চাঁদপুরের মতলব উত্তরে ডাকাত আতঙ্কে রাত জেগে পাহারা : দেশীয় অস্ত্রসহ ২ ডাকাত আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক :
ডাকাত আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে মতলব উত্তর উপজেলাবাসী। নিজেদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ লাঠি, টর্চলাইট, বাঁশি নিয়ে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। রাতে মসজিদে মসজিদে সচেতনতামূলক মাইকিং হচ্ছে। শুক্রবার রাতে গজরা ইউনিয়নের ডুবগী এলাকা থেকে দেশীয় অস্ত্রসহ ২ ডাকাত সদস্যকে আটক করেছে জনতা।

আটককৃতরা হলো মোঃ রাজিব হোসেন (৩৪) ও মোঃ রিপন (৩৫)। মো. রাজিব হোসেন ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের মোঃ শফিকুল আলমের ছেলে ও মোঃ রিপন মতলব উত্তর উপজেলার গজরা ইউনিয়নের ডুবগী গ্রামের মৃত হরমুজ আলী কুট্টির ছেলে।

তাদের কাছ থেকে ১টি লোহার রড (লম্বায় ২ ফুট ১০ ইঞ্চি), ১টি রাম দা (লম্বায় বাটসহ ২ ফুট ১০ ইঞ্চি, যার এক পাশ ধারালো ও মাথা বাকা), ১টি লোহার হেমার (লম্বায় ১ ফুট ৭ ইঞ্চি, যার একপাশ ৫ ইঞ্চি চওড়া লোহার অংশ), ১টি লোহার কাটার (লম্বায় ২ ফুট ২ ইঞ্চি, যার এক পাশে গোলাকৃতি চওড়া ৭ ইঞ্চি), ১টি প্লাস্টিকের বাটযুক্ত ছুরি (বাটসহ ১০ ইঞ্চি লম্বা) উদ্ধার করা হয়েছে।

গজরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ বেলাল হোসেন মেম্বার বাদী হয়ে থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেন আটককৃতদের বিরুদ্ধে। আটককৃত মো. রাজিব হোসেন ও মো. রিপনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা (এফআইআর নং ৪, তারিখ- ১৭ আগস্ট, ২০২৪; ধারা- ৩৯৯/৪০২ পেনাল কোড) হয়েছে বলে জানান মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন।

জানা যায়, শুক্রবার রাতে হঠাৎ ডাকাত আতঙ্কের কথা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বাসিন্দারা রাতে পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। তারা রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত জেগে থাকছে। মতলব উত্তরে ডাকাতি রোধে মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনীও। রাত ৮টার পর সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহŸান জানিয়েছে তারা। উপজেলায় সেনা টহল বাড়ানো হয়েছে। মতলব উত্তর থানা পুলিশও টহল জোরদার করেছে।

শুক্রবার রাতে মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভা, মোহনপুর, ফতেপুর পশ্চিম ও পূর্ব, ষাটনল, সাদুল্যাপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, যুবকরা তাদের প্রতিবেশীসহ নিজের বাড়ির নিরাপত্তার জন্য রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। তারা জানান, চারদিকে বিচ্ছিন্ন ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। তাই নিজেদের বাড়ি-ঘর রক্ষা করতে তারা নিজেরাই পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। পাহারা দেওয়ার জন্য তারা গ্রæপ তৈরি করেছেন। একেকটি গ্রæপে রয়েছেন ২০ থেকে ২৫জন। কোথাও কোনো চিৎকার চেঁচামেচি শুনলে কিংবা এলাকায় অপরিচিত লোক দেখলে তারা সবাই সেদিকে লক্ষ্য রাখছেন।

এ ব্যাপারে ঠাকুরচর গ্রামের যুবক আঃ মান্নান খান জানান, তাদের এলাকার বাড়ি-ঘরসহ পরিবারের লোকজনের সুরক্ষার জন্য তারা নিজেরাই পাহারার ব্যবস্থা করেছেন। রাত ১১টার পর এলাকায় অপরিচিত লোক এলে তার পরিচয় নিশ্চিত করে তাকে এলাকায় ঢুকতে বা বের হতে দেওয়া হচ্ছে।

ষাটনল এলাকার বাসিন্দা মাইন উদ্দিন জানান, তাদের এলাকার বাড়ি-ঘর রক্ষা করার জন্য তারা একটানা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। ডাকাতির চেয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ছে বেশি। তাই এলাকার লোকজনের মাঝে আতঙ্ক রয়েছে।

মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন বলেন, উপজেলায় নজরদারিসহ গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেলে পুলিশ ছুটে যাচ্ছেন। আইন অমান্যকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের খুঁজে বের করে আইনের মুখোমুখি করা হবে। আটককৃত ২জনের বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া হয়েছে। যে কোন ধরনের অপরাধ নির্মূলে থানা পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে।

শেয়ার করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)