Site icon Chandpur Probaha | চাঁদপুর প্রবাহ

বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা আয়োজিত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

পৃথিবী প্রতিযোগিতার পৃথিবী হয়ে গেছে : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

ঐক্যের অভাবে আমাদের সমাজ এগুতে পারছে না : ড. মো. সবুর খান

শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় যে ঐক্য ছিল, সেই ঐক্য দেশের রাজনীতিবিদরা ‘হারিয়ে ফেলছেন’ বলে মনে করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা আয়োজিত ঢাকা বিভাগের জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এত বড় একটা অভ্যুত্থানের পরে এত বড় একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে দেশটাকে আবার সুন্দর করে গড়ে তুলবার। কিন্তু আমরা চারদিকে দেখছি যে, আমাদের রাজনীতিবিদরা ঐক্য হারিয়ে ফেলছেন, অনেককে চলে যাচ্ছেন। চারদিকে দেখছি একটা অনৈক্যের সুর। তখন আমরা অনেকেই হতাশ হচ্ছি।

এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা দিতে মাসিক ম্যাগাজিন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমা’র উদ্যোগে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে এই অনুষ্ঠান হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন বিএনপি মহাসচিব।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকে পড়ে শুনিয়ে শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ তোমাকে ডাকছে। আজকে তোমরা যারা যৌবনে পা দিচ্ছ, নতুন পৃথিবীতে পা দিচ্ছ, সেই পৃথিবী তোমাদের ডাকছে। যে কথাটা ডক্টর সুবর খান বলেছেন যে, নিজেকে তৈরি করতে হবে পৃথিবীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে।

বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরার সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মোবারক হোসেনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, বিএনপির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিক্রমার প্রধান সম্পাদক হারুন অর রশিদ, শিক্ষাবিদ এম এ সাজ্জাদ, জমিরুল আকতার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের আহŸায়ক কবীর হোসেন, সদস্য সচিব কাজী শওকত হোসেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের ঢাকা মহানগর উত্তরের অধ্যাপক সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, মুন্সিগঞ্জ বিএনপির সদস্য মোশাররফ হোসেনসহ কৃতি শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে ড. মো. সবুর খান তরুণদের ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশে আজ ঐক্যের বড় অভাব। এই ঐক্যের অভাবে আমাদের সমাজ এগুতে পারছে না। পরস্পরের সাথে বন্ধুত্ব দৃঢ় করার আহ্বান জানাই। তিনি শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখীতা পরিহার করে বিসিএস হওয়ার প্রবনতা বাদ দয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার আহ্বান জানান। কারণ একজন উদ্যোক্তা শুধু নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ হন না, পাশপাশি তিনি অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরী করেন। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে ৫০০ এর উপর কর্মকর্তা রয়েছেন যারা তার স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু-বান্ধব।

তিনি শিক্ষার্থীদের সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারে কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দেন। বিশ্বজগতকে আপন হাতের মুঠোয় আনতে ও বহির্বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে কমিউনিকেশন দক্ষতা বৃদ্ধির সাথে সৃজনশীলতার মাধ্যমে ক্যারিয়ার ফোকাস এবং জীবনের লক্ষ্য এখন থেকেই নির্ধারণে সচেষ্ট হওয়ার আহ্বান জানান।

মির্জা ফখরুল আরো বলেন,পৃথিবী প্রতিযোগিতার পৃথিবী হয়ে গেছে। তুমি যদি টিকতে না পার, তুমি নিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। সেই জায়গায় তোমাকে পৌঁছাতে হবে। তারপরে তোমাকে তৈরি হতে হবে। ‘শিক্ষার বর্তমান অবস্থার জন্য রাজনীতিবিদ-আমলারাই দায়ী’।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সেইরকম তো নেই, বরং অত্যন্ত নি¤œমানের। এর জন্য দায়ী রাজনীতিবিদরাই, এর জন্য দায়ী আমরাই, এর জন্য দায়ী আমাদের আমলাতন্ত্র।

“এখানে শিক্ষার উপরে খুব কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা বিএ পাস করি, এমএ পাস করি। চাঁদপুরের গ্রাম থেকে অথবা আমার ঠাকুরগাঁওয়ের গ্রাম থেকে, সে ঘুরে বেড়ায় কোনো কাজ পায় না। কারণ বিএ পাস এমএ পাসকে চাকরি দিতে পারেন না।”

“কিন্তু সে যদি বিএসসি পাস করত, অথবা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে একটা ডিপ্লোমা নিতে পারত ইলেকট্রিসিটির উপরে অথবা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উপরে অথবা অন্যান্য বিষয়ের উপরে, তাহলে কিন্তু তার চাকরি কেউ আটকাতে পারত না। এই যে নীতির ব্যাপারটা, এখানেই রাজনীতিবিদদের ব্যর্থতা।”

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রসঙ্গ ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের স্যাররা আন্দোলন করছেন, রাস্তায় আছেন শিক্ষকদের বেতনের জন্য। এটা তো অনেক ভালো হতে পারত যদি আমরা পুরোপুরি এটাকে পরিবর্তন করে শুধুমাত্র অতি মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চশিক্ষা এবং আমাদের বেশিরভাগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ভোকেশনাল অ্যান্ড টেকনিক্যাল ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে পারতাম।

“আজকে কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা নাই, তার কোনো ইনস্টিটিউট নাই। ভোকেশনাল সেন্টারগুলো নাই। আমরা এগুলো তৈরি করি না। আমরা বিএ পাস, এমএ তৈরি করছি। তাহলে এই তরুণরা বিকশিত হবে কীভাবে?” মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য কারিগরি শিক্ষার ওপরে।

Exit mobile version