নিজস্ব প্রতিবেদক :
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের জমা রশিদ বই ব্যবহার ও সীল নকল করে গ্রাহকের কাছ থেকে কমপক্ষে অর্ধকোটি টাকা নিয়ে পলাতক রয়েছেন চাঁদপুর সদরের বাগাদী এজেন্ট মালিক (সত্ত্বাধিকারী) মো. মোশারফ হোসেন পাটওয়ারী ও তার সহযোগীরা।
প্রতারণা করে টাকা আত্মসাৎ করার কারণে ইতোমধ্যে চাঁদপুর আদালতে মামলা করেছেন একাধিক গ্রাহক। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে এজেন্ট শাখাটি বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তবে টাকা জমা রেখে খুবই দুশ্চিন্তায় ও হতাশ হয়ে পড়েছে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা।
গত বৃহস্পতিবার সকালে ব্যাংকের এজেন্ট বন্ধ ও এজেন্ট সত্ত্বাধিকারী মোশারফ পলাতক এর বিষয়টি নিশ্চিত করেন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড চাঁদপুর শাখার ভিপি ও শাখা প্রধান মো. দাউদ খান।
এজেন্ট মালিক মোশারফ পাটওয়ারীর প্রতারণার শিকার গ্রাহক বাগাদী নানুপুর মিজি বাড়ির গ্রাহক তাছলিমা আক্তার। তিনি মূল ব্যাংকের জমা রশিদ ও নকল সীলের মাধ্যমে জমা দিয়েছেন ৭ লাখ টাকা। সহজ সরল এই গ্রাহক বুঝতে পারেননি এই জমা রশিদ এজেন্ট কিংবা মূল্য ব্যাংকের। তাকে একটি চেক দেয়া হয়েছে প্রয়োজনে টাকা উত্তোলনের জন্য। পরে ব্যাংকে গিয়ে এই একাউন্ট নম্বর চেক করে দেখেন এই নামে কোন একাউন্ট নেই।
তাছলিমা বেগম পরবর্তীতে বিষয়টি ব্যাংকের চাঁদপুর শাখার ভিপি ও শাখা প্রধান মো. দাউদ খান জানান। তিনি ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী এজেন্ট শাখার সত্ত্বধিকারীসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার করার পরামর্শ দেন। তাছলিমা মামলা করেন এবং মামলাটি তদন্ত চলছে। একইভাবে মামলা করেছেন গ্রাহক রেহেনা আক্তার।
মামলার বিবাদীরা হচ্ছে- এজেন্ট মালিক অর্থাৎ মেসার্স ক্রিয়েটিভ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী মো. মোশারফ পাটওয়ারী, মো. রাকিব (মোশারফ এর ভাই), এজেন্ট কর্মকর্তা মো. তারেক হোসাইন খান, মো. শাহপরান, মো. হাইয়ুম মিজি ও মোশারফের স্ত্রী তামান্না আক্তার। মামলার বিবরণে উল্লেখ, পুরো প্রতারণা ও টাকা আত্মসাতের সাথে আসামীরা জড়িত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতারণার শিকার হয়েছেন গ্রাহক মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, তার ৩ লাখ টাকা, বাগাদীর খোরশেদ আলমের স্ত্রী তার ৪ লাখ টাকা, চান্দ্রা মদনের গাঁও গ্রামের রেহেনা আক্তার তার ৮ লাখ টাকা, মো. সফিক গাজী ২ লাখ ২০ হাজার টাকা।
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড চাঁদপুর শাখার ভিপি ও শাখা প্রধান মো. দাউদ খান জানান, প্রতারণার বিষয়ে অভিযোগ আসার পর থেকে আমরা তাদের বিষয়ে সতর্ক হয়েছি। যাদের সাথে প্রতারণা করেছে তাদেরকে ব্যাংকের নিয়মানুসারে মামলার করার জন্য পরামর্শ দিয়েছি। সর্বশেষ গত ২৫ আগস্ট বাগাদী এজেন্টে গিয়ে মোশারফকে খুঁজে পাইনি। এরপর ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২৮ আগস্ট এজেন্ট বন্ধ করে দিয়েছি।
প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের বিষয়ে তিনি জানান, এজেন্ট এর মাধ্যমে টাকা জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া আছে প্রত্যেকটি এজেন্ট শাখায়। কিন্তু অনেক গ্রাহক অধিক মুনাফা পাবেন এমন ফাঁদে পড়ে আউট সাইট লেনদেন করেছেন। কিন্তু এজেন্ট এর মাধ্যমে যারা রশিদ গ্রহণ করে জমা দিয়েছেন তাদের টাকা আমরা দিয়ে দিব। বাকীদের বিষয়ে মামলার করার পরামর্শ দিয়েছি। মামলার রায় হলে আমরা ব্যাংকের নিয়মানুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ব্যাংকের এই কর্মকর্তা আরো জানান, মেসার্স ক্রিয়েটিভ এন্টারপ্রাইজ আগস্ট মাসেও ৫০হাজার টাকা কমিশন পেয়েছে। এই শাখার গ্রাহকদের প্রায় আড়াই কোটি টাকা এখন জমা আছে।