চাঁদপুরে করোনা শনাক্তের ৪ মাস : আক্রান্তের হার বাড়ছে : কমেছে মৃত্যু

রহিম বাদশা :
চাঁদপুরে গত এক মাসে করোনায় মৃত্যুর হার অনেক কমেছে। ৯ জুলাই যেখানে জেলায় মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৬জন, ৯ আগস্টে তা বেড়ে হয়েছে ৭৫জন। অর্থাৎ এক মাসে করোনায় মৃত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৯জন।

একইভাবে এক মাসে আগে যেখানে মৃত্যুর শতকরা হার ছিল ৫.৩৬ ভাগ এখন তা কমে হয়েছে ৩.৮০ ভাগ। উপসর্গে মৃত্যু কমে এখন মাঝে মাঝে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

কমেছে নমুনা সংগ্রহের পরিমাণও। তবে বেড়েছে করোনা রোগী শনাক্তের হার। এক মাস আগেও যেখানে নমুনা পরীক্ষা করা লোকের মধ্যে শতকরা ২৩.৭১ ভাগের করোনা শনাক্ত হয়েছে এখন সেখানে শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬.৩০ ভাগে।

চাঁদপুর জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও লকডাউনের চার মাস পূর্ণ হয়েছে রোববার (৯ আগস্ট)। জীবনযাত্রা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। যদিও লকডাউন কাগজে-কলমে এখনো বহাল রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। সামাজিক দূরত্ব মানা ও মাস্ক ব্যবহার কমে যাচ্ছে।

তবে আশার কথা হচ্ছে, ব্যাপক হারে বেড়েছে সুস্থতার হার। গত এক মাসে (৯ জুলাই-৯ আগস্ট) করোনামুক্ত হয়েছেন জেলার ৬৮০জন। অথচ এর আগের তিন মাসে করোনামুক্ত হয়েছিলেন ৬৬৫জন।

রোববার (৯ আগস্ট) চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, চাঁদপুর জেলায় করোনা টেস্টের জন্য মোট সংগৃহীত নুমনার পরিমাণ ৭৩০৭টি। এর মধ্যে রিপোর্ট এসেছে ৭২৪৭টি। রিপোর্ট অপেক্ষমান থাকা ৬০টি নমুনা গতকাল’ই সংগ্রহ করা হয়েছিল। রাতে এসব রিপোর্টের ফলাফল সিভিল সার্জন অফিসে প্রেরণ করা হলেও ঘোষণা হবে সোমবার।

ফলে কার্যত এখন কোনো রিপোর্ট অপেক্ষমান নেই। এখন রিপোর্ট প্রাপ্তির হার প্রায় শতভাগ। মাঝখানে রিপোর্টের জট লেগে গেলেও এখন চাঁদপুরে আরটি-পিসিআর ল্যাব চালু হওয়ায় একদিনেই রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে।

বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেও চাঁদপুরে সন্দেহভাজন লোকদের নুমনা সংগ্রহ শুরু হয় ২৭ মার্চ। ওইদিন ঢাকার আইইডিসিআর থেকে বিশেষ টিম এসে চাঁদপুরের একজনের নমুনা সংগ্রহ করে। ২ এপ্রিল চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসের তত্ত্বাবধানে চাঁদপুর জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়।

প্রথম দিনে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব দক্ষিণ, ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ থেকে ২জন করে মোট ১০জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। চাঁদপুর প্রবাহের আর্কাইভ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

উল্লেখিত সূত্রে আরো জানা যায়, চাঁদপুরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল। তার নাম মোঃ সুজন (৩২)। নারায়ণগঞ্জ ফেরত এই যুবক অসুস্থ অবস্থায় মতলব উত্তরে তার শ্বশুর বাড়িতে আসার পর ৬ এপ্রিল নমুুনা দিয়েছিলেন। চিকিৎসার পর তিনি এখন সুস্থ।

প্রথম শনাক্তকৃত করোনা রোগী সুজনের নমুনা টেস্টের পজেটিভ রিপোর্ট আসার দিনেই (৯ এপ্রিল) চাঁদপুর জেলা লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক। ওইদিন সন্ধ্যায় এই লকডাউন কার্যকর শুরু হয়। সরকারের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে অনেকটা শিথিল পর্যায়ে লকডাউন এখনো বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান।

চাঁদপুরে করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১১ এপ্রিল চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙ্গা এলাকায়। তিনিও নারায়ণগঞ্জ ফেরত। শ্বশুর বাড়িতে করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করে। ১৫ এপ্রিল তার নমুনা টেস্টের রিপোর্ট আসে করোনা পজেটিভ। এরপর তার শ্বশুর ও এক শ্যালিকা করোনায় আক্রান্ত হন। শ্যালিকা সুস্থ হয়েছেন। আর শ্বশুর করোনা থেকে সুস্থ হয়ে পরবর্তীতে মারা যান।

চাঁদপুরে করোনার আগমন ও সংক্রমণের বাহক হিসেবে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ফেরত লোকদের চিহ্নিত করেছে। প্রথম পর্যায়ে বিদেশ ফেরত লোকদের সন্দেহের শীর্ষে রাখা হলেও এখন পর্যন্ত জেলায় একজন বিদেশ ফেরত লোকেরও করোনা শনাক্ত হয়নি।

চিকিৎসকদের মতে, সারা জেলায় এখন করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন চলছে। তবে বর্তমানে চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল। বিশেষ করে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ও উপসর্গে মৃত্যুর হার অনেক কমেছে।

সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ রোববার চাঁদপুর প্রবাহকে জানান, চাঁদপুরে জেলায় বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত ১৯২৫জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৭৫জন। ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৩৪৫জন। চিকিৎসাধীন আছেন ৫০৫জন।

এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৬৮২জন। এর মধ্যে ইতিমধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৬৪৬জন। বর্তমানে আইসোলেশনে রোগীর সংখ্যা ৩৬জন।

উল্লেখিত পরিসংখ্যানের বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলায় এবং বিদেশে চাঁদপুরের বহু লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন অনেকে। বিক্ষিপ্তভাবে তাদের অনেকের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও সঠিক পরিসংখ্যান এখনো সরকারি-বেসরকারি কোনো সূত্র জানাতে পারেনি।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)