উদ্বোধনের তিন সপ্তাহেও বিদ্যুৎ-পানি নেই : নিন্মমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ : তদন্তের পরামর্শ স্থানীয় এমপির
মুজিববর্ষ উপলক্ষ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ভূমিহীন ও গৃহহীন ২০টি পরিবারকে জমিসহ ঘর বরাদ্দ প্রদান ও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের তিন সপ্তাহেও অধিকাংশ পরিবার এসব ঘরে উঠেনি। বিদ্যুৎ-পানির ব্যবস্থা না হওয়া, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তড়িঘড়ি করে নির্মাণ কাজ করা, রাস্তা, সীমানা দেওয়াল ও ঘরের সিলিংসহ কিছু কাজ শেষ না হওয়া এবং ভঙ্গুর যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে এখনো এসব ঘরের সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে না বরাদ্দপ্রাপ্তরা।
মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ে গত ২০ জুন ফরিদগঞ্জের ২০টি ঘর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হয়। ওইদিন সারাদেশের সাথে একযোগে ফরিদগঞ্জের এসব ঘর বিতরণও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ফরিদগঞ্জের ২০টি ঘরের মধ্যে ১৬নং রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জে ৭টি ও ১নং বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের বাগড়া বাজার সংলগ্ন বালুর মাঠে ১৩টি ঘর নির্মাণ করা হয়। উদ্বোধনের দিনেই উপজলা পরিষদ মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় আনুষ্ঠানিকতার বাইরে স্থানীয়ভাবে পৃথক অনুুষ্ঠান করে মনোনীত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাঝে জমির দলিল ও ঘরের চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
গত শুক্রবার (৯ জুলাই) সরেজমিন এই দু’টি আশ্রায়ণ প্রকল্পে যেয়ে মাত্র ২টি পরিবারের দেখা মিলেছে। বাগড়া বাজার সংলগ্ন আশ্রায়ণ প্রকল্পে ১৩টি ঘরের মধ্যে মাত্র একটিতে মনির হোসেন নামের একজনকে পাওয়া যায়। তিনি পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করেন। বাকী ঘরগুলো তালাবদ্ধ পড়ে আছে।
একমাত্র বাসিন্দা মনির হোসেন জানান, ঘরের কাগজপত্র ও চাবি বুঝিয়ে দেওয়া হলেও এখনো বসবাস উপযোগী হয়নি। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এখনো পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়নি। পানি ছাড়া কিভাবে বসবাস করা যায়- প্রশ্ন তার। তবে শুক্রবার সেখানে কর্মরত টিউবওয়েল শ্রমিকরা জানায়, টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে।
সাহেবগঞ্জের ৭টি ঘরের মধ্যে একমাত্র দেখা মিললো রহিমা খাতুনের। তাকে ঘরে পাওয়া গেলেও কোনো আসবাবপত্র দেখা যায়নি। তিনি জানান, বরাদ্দকৃত ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ করছেন তিনি। খুব সহসা পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস শুরু করবেন। তিনিও পানি ও বিদ্যুতের সমস্যার কথা জানান। ঘরগুলোর সিলিং স্থাপনের কাজ এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ঘরগুলো কতদিন টিকে আল্লাহ ভালো জানে।
এখানের বাকী ৬টি ঘর তালাবন্দী। এর মধ্যে একটি ঘরের টিনের চালা দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে মেঝ ভিজে আছে। সেই ঘরটির সামনে ‘মুজিববর্ষের উপহার’ লেখা সম্বলিত সাইনবোর্ডও নেই।
বাগড়া এলাকার কয়েকজন লোক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যে এলাকায় এই আশ্রায়ণ প্রকল্প করা হয়েছে তার পাশেই ডাকাতিয়া নদী। ফলে ভাঙনের ঝুঁকি আছে। অদূরে অবৈধ বালুর ব্যবসা। সেই বালু এখানে উড়ে আসে প্রতিনিয়ত। তাই এখানে বসবাস করা কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ। যাতায়াতের একমাত্র পথটিও কাঁচা ও ময়লা-আবর্জনায় ভরা। এখনো নির্মাণ করা হয়নি সীমানা/নিরাপত্তা দেওয়া। তাছাড়া যেসব ইট, বালি, সিমেন্ট, কাঠ ও টিন ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো অত্যন্ত নি¤œমানের।
সাহেবগঞ্জ এলাকার ক’জন লোক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখানে অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ হয়েছে। টিনের চাল দিয়ে পানি পড়ছে। চালের পানিইে গর্ত হয়ে গেছে ইট-বালি-সিমেন্টের তৈরী স্লাবগুলো। টিন ও কাঠগুলো অত্যন্ত কম দামের ও নিম্নমানের। এগুলো বেশি দিন টিকবে না।
এ ব্যাপারে ঘর নির্মাণ তদারকির দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলি হরি বলেন, দুইটি আশ্রায়ণ প্রকল্পেই বিদ্যুতের লাইন টানা আছে। আমি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে অনেক আগেই চিঠি দিয়েছি বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করার জন্য। এত দেরী কেন হচ্ছে তা খবর নিচ্ছি। পানির ব্যবস্থাও সহসা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। তবে কি কারণে ১৮টি পরিবার এখনো ঘরে উঠেনি তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে স্থানীয় এমপি মুহম্মদ শফিকুর রহমানের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত করতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়েছেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ এই উদ্যোগে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়ে থাকলে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমাকে স্থানীয় লোকজন অনেক কথা বলছেন। আশা করি, প্রশাসনিকভাবে তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা হবে।