চাঁদপুরে যুদ্ধজাহাজ ইকরাম সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর স্থাপনের দাবি

শাওন পাটওয়ারী :
চাঁদপুরে মহান মুক্তিযুদ্ধের দুর্লভ নিদর্শন এমভি ইকরাম (লোরাম) ডাকাতিয়া নদীর পাশে সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা। সোমবার সকাল ১১টায় চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খানের নিকট লিখিত দাবি প্রদান করেন ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ।

লিখিত আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের সময় নৌ-কমান্ডো বাহিনী মধ্য আগস্ট থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মংলা সমুদ্র বন্দর, চাঁদপুর-নারায়নগঞ্জ নৌ-বন্দরসহ বাংলাদেশের সমগ্র জলপথে লিমপেট মাইনের সাহায্যে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর অর্থ ও অস্ত্র বহনকারী ১২৬টি জাহাজ গভীর পানিতে ডুবিয়ে দেয় নৌ-কমান্ডোরা।

এরই ধারাবাহিকতায় ৭১এর ৩০ অক্টোবর গভীর রাতে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে সাবমেরিনার শেখ আমান উল্লা বীর বিক্রমের অধীনে চাঁদপুরের নৌ-কমান্ডোরা লিমপেট মাইনের সাহায্যে ডাকাতিয়া নদীর লন্ডন ঘাটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর রসদ ও অস্ত্রশস্ত্র বহনকারী এমভি ইকরাম (লোরাম)কে ডুবিয়ে দেয়া হয়।

যুদ্ধকালীন সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী অনেক চেষ্টা করে জাহাজটি উত্তোলন করে নদী বন্দর সচল করতে পারে নাই। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ সরকার জাহাজটি উদ্ধারকারী এমভি হামজা ও এমভি রুস্তমের সাহায্যে ডুবন্ত জাহাজটি উদ্ধার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

১৯৮২ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় নিলামের মাধ্যমে জাহাজটি বিক্রয় করে। কিন্তু নিলামের মাধ্যমে ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান জাহাজটি অনেক চেষ্টা করে পানির নিচ থেকে উঠতে ব্যর্থ হয়। মুক্তিযোদ্ধাসহ সর্বস্তরের জনসাধারণের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে এমভি ইকরাম জাহাজটির মালিকের দাবি পরিশোধ ও জাহাজটি সংরক্ষণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।

বরাদ্দের অর্থ থেকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় ১ কোটি ৯ লক্ষ ৫ হাজার টাকা মেসার্স মোক্তার হোসেন এন্ড রফিকুল ইসলামকে পরিশোধ করে অবশিষ্ট ৯০ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা এমভি ইকরাম জাহাজটি সংরক্ষণের ব্যয়ের জন্য গচ্ছিত রাখে।

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ১২ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এমভি ইকরাম জাহাজটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর, সংরক্ষণ এবং সংরক্ষণের জন্য প্ল্যাটফর্ম সেড নির্মাণের সম্ভাব্য স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন সংক্রান্ত কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উক্ত সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, এমভি ইকরাম জাহাজটি ঢাকাতে সংরক্ষণের জন্য জায়গা না পাওয়ায় চাঁদপুর নদী বন্দর এলাকা অথবা মাদারীপুরে সংরক্ষণের জন্য স্থান নির্ণয় করার একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের নেতৃবৃন্দের দাবি জরুরী ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এমবি ইকরাম জাহাজটির নারায়নগঞ্জ থেকে চাঁদপুর ট্রেনের ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করে জনসাধারণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক।

এই প্রেক্ষিতে ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খান এর নিকট লিখিত আবেদনপত্র দাখিল করেন। আবেদনপত্রটি গ্রহণকালে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মাজেদুর রহমান খান বলেন, এত সংখ্যক গুণীজনের মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত ও গর্বিত। চাঁদপুরকে ঢালাওভাবে সাজাতে মেগা প্ল্যান হচ্ছে। আপনাদের দাবিটুকু আমি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। আপনাদের দাবিটুকু অবশ্যই গ্রহণযোগ্য। সরকারের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে আমরাও সহযোগিতা করবো।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও খ্যাতিমান সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মিয়া মো. জাহাঙ্গীর আলম, রুহুল আমিন মজুমদার, শাহজাহান কবির (বীর প্রতীক), মমিন উল্লাহ পাটোয়ারী (বীর প্রতীক), ফজলুল কবির, আলী হোসেন ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট আবু তাহের রুস্তমসহ চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)