চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, মঞ্চ ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ

নিজস্ব প্রতিনিধি :
হাজীগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের প্রায় ৩ ঘন্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে অন্তত ২০জন নেতা-কর্মী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতরা স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। তবে কারো অবস্থা গুরুতর নয়। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ সমাবেশের মঞ্চ ভাংচুর এবং সড়কে আগুন জ্বালানোর ঘটনা ঘটে। পুলিশ বিপুল পরিমাণে কাঁদানো গ্যাস ও ১২২ রাউন্ড শর্টগানের গুলি নিক্ষেপ এবং লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। মঙ্গলবার বেলা দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দফায় দফায় হাজীগঞ্জ বাজারের বিশ্বরোড এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

সরেজমিন দেখা যায়, কুষ্টিয়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়। এ জন্য বিশ্বরোড মোড়ে মঞ্চ সাজানো ছিল। অনুষ্ঠানস্থলে নেতা-কর্মীদের আগমনের পূর্বে বেলা দেড়টার দিকে হাজীগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাছান রাব্বির নেতৃত্বে একদল নেতা-কর্মী বিশ্বরোডের সভামঞ্চ ভাংচুর করে সড়কের উপর আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই সাথে সড়কে চলমান কয়েকটি গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

খবর পেয়ে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ, চাঁদপুর ডিবি পুলিশ এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে হামলাকারীদের প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়। খবর পেয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব হেলাল উদ্দিন মিয়াজী, সাধারণ সম্পাদক গাজী মো. মাঈনুদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম ফারুক মুরাদ, পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক হায়দার পারভেজ সুজন ও পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শুকুর আলম শুভসহ নেতৃবৃন্দ সভাস্থলে এগিয়ে এসে প্রতিপক্ষ লোকদের উপর ধাওয়া করে। দ্বিতীয় ঘটনায় হাজীগঞ্জ-কচুয়া সড়কে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার রূপ নিলে পুলিশ উভয়পক্ষের লোকদের দুই দিকে সরিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।

এদিকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির দিকে লক্ষ্য রেখে উপজেলা আওয়ামী লীগের সমাবেশস্থলে আসা মিছিল এক হয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় মিলিত হয়। বিকেল ৪টার দিকে টেলিকনফারেন্সে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাসির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোওয়ারী দুলাল নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। ওই সময় সভা চলাকালে পুনরায় প্রতিপক্ষের কর্মীরা সভাস্থলকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এ সময় আওয়ামী লীগের উভয়পক্ষ পুনরায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষে লিপ্ত হলে প্রশাসন কঠোর অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে ১২২ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ও কাঁদানো গ্যাস নিক্ষেপ এবং ব্যাপকভাবে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে এখনো উপজেলা সদরে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে ঘটনাস্থল ও আশপাশে।

এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গাজী মো. মাঈনুদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রশাসনের কাছে আমরা অনুমতি নিয়ে কর্মসূচি আয়োজন করেছি। কিন্তু আজকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতা এমপির নাম ভাঙ্গিয়ে সভাস্থলে হামলা চালিয়েছে। প্রশাসন তাদেরকে সহযোগিতা করে আমাদেরকে প্রতিহত করেছে।

হাজীগঞ্জ পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাছান রাব্বি বলেন, আজকের কর্মসূচিতে ব্যানারে মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এমপির ছবি না থাকায় এবং বিএনপি-জামায়াতের লোক নিয়ে ব্যক্তি কেন্দ্রিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ জানিয়েছে।

হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর হোসেন রনি বলেন, আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে প্রতিপক্ষের লোকজন হঠাৎ করে হামলা চালিয়েছে। আমাদের নজরে আসার পর উভয়পক্ষের লোকজনকে স্বাভাবিক করতে গিয়ে প্রায় ১২২ রাউন্ড শর্টগানের গুলি নিক্ষেপ করা হয়েছে। আমরা জনসাধারণ ও বাজারের ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি। তবে এ ঘটনায় কোন পক্ষ এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন