ফয়েজ আহমেদ :
চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের হাতে মোঃ নুরুল আমিন (৬৫) নামের এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা খুন হয়েছেন। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সমাজসেবা কর্মকর্তা ছিলেন। ওই ঘটনায় দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন নিহতের স্ত্রী কামরুন নাহার (৬১)।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহরাস্তি থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। গুরুতর আহত কামরুন নাহারকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) প্রেরণ করে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, মৃত আঃ মজিদের পুত্র নিহত নুরুল আমিন ১৯৯৭ সালে উপজেলার টামটা উত্তর ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রাম থেকে পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের নাওড়া গ্রামে বাড়ি তৈরি করে বসবাস করে আসছেন। ওই বাড়িতে তিনি ও তার স্ত্রী বসবাস করতেন। স্ত্রী কামরুন নাহার পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে অবসরজনিত ছুটিতে রয়েছেন।
বুধবার হতে নিহতের সন্তানরা তাদের মুঠোফোনে সংযোগ না পেয়ে প্রতিবেশী শামছুল হক পাটোয়ারিকে বাড়িতে খোঁজ নেয়ার অনুরোধ জানান। তিনি বাড়ির গেইট তালাবদ্ধ ও জানালা দিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় কামরুন্নাহারকে পড়ে থাকতে দেখেন। এ দৃশ্য দেখে তিনি জরুরী সেবা ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গেইটের তালা ভেঙ্গে কামরুন্নাহারকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে প্রেরণ করে। পরে বাড়ির ছাদ হতে নিহতের লাশ উদ্ধার করে।
হতাহত দম্পতির মেঝ কন্যা জান্নাতুন নূর মিলি জানান, মঙ্গলবার রাত ৮টা ৭ মিনিটে মা কামরুন্নাহারের সাথে সর্বশেষ তার মুঠোফোনে কথা হয়েছিল। বুধবার তিনি বরুড়া কর্মস্থলে যাওয়ার কথা ছিল। এছাড়া ছোট মেয়ে শামছুন্নাহার লুনার বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি বাবদ ৩০ হাজার টাকা ব্যাংক হতে তুলে ঘরে রেখেছিলেন। বুধবার রাতে প্রচুর ঝড়-বৃষ্টি হওয়ায় তিনি মা-বাবার সাথে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এরপর প্রতিবেশী শামছুল হক পাটোয়ারি ঘটনা জেনে জরুরী সেবায় ফোন দেন।
শাহরাস্তি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আবদুল মান্নান জানান, ঘটনার সংবাদ পেয়ে চাঁদপুর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায়, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (কচুয়া সার্কেল) মোঃ আবুল কালাম চৌধুরী, পিবিআই ও সিআইডি পুলিশের কয়েকটি ইউনিট গভীরভাবে ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছে।
ওসি আরো জানান, পুলিশ বাড়ির একটি কক্ষ হতে গুরুত্বর আহতাবস্থায় কামরুন্নাহারকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান।পরে ওই বাড়ির ছাদ থেকে নুরুল আমিনের মরদেহ উদ্ধার করে। এখানে কোন চুরি বা ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে তিনি জানান, তাদের ঘরে সমস্ত জিনিসপত্র সঠিকভাবে আছে। কোন কিছু খোয়া যায়নি। ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ কাজ করছে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) সুদীপ্ত রায় বলেন, নুরুল আমিনের মাথায় আঘাত এবং গলায় মোজা প্যাঁচানো রয়েছে। ক্ষত জায়গায় পঁচন ধরেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনাটি দু-তিন দিন আগের। এই মুহূর্তে আর বিশেষ কিছু বলা যাচ্ছে না।