শরীফুল ইসলাম :
হিজড়াদেরকে দেখলে ভয় কিংবা লজ্জা পায় না এমন মানুষ খুব কমই আছে। তারা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। আবার অনেকে টাকা না দিতে চাইলে, তারা লজ্জাজনক পরিস্থিতিও তৈরি করে ফেলে। চাঁদপুরে ওইসব হিজড়াদের সংখ্যাও দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে অনুসন্ধানে দেখা গেছে ইদানিং কিছু ছেলে বিভিন্ন ঔষধ সেবনের মধ্য দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে হিজড়ায় নিজেদেরকে রূপান্তরিত করছে।
এ প্রসঙ্গে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী মাসুম বলেন, ঔষধের মাধ্যমে কোন ছেলে হিজড়ায় বনে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে তারা বিভিন্ন ঔষধের মাধ্যমে হরমোনের পরিবর্তন ঘটিয়ে হয়তোবা মেয়েলি ভাব তৈরী করতে পারে। তিনি বলেন, ওইসব ছেলেরা হয়তো মেয়েলি ভাবভঙ্গি রপ্ত করে নিজেদেরকে হিজড়ায় উপস্থাপন করছে।
গত ৫ জুলাই শতাধিক হিজড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা নিতে আসে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে। ওই সময় কুয়াসা হিজড়া গ্রুপে থাকা ৫-৬জন হিজড়া ছেলের আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়। তখন অন্য গ্রুপের হিজড়াদের সাথে কথা বলে মিলে ভয়ংকর তথ্য। ছেলে হিজড়া গ্রুপে থাকা অনেক ছেলেই ইচ্ছেকৃতভাবে হিজড়া হচ্ছে বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। তারা শরীরে বিভিন্ন মেডিসিন প্রয়োগ করে এবং আচরণ-ভঙ্গি পাল্টিয়ে বনে যাচ্ছে ছেলে হিজড়া।
জানা গেছে, চাঁদপুরে ছেলে হিজড়াদের গ্রুপের নাম কুয়াসা। আর তাদের দলনেতা হলেন শাওন ওরফে তানিয়া। শাওন চাঁদপুর শহরের ছেলে। সে শহরের ডিএন উচ্চ বিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেছে। এমনকি একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের (নৃত্য) সাথেও জড়িত ছিল। হঠাৎ করেই তার মধ্যে পরিবর্তন শুরু হয়। বেশ কয়েক মাস যাওয়ার পর শাওন ছেলে হিজড়ায় রূপান্তর হয়। এখন সেই শাওন চাঁদপুরের ছেলে হিজড়াদের দলনেতা। শুধু শাওনই নয়, তার মতো অনেক ছেলেই ইচ্ছে করে নাম লিখিয়েছে হিজড়াদের খাতায়।
এ বিষয়ে কুয়াসা হিজড়া দল নেতা শাওন বলেন, আমাদের গ্রুপে আগে ৭-৮জন ছেলে হিজড়া ছিল। এখন প্রায় ৭০জনের মতো রয়েছে। তবে তার দলের অনেকেই ছেলে হয়েও কেন ইচ্ছাকৃত হিজড়া হয়ে যাচ্ছে- জানতে চাইলে সে বেশি কিছু বলা যাবে না বলে জানায়।
ছেলে হিজড়া গ্রুপের আরেক সদস্য মাইনুদ্দিন (২৪) কে সন্দেহজনক হিজড়াদের বিষয়ে জানতে চাইলে সেও কোন কথা বলেনি। এক পর্যায়ে মাইনুদ্দিন অন্য সন্দেহজনক ছেলে হিজড়াদের নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়।
এদিকে মৌসুমি হিজড়া গ্রুপের মেয়ে সদস্য কারিনা (৩০) বলেন, আমাদের হিজড়া গ্রুপের ২০০ এর মত হিজড়া রয়েছে। সরকার যদি প্রকৃত হিজড়াদের থাকার এবং কাজ করার ব্যবস্থা করে দিতো, তাহলে আর মানুষকে হয়রানি করতাম না। তিনি বলেন, আমরাও চাই আমাদেরকে সামাজিক মর্যাদা দেওয়া হোক। যাতে করে আমরাও অন্যদের মত সমাজে বসবাস করতে পারি।
তবে ছেলে হিজড়াদের সম্পর্কে কারিনা বলেন, অনেক ছেলে বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে মেয়েদের মত শরীর বানায়। তারা মেয়েদের জামাও পড়ে। কিন্তু তাদের কাজের সাথে আমাদের মিল নেই।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। ইউএনডিপির মাধ্যমে তাদের থাকা-খাওয়া এবং কর্মস্থানের একটি ব্যবস্থা হচ্ছে। যারা তৃতীয় লিঙ্গ সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে, তাদেরকেই চিহ্নিত করে এই প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হবে।