শরীফুল ইসলাম :
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহানের চাঞ্চল্যকর ও ক্লুলেস হত্যা মামলার কিশোর অপারাধীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বুধবার দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এই মামলার ঘটনায় ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার সংক্রান্তে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ। আটককৃত কিশোর ফরিদগঞ্জ উপজেলার রুদ্রগাঁও তালুকদার বাড়ির শরীফ তালুকদারের ছেলে মো. আবদুল আহাদ (১৭)। সে শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহানের গৃহ শিক্ষক ছিলেন।
পুলিশ জানায়, গত ১৫ মে সন্ধ্যা অনুমানিক ৭টার সময় ভিকটিম আদিল মোহাম্মদ সোহান (৮) বাড়ির পাশের মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ শেষে তার নিজ বাড়িতে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। পরে তার পিতা আনোয়ার হোসেন ফরিদগঞ্ছ থানায় একটি নিখোঁজ জিডি করে।
পুলিশ তদন্তকালীন সময় গত ১৯ মে সকাল সাড়ে ৯টায় বাদীর চাচি রেনু বেগম গরুর ঘাসের চাষকৃত নাল জমির পূর্ব পাশে কাঁচা গাব পাড়ার জন্য যায়। সেখানে দুর্গন্ধ ও মাছির উপদ্রব দেখতে পেয়ে সবাইকে অবহিত করেন। পরে প্রতিবেশীসহ অন্যান্য লোকজন ঘটনাস্থলে এসে মাটির নিচে চাপা দেওয়া একটি শিশুর হাত দেখতে পায়।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপ্স) পলাশ কান্তি নাথের নেতৃত্বে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জসহ পুলিশ সদস্যরা উপস্থি হয়ে শিশুটির মৃতদেহ উত্তোলন করে। তখন নিখোঁজ শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহানের বাবা-মা মৃতদেহটি তাদের সন্তানের বলে শনাক্ত করে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ জানান, পুলিশের সমন্বিত একটি টিম চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটির রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে। প্রাথমিক তদন্তকালে তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভিকটিমের গৃহ শিক্ষক মো. আবদুল আহাদ (১৭ বছর ৬ মাস) কে গ্রেফতারপূর্বক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে হত্যার কথা শিকার করে।
গৃহ শিক্ষক আবদুল আহাদের পরিবার অভাবী পরিবার ছিল। শিশু সোহানের পরিবারের কাছে ২৫-২৬ হাজার টাকা জমানো ছিল। এই বিষয়টি আহাদ জানতো। মূলত ভারতের সিআইডি থেকে মুক্তিপনের টাকা জন্য সোহানকে অজ্ঞান করে লুকিয়ে রাখে আহাদ। কিন্তু সে সিআইডতে দেখেছে কাউকে ৪০ সেকেন্ড নাকে চেপে ধরে রাখলে মরবে না কিন্তু সে অজ্ঞান থাকবে। তবে দুর্ভাগ্যবশত টাইম কিংবা ধরতে সমস্যা হওয়ায় শিশু সোহান তাৎক্ষণিক সেখানে মারা যায়।
মিলন মাহমুদ জানান, শিশু সোহানকে হত্যার পর সে নিজেও সবার সাথে খোঁজাখুঁজি করে। কিন্তু সে হত্যা করে যেখানে রেখে এসেছে, সেখানে না গিয়ে অন্যত্র খোঁজাখুঁজি করে। ১৯ মে যখন লাশ পাওয়া গেল তখনও সে কি হত্যা করতে পারে, এমন তথ্য আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। খুন করার পর সোহানের মাকে ফোন করেছিল। তার ছেলেকে পেতে হলে টাকা দিতে হবে। কিন্তু সেই ফোনটি বাড়িতে রেখে যায়। খোঁজাখুঁজি কারণে কলটি রিসিভ হয়নি এবং টাকা চাওয়ার বিষয়টি বলতে পারেনি।
পুলিশ সুপার আরো জানান, সোহানের লাশ কোদাল দিয়ে মাটি খুড়ে মাটিতে পুঁতে রাখে গৃহ শিক্ষক আহাদ। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে আহাদের মায়ের ফোন ব্যবহার করে অন্য একটি সিম ব্যবহার করার সূত্র ধরে। এছাড়া তার আচার-আচরণও সন্দেহজনক হয়েছিল। আমাদের প্রথম থেকেই ধারণা হয়েছিল, হত্যার পিছনে দূরের কোন ব্যক্তির হাত নেই। এখানে কাছের কেউ হত্যার সাথে জড়িত।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এ্যান্ড অপ্স) পলাশ কান্তি নাথ, ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মান্নান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি এএইচএম আহসান উল্লাহ প্রমুখ।