Site icon Chandpur Probaha | চাঁদপুর প্রবাহ

চাঁদপুরে হত্যা মামলার প্রধান আসামী কাজী মিজান গ্রেফতার : কারাগারে প্রেরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের চর বাহাদুরপুরে আওয়ামী লীগের মিছিলে হামলা ও গুলিতে যুবলীগ নেতা মোবারক হোসেন বাবু (৪৮) নিহত হওয়ার ঘটনায় মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মিজানুর রহমানসহ এজাহারভুক্ত ৭ আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিকেলে তাদেরকে চাঁদপুরের আদালতে হাজির করা হলে আদালত জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এরপর বাবুরহাটস্থ চাঁদপুর জেলা কারাগারে নেওয়া হয় তাদেরকে।

রোববার বেলা ২টার দিকে মোহনপুরস্থ গ্রামের বাড়ি থেকে চাঁদপুর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল কাজী মিজানকে গ্রেফতার করে চাঁদপুর নিয়ে আসে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরো ৬জনকে গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন- বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী মুছা গাজী (৩০), মো. জুয়েল কবিরাজ (১৯), ছাবিয়া বেগম (৪৫), আনোয়ার শেখ (৪৫), মোশারফ মিজি (৭০) ও শাহিনা বেগম (২৬)। গ্রেফতারকৃত আসামীরা কাজী মিজান গ্রুপের লোক ও অনুসারী।

গ্রেফতারকৃত কাজী মিজানুর রহমান আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য এবং সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের উপ-নির্বাচনের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনি চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার আলোচিত বালু উত্তোলনকারী। বিগত ইউপি নির্বাচনে প্রথম নৌকা প্রতীক পেলেও পরে দলীয় সভানেত্রী তার দলীয় মনোনয়ন বাতিল করেন। এরপর দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র পদে নির্বাচন করে তিনি বিজয়ী হন। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম ও স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুলের ঘনিষ্ঠ অনুসারী তিনি।

এর আগে রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিহত যুবলীগ নেতা মোবারক হোসেনের ভাই আমির হোসেন কালু বাদী হয়ে ৩১জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৩০/৪০জনকে আসামি করে মতলব উত্তর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মতলব উত্তর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সানোয়ার হোসেন বলেন, রোববার বেলা ২টার দিকে মোহনপুরের বাড়ি থেকে চাঁদপুর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মোবারক হত্যা মামলার প্রধান আসামি কাজী মিজানুর রহমানকে গ্রেফতার করে। পরে চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজিরের পর আসামীদের কারাগারে পাঠানো হয়।

নিহত মোবারক হোসেন বাবু বাহাদুরপুর গ্রামেরই আবুল হোসেনের ছেলে। গুরুতর আহত ইমরান নিহত মোবারকের ছেলে এবং জহির কবিরাজ একই গ্রামের মনু কবিরাজের ছেলে। তারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। গুলিবিদ্ধ আরো ২জন চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এছাড়া আরো অনেকে ওই হামলায় আহত হন। হামলার শিকার সবাই মায়া চৌধুরীর অনুসারী কর্মী-সমর্থক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিএনপি নেতা কর্তৃক হত‍্যার হুমকির প্রতিবাদে মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ গত শনিবার (১৭ জুন) বিকেলে মাথাভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। সমাবেশের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) বীর বিক্রম। ওই সমাবেশে মিছিল নিয়ে আসার পথে বাহাদুরপুর চরে মিছিলকারীদের উপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করে কাজী মিজান গ্রুপের লোকজন।

নিহতের ভাই আমির হোসেন কালু বলেন, আমার ভাই মায়া চৌধুরীর কর্মী হওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যান বালুদস্যু কাজী মিজানের হুকুমে কাজী মতিন ও কাজী হাবিব তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, কাজী মিজানের কর্মীরা মায়া চৌধুরীর সমাবেশে আসার পথে বাধা প্রদান করে ও আমার ভাইসহ মিছিলকারীদের উপর প্রকাশ‍্যে গুলি চালায়। এতে আমার ভাই মোবারক হোসেন বাবুসহ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মোবারক হোসেন বাবুকে মৃত ঘোষণা করেন।

মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ঘটনার আগের দিন কাজী মিজানসহ অন্য আসামীরা স্থানীয় বাবুল বেপারীর ঘরে বসে সমাবেশ বানচালের সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনার সময় কাজী মিজানুর রহমানের হুকুমে তার ভাই কাজী আব্দুল মতিন শর্টগান দিয়ে মোবারক হোসেন বাবুকে গুলি করে। এরপর কাজী হাবিবুর রহমানও শর্টগান দিয়ে মোবারক হোসেন বাবুকে গুলি করে। আসামীরা তাদের হাতে থাকা শর্টগান দিয়ে অন্যান্য নেতা-কর্মী-সমর্থকদেরও এলোপাথারি গুলি করে।

মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. মোঃ হাসিবুল ইসলাম জানান, আহত অবস্থায় মোবারক হোসেন বাবুসহ আরো ৪জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসে স্থানীয়রা। মোবারক হোসেন বাবু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। তার শরীরে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো সব গুলির চিহ্ন। বাকীদের মধ্যে দুইজনকে ঢাকায় ও অপরদেরকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

মতলব উত্তর থানার ওসি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, মায়া চৌধুরীর প্রোগ্রামে কর্মীরা মোহনপুর আসার পথে বাহাদুরপুরে রাজ্জাক প্রধানীয়ার নেতৃত্বে কাজী মিজানের লোকজন হামলা করে। এতে মায়া চৌধুরীর কর্মী মোবারক হোসেন বাবু নিহত হন। রাজ্জাক প্রধানীয়ার মেয়ের জামাই মুসাকে ঘটনার পরপর আটক করা হয়েছে। নিহত ও আহতরা শরীরে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭জন আসামী গ্রেফতার হয়েছেন।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, মতলব উত্তরের মোহনপুরে মোবারক হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার ১নং আসামী কাজী মিজানুর রহমানকে আটক করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৭জনকে আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, কাজী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো তিনি ঘটনার আগের দিন যারা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে তাদের বাড়িতে মিটিং করেছেন। পরদিনের ঘটনার প্ল্যান তার উপস্থিতিতে হয়।

Exit mobile version