চাঁদপুরে করোনা শনাক্তের ৩ মাস : শনাক্ত ২৩.৭১%, মৃত ৫.৩৬% : সুস্থ ৫৪.০২%

ছবির ক্যাপশন : চাঁদপুরে সাধারণ ছুটির পর লঞ্চ চলাচল শুরু হলে যাত্রীদের ঢল নামে -ফাইল ছবি।

রহিম বাদশা :
চাঁদপুর জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও লকডাউনের তিন মাস পূর্ণ হয়েছে। যদিও লকডাউন এখন অনেকটাই শিথিল। এই সময়ে নমুনা (স্যাম্পল) পরীক্ষা করা লোকের মধ্যে শতকরা ২৩.৭১ ভাগের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর শতকরা হার ৫.৩৬ ভাগ। এখন পর্যন্ত সুস্থতার হার ৫৪.০২ ভাগ।

আক্রান্তের হার দিন দিন বাড়লেও অতি সম্প্রতি মৃত্যুর হার কিছুটা কমেছে। উপসর্গে মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছে। বেড়েছে সুস্থতার হার। আরো আশার কথা হচ্ছে, চিকিৎসকরা বলছেন- দেশে স্বাভাবিক সময়ে যে পরিমাণ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তার চেয়ে বর্তমান মহামারীতেও চাঁদপুরে মৃত্যুর হার বেশি নয়।

বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, চাঁদপুর জেলায় করোনা টেস্টের জন্য মোট সংগৃহীত নুমনার পরিমাণ ৫৩৪৭টি। এর মধ্যে রিপোর্ট এসেছে ৫১১১টি।

সংগৃহীত নমুনার মধ্যে রিপোর্ট প্রাপ্তির শতকরা হার ৯৫.৫৮ ভাগ। তবে বাকী ২৩৬টি রিপোর্ট মূলত গত ২ দিনের। ফলে কার্যত এখন রিপোর্ট প্রাপ্তির হার প্রায় শতভাগ। মাঝখানে রিপোর্টের জট লেগে গেলেও এখন ২/৩ দিনের মধ্যেই রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে।

করোনা টেস্টের প্রাপ্ত রিপোর্টের জেলায় ১২১২জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ হিসেবে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে আক্রান্তের হার শতকরা ২৩.৭১ ভাগ। তবে অন্য জেলায় নমুনা টেস্টে আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর চাঁদপুরে অবস্থান করা লোকসহ জেলায় মোট করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১২৩১জন।

সে হিসেবে আক্রান্তের হার শতকরা ২৪.০৮ ভাগ। এর মধ্যে ৬৬জন মারা গেছেন। আক্রান্ত রোগী অনুপাতে শতকরা মৃত্যুর হার ৫.৩৬ ভাগ।

বাংলাদেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেও চাঁদপুরে সন্দেহভাজন লোকদের নুমনা সংগ্রহ শুরু হয় ২৭ মার্চ। ওইদিন ঢাকার আইইডিসিআর থেকে বিশেষ টিম এসে চাঁদপুরের একজনের নমুনা সংগ্রহ করে।

২ এপ্রিল চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসের তত্ত্বাবধানে চাঁদপুর জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। প্রথম দিনে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব দক্ষিণ, ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ থেকে ২জন করে মোট ১০জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। চাঁদপুর প্রবাহের আর্কাইভ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

উল্লেখিত সূত্রে আরো জানা যায়, চাঁদপুরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল। তার নাম মোঃ সুজন (৩২)। নারায়ণগঞ্জ ফেরত এই যুবক অসুস্থ অবস্থায় মতলব উত্তরে তার শ্বশুর বাড়িতে আসার পর ৬ এপ্রিল নমুুনা দিয়েছিলেন। চিকিৎসার পর তিনি এখন সুস্থ।

প্রথম শনাক্তকৃত করোনা রোগী সুজনের নমুনা টেস্টের পজেটিভ রিপোর্ট আসার দিনেই (৯ এপ্রিল) চাঁদপুর জেলা লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক। ওইদিন সন্ধ্যায় এই লকডাউন কার্যকর শুরু হয়। সরকারের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে অনেকটা শিথিল পর্যায়ে লকডাউন এখনো বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান।

চাঁদপুরে করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১১ এপ্রিল চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙ্গা এলাকায়। তিনিও নারায়ণগঞ্জ ফেরত। শ্বশুর বাড়িতে করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করে। ১৫ এপ্রিল তার নমুনা টেস্টের রিপোর্ট আসে করোনা পজেটিভ। এরপর তার শ্বশুর ও এক শ্যালিকা করোনায় আক্রান্ত হন। শ্যালিকা সুস্থ হয়েছেন। আর শ্বশুর করোনা থেকে সুস্থ হয়ে পরবর্তীতে মারা যান।

চাঁদপুরে করোনার আগমন ও সংক্রমণের বাহক হিসেবে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ফেরত লোকদের চিহ্নিত করেছে। প্রথম পর্যায়ে বিদেশ ফেরত লোকদের সন্দেহের শীর্ষে রাখা হলেও এখন পর্যন্ত জেলায় একজন বিদেশ ফেরত লোকেরও করোনা শনাক্ত হয়নি।

চিকিৎসকদের মতে, সারা জেলায় এখন করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন চলছে। তবে এক সপ্তাহ ধরে চাঁদপুরে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল। বিশেষ করে করোনায় আক্রান্ত ও উপসর্গে মৃত্যুর হার কিছুটা কমেছে।

সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) রাতে চাঁদপুর প্রবাহকে জানান, চাঁদপুরে জেলায় বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত ১২৩১জনের উপজেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান হলো : চাঁদপুর সদরে ৪৮১জন, ফরিদগঞ্জে ১৪৪জন, মতলব দক্ষিণে ১৪৩জন, শাহরাস্তিতে ১২৮জন, হাজীগঞ্জে ১১৭জন, হাইমচরে ৯০জন, মতলব উত্তরে ৭৭জন ও কচুয়ায় ৫১জন।

জেলায় মোট ৬৬জন মৃতের উপজেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান হলো : চাঁদপুর সদরে ১৯জন, হাজীগঞ্জে ১৬জন, ফরিদগঞ্জে ৯জন, মতলব উত্তরে ৮জন, কচুয়ায় ৫জন, শাহরাস্তিতে ৫জন, মতলব দক্ষিণে ৩জন ও হাইমচরে ১জন।

সিভিল সার্জন আরো জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় আক্রান্ত ১২৩১জনের মধ্যে ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬৬৫জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ৫০০জন। অর্থাৎ আক্রান্তের অর্ধেকেরও বেশি সুস্থ হয়েছেন ইতিমধ্যে। এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৪৩০জন। এর মধ্যে ইতিমধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৩৮২জন।

বর্তমানে আইসোলেশনে রোগীর সংখ্যা ৪৮জন। এছাড়া জেলায় মোট হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির সংখ্যা ৮২৯৬জন। এর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৯৩১জন। বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন ২৩৬৫জন।

উল্লেখিত পরিসংখ্যানের বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলায় এবং বিদেশে চাঁদপুরের বহু লোক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন অনেকে। বিক্ষিপ্তভাবে তাদের অনেকের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও সঠিক পরিসংখ্যান এখনো সরকারি-বেসরকারি কোনো সূত্র জানাতে পারেনি।

এদিকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মাহবুবুর রহমান চাঁদপুর প্রবাহকে জানান, চাঁদপুর জেলায় স্বাভাবিক সময়ে গড়ে যে পরিমাণ মানুষ মারা যেত আল্লাহর রহমতে বর্তমান মহামারীতে মৃত্যুর হার তার চেয়ে বেশি নয়। তাছাড়া করোনায় যারা মারা যাচ্ছেন তাদের অনেকেই বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।

তিনি বলেন, চাঁদপুর সদর হাসপাতালে হাই ফ্লো অক্সিজেন প্লান্ট চালুর পর তীব্র অক্সিজেন সংকটে ভোগা রোগীদের পর্যাপ্ত পরিমানে অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে। তখন পরিস্থিতির আরো উন্নতি হতে পারে। তাছাড়া করোনা টেস্ট চালু হলে আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা ও আইসোলেশনের আওতায় আনা যাবে।

তিনি আশা করেন, দু’-তিন দিনের মধ্যে হাই ফ্লো অক্সিজেন প্লান্ট চালু হবে। করোনা টেস্ট চলতি মাসেই চালুর সম্ভাবনা রয়েছে। এসব সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য শিক্সামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তার ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তিনি।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন