শরীফুল ইসলাম :
ঐতিহ্য হারাতে বসেছে প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি পুরনো চাঁদপুর সদর উপজেলার সরফমালি লঞ্চঘাট। এক সময়ের জনবহুল লঞ্চঘাট এখন সুনসান নিরবতা। লঞ্চঘাটে পন্টুন আছে, নেই ওঠানামার সিঁড়ি। বহুবছর ধরে অকেজো অবস্থায় রয়েছে লঞ্চঘাটটি। নদীবেষ্টিত চাঁদপুর জেলার সাথে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার সাথে যোগাযোগের একমাত্র প্রধান পথ ছিল নৌপথ। সেই সময় থেকে চাঁদপুর সরফমালি লঞ্চঘাটের সুমান ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে। যাত্রী মুখরিত স্থানটি এখন জনশূণ্য অবস্থায় রয়েছে। আগের মত নেই মাঝি-মাল্লা আর দোকানপাট, নেই মানুষের কোলাহল।
দেশের অন্যতম নদীবন্দর চাঁদপুর জেলা। চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে বিভিন্ন জেলার হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষ যেনো নৌ পথে যাওয়াটা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। এক সময় ব্যবসা-বানিজ্যের জন্য নৌপথে যাতায়াত করতো ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সময়ের স্রোতে তাদের এখন আর নগরীতে যেতে হয়না। তাদের মালামাল এখন হাতের নাগালেই পৌঁছে যায়। সেই কারনে চাঁদপুর থেকে নারায়নগঞ্জের লঞ্চে তেমন কোন যাত্রীর দেখা মিলে না।
চাঁদপুর সরফমালি লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা সেলামত দেওয়ান বলেন, সফরমালি লঞ্চঘাট এখন শুধুই অতীত। এই লঞ্চঘাটে এখন আর কোন মানুষের কোলাহল নেই। বিলুপ্তির কারণ হিসাবে অনেকেই মনে করে। সড়ক পথে ব্যাপক উন্নয়ন এবং নৌপথগুলোতে নব্যতার সংকট। অন্যদিকে যাত্রী সংকটের কারনে লঞ্চ সরিয়ে নিচ্ছে মালিক পক্ষ অপরদিকে লঞ্চ যোগাযোগ না থাকায় পল্টুনেরও বেহাল অবস্থা। এ কারনে এখানকার ব্যবসায়ী ও নৌকার মাঝিরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
ঘাটের ইজারাদার সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সফরমালি ঘাট অচল অবস্থায় রয়েছে। এমন অবস্থা থাকায় যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। পন্টুনে ওঠার সিঁড়িটি নেই। ডুবোচর থাকার কারনে অনেক সময় নৌকায় করে মাঝ নদীতে যাত্রীদের উঠতে হয়। এতে করে যাত্রীরা প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে আসা যাওয়া করছেন।
লঞ্চঘাট এলাকার মুদি ব্যবসায়ী সজিব আহমেদ বলেন, এক সময় লঞ্চের জন্য মানুষ অপেক্ষা করতো। আমাদের বিক্রিও ভালো ছিলো। যাত্রী নেই, আমাদের ব্যবসাও নেই। আমরা চাই সরকার যাতে এই লঞ্চঘাটটিকে বাঁচিয়ে রাখে। এখানে ডুবোচর কেটে ফেললে ঘাটে লঞ্চ থামতে পারবে। দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী ঘাটটি টিকিয়ে রাখা উচিত বলে মনে করি।
টার্মিনাল দেখাশুনাকারী মনির হোসেন বলেন, এই ঘাটেতো কোন যাত্রী আসা যাওয়া করে না। আমাদের তেমন কোন কাজ থাকে না। শুধু পল্টন দেখা শুনা করি। যাত্রী থাকলে হয়তো এই ঘাটের পুনরায় প্রাণ ফিরে আসতো।
চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা মো. কায়সারুল ইসলাম বলেন, সফরমালি ঘাটসহ বিভিন্ন ঘাট এখন অচল অবস্থায় রয়েছে। যাত্রী সংকটে এসবঘাটে কোন উন্নয়ন হচ্ছে না। বর্তমানে সবাই সড়ক পথে যাতায়াত করে। সুযোগ সুবিধা যেখানে, মানুষ সে পথেই চলতে পছন্দ করে। সফরমালি ঘাটের বিষয়ে আমাদের কোন নির্দেশনা আসেনি। সেখানে একটি পল্টুন রয়েছে। তবে কোন কাজে আসছে না। অনেক লঞ্চ যাত্রী সংকটের কারনে সফরমালি ঘাট ভিড়ায় না। আমরা সর্বত্মক চেষ্টা করছি, এ পথের সকল ঘাটকে সচল রাখার জন্য।