শরীফুল ইসলাম :
চাঁদপুর শহরে মরহুম আবদুল করিম পাটওয়ারী সড়ক (কুমিল্লা রোড) এবং পুরাণবাজার থেকে দোকানঘর পর্যন্ত সড়ক পুনঃনির্মাণ কাজে নিম্নমানের ইট, বালি ও অন্যান্য সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে শঙ্কা দেখা দিয়েছে পরবর্তী উপকরণের মান নিয়েও। এ নিয়ে জনমনে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কঠোরভাবে কাজ তদারকি করার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন পৌরবাসী।
চাঁদপুর পৌরসভা ‘ক’ শ্রেণির। দীর্ঘ বছর শহরের বেশ কয়েকটি সড়ক মেরামত করা হলেও মানসম্মত হয়নি। যার ফলে এসব সড়কের বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়। গত এক বছর পুরো শহরজুড়ে সড়ক এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার সংস্কার কাজ শুরু হলেও কাজের গতি ছিল মন্থর। সম্প্রতি পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগের পর শুরু হয়েছে থেমে যাওয়া সড়কগুলোর নির্মাণ কাজ। কিন্তু এই কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পৌরবাসী। তারা শুরু হওয়া সড়ক নির্মাণ কাজের সঠিক মান বজায় রাখার দাবি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্ব) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত শহরের মরহুম আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়ক ও শহরের পুরাণবাজার থেকে দোকানঘর পর্যন্ত সড়কের নির্মাণ কাজ চলমান দেখা গেছে। এসব সড়কে নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত কংক্রিটসহ নির্মাণ সামগ্রীগুলো নিম্নমানের বলে অনেকেই অভিযোগ করেন।
শহরের কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা জুবায়ের আলম বলেন, চাঁদপুর শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হচ্ছে বাসস্ট্যান্ড থেকে শহরের কালিবাড়ী পর্যন্ত। এই সড়কের কাজ দীর্ঘদিন পরে শুরু হয়েছে। তবে নির্মাণ কাজে যেসব সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে তা খুবই নিম্নমানের। আমার দাবি হচ্ছে এই সড়কের নির্মাণ কাজ যেন মানসম্মতভাবে করা হয়।
এদিকে পুরানবাজার লোহারপুল থেকে দোকানঘর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয় আগে। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকায় ওই কাজটি অনেকটা ব্যহত হয়েছে। টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ওই সড়কের কাজেও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার হয়েছে তা পরিলক্ষিত হয়।
অপরদিকে চাঁদপুর পৌরসভার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক নিউ ট্রাক রোড। এই সড়কের বেহাল অবস্থা নিয়ে একাধিক সরেজমিন প্রতিবেদন হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এটির সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে গত এক বছর পূর্বে। কিন্তু সড়ক প্রশস্তকরণ ও নতুন করে ড্রেন নির্মাণ করায় কাজটি বন্ধ হয়ে থাকে। যার ফলে এই সড়কটি এখন চলাচলের অযোগ্য। নিয়মিত দুর্ভোগে আছেন এই সড়কের বাসিন্দা ও যানবাহন চালকরা।
নিউ ট্রাক রোড বটতলা এলাকার বাসিন্দা নুরুননবী বলেন, শহরের অনেক সড়কের সড়কের অবস্থাই খারাপ। বিশেষ করে নিউ ট্রাকরোডের অবস্থাই আরও খারাপ। এই সড়ক কয়েকবার সংস্কাল হলেও বছর না পার হতেই পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। এই সড়কের করুন অবস্থার কারণে অন্য যায়গা থেকে যানবাহনও আসতে চায় না। আশাকরি এবারের কাজের মান বজায় রাখা হবে।
চাঁদপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এ.এইচ.এম শামসুদ্দোহা জানান, শহরের তালতলা সড়ক বিভাগের রাস্তার শেষ সীমানা থেকে ঘোষপাড়া পর্যন্ত রাস্তার কাজ চলমান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর ট্রাক রোডের কাজের সিদ্ধান্ত হয়েছিল শুধুমাত্র কার্পেটিং। কিন্তু ইতোমধ্যে বিভিন্ন অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ওই কাজ পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে করা হবে। খুব শিগগিরই এই সড়কের কাজ শুরু হবে।
তিনি কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার সম্পর্কে বলেন, কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বললে মানতে নারাজ। আমরা নিজেরাই ভাটাতে গিয়ে ইট ক্রয় করে এবং ল্যাবে পরীক্ষা করে কাজ করছি। এই কাজের মান সঠিক না হলে কর্তৃপক্ষ বিল দিবে না। আর কার্পেটিংয়ের কাজ বৃষ্টির মৌসুমে করা যায় না। যে কারণে আগামী নভেম্বর মাস থেকে কার্পেটিং কাজ শুরু হবে।
চাঁদপুর পৌর প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) একরামুল ছিদ্দিক বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই শহরের করিম পাটওয়ারী সড়ক, দোকানঘর থেকে লোহারপুল পর্যন্ত এবং নিউ ট্রাক রোডের কাজ শুরু করেছি। কুমিল্লা রোডের কাজ শুরু হয়েছে। মেকাডম চলছে। এক মাস পরে কার্পেটিং শুরু হবে। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ট্রাক রোডের কাজ শুরু হবে। এছাড়া শহেরর কিছু কিছু সড়কে গর্ত হয়ে আছে। সেগুলোর জন্য নির্মাণ সামগ্রী ক্রয় করা হয়েছে এবং মেরামত করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এসব কাজের জন্য প্রত্যেকটি নির্মাণ সামগ্রী সততার সাথে ক্রয় করা হয়েছে। কাজের গুণগত মান যাতে ভালো থাকে আমি নিজেসহ প্রকৌশলীকে নিয়ে কাজগুলো তত্ত্বাবধান করছি।