Site icon Chandpur Probaha | চাঁদপুর প্রবাহ

মাথা গুজার আশ্রয় চান অসহায় রাবেয়া

কবির হোসেন মিজি :

‘আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও,
রহিমন্দীর ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও।
বাড়ি তো নয় পাখির বাসা-ভেন্না পাতার ছানি,
একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি।
একটুখানি হওয়া দিলেই ঘর নড়বড় করে,
তারি তলে আসমানীরা থাকে বছর ভরে।’

পল্লী কবি জসীম উদ্দিনের এই বিখ্যাত কবিতার কথার মতোই যেন বাস্তব আসমানীর দেখা মিলেছে। আসমানী কবিতার মতোই ৪ ছেলে মেয়ে এবং বৃদ্ধা শাশুড়ী ও মাকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন অসহায় বিধবা রাবেয়া বেগম। পাখির বাসার মতো ছোট্ট একটি কক্ষে বৃদ্ধা মা, শাশুড়ি এবং ৪জন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে জুবুথুবুভাবে বসবাস করে আসছেন। তার কোন অবলম্বন না থাকায় অসহায় রাবেয়া বেগম এবং তার বৃদ্ধা মা বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে কোন রকম দিন পার করছেন। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে দিন কাটলেও রাতে নিদ্রাকালে একটিমাত্র কক্ষেই তাদের সবাইকে জড়োসরো হয়ে রাত পার করতে হয়। জীবন সংগ্রামে লড়াই করে বেঁচে থাকা এই অভাগা, এতিম, অসহায় রাবেয়ার দেখা মিলেছে চাঁদপুর শহরের নাজিরপাড়া এলাকায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নাজির পাড়া এলকার সিরাজ পেশকারের বাসা সংলগ্ন বাবা এবং স্বামী হারা রাবেয়া বেগম ছোট্ট একটি টিনের ঘর ভাড়া নিয়ে থাকেন। ওই একটিমাত্র কক্ষেই বৃদ্ধা মা শাশুড়ি এবং চার ছেলে সন্তান নিয়ে বছরের পর বছর পার করছেন অসহায় রাবেয়া বেগম। বৃদ্ধা মা এবং সে নিজে শহরের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। একদিকে সংসার অন্যদিকে বাসা ভাড়া মেটাতে নিজেদের কাজের টাকায় তা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হয়। তাই কাজের পাশাপাশি তার বৃদ্ধা শাশুড়ি ভিক্ষাবৃত্তিও করে পুত্রবধূকে সহযোগিতা করে থাকেন।

অসহায় রাবেয়া বেগম দু’চোখের জল ছেড়ে দিয়ে কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার বাবা এবং স্বামী কেউই নেই। আমাকে সহযোগিতা করার মত আমার কোন ভাইও নেই। স্বামীকে হারানোর পর থেকে আমি দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আমার বৃদ্ধা মা, শাশুড়ি এবং ৪ ছেলে মেয়েকে নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। আমার বৃদ্ধা মা এবং আমি নিজে বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে প্রতিদিনের খাবার জুগিয়ে কোনো রকম দিন পার করছি। তার উপর আবার প্রতি মাসে ঘর ভাড়া যোগাতে না পারায় আমার শাশুড়ি মা ভিক্ষাবৃত্তিও করে থাকেন।

আমার নিজস্ব কোনো ঘরবাড়ি না থাকায় এই একটিমাত্র ছোট্ট রুমে চার ছেলে মেয়ে এবং বৃদ্ধা মা ও শাশুড়িকে নিয়ে আমি খুবই কষ্টে দিনযাপন করছি। এই ছোট্ট একটি রুমে এতগুলো মানুষ শুইতে এবং বসতে খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমার এই কষ্ট উপরে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই দেখার নেই। তাই সরকার এবং প্রশাসনের কাছে আমার আবেদন, আমাকে একটু মাথা গুজার আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিলে আমি এই দুর্বিসহ জীবন থেকে মুক্তি পাবো। একটু আশ্রয়ের স্থলে চার ছেলে সন্তান এবং বৃদ্ধা মা ও শাশুড়িকে নিয়ে জীবনের বাকি দিনগুলো একটু শান্তি মতো পার করতে পারবো। প্রশাসনের কাছে আমি প্রতিদিনের আহার চাই না। আমি আমার এই দুঃখিনি পরিবারকে নিয়ে শুধুমাত্র একটু মাথা গোঁজার আশ্রয় চাই।

Exit mobile version