চাঁদপুরের পৌনে ৫ হাজার জেলের চাল বরাদ্দ আসেনি : কম পেয়ে ক্ষুব্ধ জেলেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুরে মার্চ-এপ্রিল দু’মাস পদ্মা-মেঘনা নদীতে জাটকা সংরক্ষণের লক্ষ্যে অভয়াশ্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। এ সময়ে নদীতে সব ধরণের জাল ফেলা ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। সে কারণে এই দু’ মাসে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা (চাল)সহ বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে কয়েক হাজার জেলেকে চাল বরাদ্দ না দেওয়ায় এ নিয়ে চরম বিপাকে জনপ্রতিনিধিরা। সবাইকে চাল দিতে যেয়ে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম চাল দিয়ে সবাইকে তা দেওয়া হচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট জেলেরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ২১ হাজার ৫শ’ ৬৮জন। তন্মধ্যে ভিজিএফ-এর চাল বরাদ্দ এসেছে ১৬ হাজার ৮শ’ ৩জন জেলের জন্য। বাদ পড়েছেন ৪ হাজার ৭শ’ ৬৫জন জেলে। প্রতিবছর চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে এ সকল নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দের নিয়ম থাকলেও সবার জন্য বরাদ্দ না আসায় বিব্রত ইউপি চেয়ারম্যানরা।

এই অবস্থা বেশ ক’বছর ধরেই বিরাজমান রয়েছে। এ নিয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন, চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তরা বারবার পত্রের মাধ্যমে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে অবহিত করার পরও তার কোনো সুরাহা হচ্ছে না। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে সব জেলেকে চাল প্রদান করতে যেয়ে সবাইকে নির্ধারিত চালের চেয়ে কম দেওয়া হচ্ছে। আর এসব জটিলতার কারণে মাঠে-ময়দানে চাল বিতরণকালে চাঁদপুর সদর উপজেলার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নানা কথা, এমনকি চাল চুরির অপবাদও শুনতে হচ্ছে।

ইউপি চেয়ারম্যানরা জানান, সরকারিভাবে চাল বরাদ্দের পর খাদ্য গুদাম থেকে শুরু করে নিজ ইউনিয়নে আনা পর্যন্ত যৎসামান্য টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ থাকলেও খরচের ক্ষেত্রে যা অপ্রতুল। গুদাম থেকে চাল উত্তোলন থেকে শুরু করে চাল পরিবহন করে নিজ ইউনিয়নে আনা পর্যন্ত আমাদের বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে। নিবন্ধিত জেলের চেয়ে কম চাল বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে। প্রশাসনের সাথে পরামর্শ করে আমরা সবাইকে চাল দিতে হচ্ছে। এ কারণে নির্ধারিত পরিমানের চেয়ে কম চাল দিতে হচ্ছে। এটি নিয়ে আবার জেলেরা সন্তুষ্ট নয়। আমরা এর সমাধান চাই।

তারা জানান, ২০২০ সালে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, সচিব ও মেম্বারদের উপস্থিতিতে এক যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। ওই সভায় চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান, চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতেই চাঁদপুর সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের উপস্থিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণ একবাক্যে ভিজিএফ-এর চাল বিতরণ করবেন না বলে দাবি তুলেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ইউপি চেয়ারম্যানরা তাদের নিজ ইউনিয়নের চাল বিতরণের অভিজ্ঞতা ও অপদস্তের কথা জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন। চেয়ারম্যানরা তাদের বক্তব্যে আরো বলেন, নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা অনুপাতে চালের বরাদ্দ কখনো পাওয়া যায়নি। বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করতে যেয়ে আমাদেরকে নাজেহাল হতে হচ্ছে। এমনকি বিভিন্ন মিডিয়ায় চাল বিতরণের অনিয়মের কথা তুলে আমাদের অপদস্থ করছে।

তারা উদাহরণ টেনে বলেন, নিবন্ধিত ৪ হাজার জেলের মধ্যে ৩ হাজার জেলের অনুকূলে চাল বরাদ্দ পাওয়া যায়, অবশিষ্ট ১ হাজার নিবন্ধিত জেলেদের মাঝে আমরা চাল কোথা থেকে বিতরণ করবো। এমনকি কাকে রেখে, কাকে দেবো? এমন প্রশ্ন তুলে কথা বলেন। ওই সভায় চাঁদপুর সদর উপজেলার সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের বক্তব্য শোনার পর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, নিবন্ধিত সকল জেলে যাতে বরাদ্দকৃত চাল পায়, সে ব্যাপারটি সমন্বয় করতে হবে। প্রয়োজনে ৪০ কেজির স্থলে ৩০ কেজি অথবা তালিকা অনুযায়ী সমন্বয় করে বিতরণ করতে হবে। চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিটি ইউনিয়নে সমন্বয় করে চাল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৪ হাজার ৯শ’ ৭৮জন। নিবন্ধিত জেলের বাইরেও প্রায় ৫শ’ জেলে রয়েছে এ ইউনিয়নে। চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৩ হাজার ৬শ’ ৬০জন জেলের অনুকূলে। এ ইউনিয়নে নিবন্ধিত জেলের ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৩শ’ ১৮জন। ৪ হাজার ৯শ’ ৭৮ জন নিবন্ধিত জেলের পাশাপাশি আরো ৫শ’ জেলের তালিকা সমন্বয় করে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় ৩ দিন ধরে চাল বিতরণ করা হয়। ফলে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে বিব্রত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)