জহিরুল ইসলাম জয় :
কুমিল্লার ঘটনার প্রতিবাদে ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে কয়েক হাজার মানুষের বিক্ষোভ হয়। একপর্যায়ে সেটি সহিংস রূপ নেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ শটগানের গুলি ছোড়ে। এতে পাঁচজনের প্রাণ যায়। তাঁরা সাধারণ ও গরিব ঘরের বলে জানা গেছে। পরিবারগুলোতে এখনো চলছে শোকের মাতম।
হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার রান্ধুনীমুড়া সেকান্দর ব্যাপারী বাড়ির কিশোর ইয়াছিন হোসেন হৃদয় (১৬) সেদিন নিহত হয়। জানতে চাইলে তার বাবা ফজলুল হক বলেন, ‘আমার ছেলে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তার সমবয়সীদের ডাকে বাজারে যায়। পরে সেখানে গোলাগুলির খবর শুনে বাড়ির সামনে যাই। হৃদয়ের কয়েকজন বন্ধু আমাকে মোবাইল ফোন ছবি দেখায়ে বলে হৃদয় গুরুতর আহত হয়। সে হাসপাতালে আছে। আমি দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আলীগঞ্জ হাসপাতালে রাত ৯টার দিকে গিয়ে দেখি ছেলের লাশ পড়ে আছে। পর দিন ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় পুলিশের মাধ্যমে লাশ বুঝে পাই। হৃদয়ের জন্য আমার হৃদয় ভেঙে যাচ্ছে। ঘটনার দিন আমরা একসঙ্গে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেছি। পরে কি না গিয়ে পেলাম তার লাশ।’
নিহত আরেকজন হলেন একই ওয়ার্ডের রান্ধুনীমুড়া আমিন মিয়া চেয়ারম্যান বাড়ির মো. শামীম হোসেন (১৮)। তিনি একজন কলা বিক্রেতা। ঘটনার দিন রাতে ব্যাংক এশিয়ার সামনে কলার গাড়ি পাওয়া যায়, কিন্তু শামীমকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে রাত ৩টার দিকে শামীমের লাশের খোঁজ পান।
শামীমের বাবা আব্বাস মিয়া বলেন, ‘চার ছেলের মধ্যে শামীম সবার ছোট। তাকে হারিয়ে আমার কলিজা পুড়ি গেছে।’ বড় ভাই আরিফ বলেন, ‘আমাদের এলাকার কমিশনার সাদেক মুন্সী ফোন করে বলেন শামীমের লাশ কুমিল্লা হাসপাতালে আছে। আমরা গিয়ে দেখি গুলিতে মাথা ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। পরদিন বিকেলে লাশ বাড়িতে আনা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রশাসনের কিংবা জনপ্রতিনিধিরা কেউ আজ ১৫ দিনের ওপরে হলো খবর নেননি।’
নিহত আরেকজন হলেন উপজেলার বড়কূল ইউনিয়নের উত্তর রায়চোঁ পান্না চৌধুরী বাড়ির আল আমিন (১৯)। তিনি চাঁদপুর পলিটেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর মা ছায়েরা বেগম বলেন, ‘ঘটনার দিন আমার ছেলে অ্যাসাইনমেন্টের কাগজ আনার জন্য বাজারে যায়। ঘটনাস্থল সে যাওয়ার পথে গুলি লেগে মারা যায়। আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। তার মধ্যে আল আমিন সবার ছোট। এর আগে আমার দুটি ছেলে ছোটবেলায় মারা যায়। আমার স্বামী রুহুল আমিন অসুস্থ। আমি নিজে সেলাইয়ের কাজ করে সংসারে সহযোগিতা করি। তারপরও সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছিলাম। ছেলে হারিয়ে আমার বুক খালি হয়ে গেছে।’
ঘটনার দিন নিহত অন্য দুজনের একজন হলেন নির্মাণশ্রমিক বাবলু (২৪)। বাড়ি রাজশাহী জেলায়। আরেকজন হলেন পানি সরবরাহের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক সাগর হোসেন (২৮)। তাঁর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। দুজনের বাড়ি দুই জেলায় হওয়ায় তাঁদের পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া সম্ভব হয়নি।
হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মো. মাঈনুদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নিহত পরিবারের মধ্যে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে।