Site icon Chandpur Probaha | চাঁদপুর প্রবাহ

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার

অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রোগীর স্বজনদের মধ্যে টানাহেঁচড়া : চাহিদার অর্ধেক অক্সিজেনও সরবরাহ পাচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ

রহিম বাদশা :
যেই অক্সিজেন সেবার জন্য করোনায় আক্রান্ত জটিল রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হন সেই অক্সিজেনের জন্য হাহাকার চলছে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল (সদর) হাসপাতালে। অথচ এটি চাঁদপুর জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা। অস্বাভাবিক হারে রোগী বেড়ে যাওয়ায় জেলার প্রধান এই চিকিৎসা কেন্দ্রে অক্সিজেন সংকট এখন চরমে। চাহিদার অর্ধেক অক্সিজেনও সরবরাহ পাচ্ছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় রোগী ও তাদের স্বজনদের পাশাপাশি হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা পর্যন্ত অসহায় হয়ে পড়েছেন।

বুধবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে অক্সিজেন সমস্যায় সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগীর স্বজনরা জানান, মূলত অক্সিজেন কমে যাওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শে তারা রোগী নিয়ে সদর হাসপাতালে আসেন। সিট কিংবা ফ্লোরে জায়গা পেলেও অক্সিজেন পাওয়া ভাগ্যের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ভর্তির ৪/৫ ঘন্টা পরও একটু অক্সিজেন পাওয়া যাচ্ছে না।

তারা আরো জানান, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে দেখা মিলছে না অক্সিজেন সিলিন্ডারেরও। হাসপাতালের স্টাফরা এক বা একাধিক অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে প্রবেশ করলে রোগীর স্বজনরা সেসব সিলিন্ডারর নিয়ে কাড়াকাড়ি বা টানাহেঁচড়া শুরু করেন। এ নিয়ে স্বজনদের মধ্যে এক ধরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতা, উদ্বেগ-উকণ্ঠা, হতাশা, ক্ষোভ, অসন্তোষ দেখা দিচ্ছে। অক্সিজেন সাপোর্ট না পেয়ে গত কয়েক দিনে বেশ ক’জন রোগী মারা গেছেন বলেও ভুক্তভোগী স্বজনরা জানান।

তীব্র অক্সিজেন সংকটের কথা স্বীকার করে সদর হাসপাতালের করোনা বিষয়ক ফোকালপার্সন ডা. সুজাউদ্দৌলা রুবেল বুধবার রাতে চাঁদপুর প্রবাহকে বলেন, মাত্রাতিরিক্ত রোগী বেড়ে যাওয়ায় এবং ভর্তিকৃত প্রায় সবার অক্সিজেন প্রয়োজন হওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে আমাদের। গত ৩/৪ দিন ধরে এমন জটিল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। চাহিদা অর্ধেক অক্সিজেনও সরবরাহ পাচ্ছি না আমরা। তাই সব রোগীকে অক্সিজেন সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, এখন যে পরিমাণ রোগী হাসপাতালে ভর্তি আছে তাতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০ লিটার (২ লিটারের ২০০টি ও ২৫ লিটারের ৮টি) অক্সিজেন প্রয়োজন। সেখানে বুধবার আমরা আবুল খায়ের গ্রুপ থেকে ১১০ লিটার এবং কুমিল্লা থেকে সরকারিভাবে ৬০ লিটার অক্সিজেন পেয়েছি। বহু চেষ্টা-তদ্বির করে বেশি মাত্রায় অক্সিজেন আনার চেষ্টা করছি আমরা। অন্য জেলার চেয়ে আমরা বেশি অক্সিজেন পেলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। অন্যদিকে আবুল খায়ের গ্রুপ প্রচুর অক্সিজেন বরাদ্দ দিয়ে রাখলেও ছোট ছোট সিলিন্ডারে এগুলো রিফিল করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। তাই সমস্যা থেকেই যাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, চাঁদপুর সদর হাসপাতালে মাত্র ৩০ বেডে হাই ফ্লো অক্সিজেন সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি বেডের অক্সিজেন সার্ভিস বিকল। অক্সিজেন কনসেনটেটর মেশিন আছে ২৪টি। অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ১৮০টি কিন্তু মিটার আছে মাত্র ৬০টি। অথচ বুধবার বেলা ৩টা পর্যন্ত একদিনেই আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি ছিলেন ১৬১জন।

ডা. রুবেল আশা প্রকাশ করে বলেন, চাঁদপুর সদর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বসানো লিকুইড অক্সিজেন প্লান্ট চালু হলেই কেবল অক্সিজেন সমস্যার সমাধান সম্ভব। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বুধবার আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন আগামী ৪ দিনের মধ্যে প্লান্ট চালু করবেন। এটি চালু হলে ২০০ রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। অক্সিজেন প্লান্ট চালুর আশায় আমরা এখন প্রহর গুণছি।

Exit mobile version