। ৫ নম্বর সদর ইউনিয়নের মৈশাইদ, সুহিলপুর, অলিপুর কৃষি মাঠে ড্রেজার চালাচ্ছে খোকন, করিম, বাচ্ছু মিয়া। ৬ নম্বর বড়ক‚ল পূর্ব ইউনিয়নের দিগছাইল, সোনাইমুড়ী, পালিশারা ও মোল্লাডহর কৃষি মাঠে ড্রেজার চালাচ্ছে শফিউল্ল্যাহ, হারুন, সিরাজ, করিম।

৭ নম্বর বড়কুল পশ্চিম ইউনিয়নের দেবীপুর, রামচন্দ্রপুর কৃষি মাঠে ড্রেজার চালাচ্ছে শহিদ ও ইদ্রিস মিয়া। ৮ নম্বর হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের হাটিলা, হাড়িয়াইন, নোয়াপাড়া মাঠে ড্রেজার চালাচ্ছে মাসুদ, মনির, জহির, সিরাজ ও হৃদয়। ৯ নম্বর গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের পালিশারা, তারালিয়া, গন্ধর্ব্যপুর কৃষি মাঠে ড্রেজার চালাচ্ছে শাহাজান, হারুন, বারেক, মিজান, রুবেল, করিম, মাঈনু ও তাজু।

১০ নম্বর গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ভাউরপাড়, জয়শরা, পাঁচৈই, দেশগাঁও, ডাটরা কৃষি মাঠে ড্রেজার চালাচ্ছে মনির মেম্বার, রহিম, সুফিউল্ল্যা, তাজু হাফেজ ও ফরিদ মেম্বার। ১১ নম্বর হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের সুহিলপুর, পাতানিশ, ধড্ডা কৃষি মাঠে ড্রেজার চালাচ্ছে কামাল, নিপুন, শহিদ, শাহাজান। ১২ নম্বর দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নের ইছাপুর, চেঙ্গাতলী, কাপাইকাপ কৃষি মাঠে ড্রেজার চালাচ্ছে ইমরান, রফিক, জাহাঙ্গীর ও ওসমান।

এদের বাইরেও আরো অনেকে রয়েছে যা সব মিলে প্রায় অর্ধশত ড্রেজার চলমান থাকলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার চলমান অভিযানে দিনের বেলায় বন্ধ রেখে রাতের বেলায় চলছে ড্রেজার মিশিন।

কৃষক চাঁন মিয়া, চন্দন সাহা, হারুন, শফিক ও মোবারক মিয়া বলেন, প্রতিবছর কৃষি জমি থেকে যে হারে মাটি উত্তলন চলছে এতে চাষাবাদ করতে গিয়ে পানি সরবরাহে বেঘাত পড়তে হয়। অচিরেই কৃষি জমিকে রক্ষা করতে প্রশাসনের সৃ-দৃষ্টি কামনা করছি।

হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, আমরা চলতি বর্ষা মৌসুমী গত এক মাসে ১০টি অবৈধ ড্রেজার জব্দ ও জরিমানা করেছি। তারপরও যারা ড্রেজার চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Exit mobile version