ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের যাকাতভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থাপনায় অনন্য দৃষ্টান্ত ‘জীবিকা’ প্রকল্প

সাদ্দাম হোসেন :
চাঁদপুরে যাকাতভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থাপনার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ‌’জীবিকা’ প্রকল্প। শুক্রবার (২২ আগস্ট) সকালে চাঁদপুরের বাবুরহাটে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজের ইউনুস খান মিলনায়তনে প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ। তিনি বক্তব্যে বলেন, জীবিকা প্রকল্প দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক উন্নয়নের এক অনন্য মডেল। এটি প্রমাণ করে যে, সঠিক পরিকল্পনা ও যাকাতের কার্যকর ব্যবস্থাপনায় সুবিধাভোগীরা কেবল আর্থিক সহায়তা পায় না বরং আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা এবং সম্মানজনক জীবনের সুযোগও পায়। এই প্রকল্প চাঁদপুরের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যা সমগ্র দেশের জন্য রোল মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে।

এই প্রকল্প সমগ্র দেশের জন্য রোল মডেল হিসেবে কাজ করতে পারে : সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ।

তিনি আরো বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই জীবিকা, নারীর ক্ষমতায়ন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন এসেছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এ ধরণের উদ্যোগ সমাজের মর্যাদা ও স্বনির্ভরতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

সভাপতির বক্তব্যে ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান বলেন, দারিদ্র্যতা কোনো অভিশাপ নয়, এটি পরিবর্তনযোগ্য অবস্থা। ইসলামী অর্থনীতির সুশাসন ও যাকাতের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে সমাজের টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। জীবিকা প্রকল্প সেই সম্ভাবনার আলোকবর্তিকা।

এই উদ্যোগ স্বাবলম্বী ও সম্মানজনক জীবনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে : ড. মো. সবুর খান

তিনি আরও উল্লেখ করেন, জীবিকা প্রকল্প শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, এটি এক আত্মিক জাগরণ, নৈতিক পরিবর্তন ও সম্মানজনক জীবনের পথে নতুন যাত্রা। সুবিধাভোগীদের আস্থা, দক্ষতা ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনা প্রকল্পের মূল লক্ষ্য। এই উদ্যোগ সমাজে স্বাবলম্বী ও সম্মানজনক জীবনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

কর্তৃপক্ষ জানায়, ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত জীবিকা প্রকল্প যাকাত ভিত্তিক অর্থব্যবস্থার মাধ্যমে মানবিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই জীবিকার এক উজ্জ্বল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বেকারত্ব হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সামাজিক কল্যাণে প্রকল্পটি এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।

আরো জানা যায়, ২০২৫ সালের মার্চ মাসে যাত্রা শুরু করা এই প্রকল্প চাঁদপুর সদর উপজেলার কল্যাণপুর, আশিকাটি, মৈশাদি, তরপুরচন্ডী ইউনিয়ন এবং চাঁদপুর পৌরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় ২ হাজার ৫শ’ পরিবারের ১২ হাজার সুবিধাভোগীকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। যাকাত ব্যবস্থাপনার সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে জীবিকা প্রকল্প ইতোমধ্যে সমাজে দীর্ঘস্থায়ী ও ইতিবাচক পরিবর্তনের অনুকরণীয় উদাহরণ সৃষ্টি করেছে।

প্রকল্পটির মূল দর্শন হলো- “যাকাত দান নয়, এটি অধিকার” এ বিশ্বাসের ভিত্তিতেই সুদমুক্ত অর্থায়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে স্বাবলম্বী করা হচ্ছে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ বাবুরহাট শাখার রসায়ন বিভাগের প্রভাষক আব্দুল্লাহ আল-আমিনের সঞ্চালনায় আলোচনার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. আসাদুল্লাহ খান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি রহিম বাদশা, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বিল্লাল হোসেন খন্দকার।

এছাড়া প্রকল্পের সদস্যদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন মায়ের আঁচল দলের সভাপতি কুলসুমা বেগম, পাহাড়িকা দলের সদস্য মো. সিদ্দিকুর রহমান মাল, নবদিগন্ত দলের ক্যাশিয়ার সাহিদা বেগম, স্কলারশিপপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী কাজী আদনান।

শেয়ার করুন