‘আরটি-পিসিআর ল্যাবে প্রতিদিন শত শত নমুনা পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছে’
রহিম বাদশা :
দ্রুত করোনা টেস্টের মাধ্যম রেপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের কিটের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে চাঁদপুরে। এ অবস্থায় মতলব উত্তর, ফরিদগঞ্জ, কচুয়ায় এই পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। সদর বাদে বাকী উপজেলাগুলোতেও ১-২ দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে রেপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট।
অন্যদিকে প্রতিদিন আরটি-পিসিআর ল্যাবে টেস্টের জন্য সংগৃহীত শত শত নমুনা টেস্টের বাইরে থেকে যাচ্ছে। এতে জেলায় প্রতিদিন করোনা রোগী শনাক্তের প্রকৃত তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না। আপাত দৃষ্টিতে জেলায় শনাক্তের হার কমছে বলে মনে হলেও সব নমুনা পরীক্ষা না করতে পারায় প্রকৃত অবস্থা জানাও যাচ্ছে না। নমুনা দিয়ে ফলাফলের জন্য ৫-৬ দিনও অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে উপসর্গে আক্রান্ত লোকজনকে।
খুব সহজে ও দ্রুত ফলাফল জানার পদ্ধতি (রেপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট) অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ার সাথে সাথে জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্তের হারও অনেক কমে গেছে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে চাঁদপুরে ব্যাপক হারে করোনা রোগী শনাক্তের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ শনাক্ত হতো রেপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে। বিশেষ করে উপজেলা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি করোনার টেস্ট হতো এই পদ্ধতিতে।
গত ক’দিন ধরে জেলায় রেপিড এন্টিজেন টেস্ট কমে যাওয়ায় কমেছে শনাক্তের সংখ্যাও। তবে নমুনা অনুপাতে শনাক্তের হার কমে এসেছে অতি সম্প্রতি। সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ওই অফিসে রেপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের কোনো কিট মজুদ নেই। কবে আবার আসবে তারও ঠিক-ঠিকানা নেই। নতুন কিট না আসলে যে কোনো সময় পুরো জেলায় এই টেস্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) চাঁদপুর জেলায় রেপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয় ৩২৪জনের। এর মধ্যে ২২৭জনের টেস্ট হয়েছে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে। এছাড়া হাইমচরে ২জন, মতলব দক্ষিণে ৬০জন, হাজীগঞ্জে ২৩জন, শাহরাস্তিতে ৬জন, ব্র্যাকের ডটস্ কর্নারে ৬জনের নমুনা টেস্ট করা হয়। কিট সংকটে মতলব উত্তর, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া ও বক্ষব্যাধি ক্লিনিকে এ দিন রেপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট হয়নি। অথচ এক সপ্তাহ আগেও উপজেলা পর্যায়ে শত শত রোগীর রেপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হতো।
সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, জেলার অধিকাংশ উপজেলায় রেপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের কিট শেষপ্রায়। আমার অফিসে কোনো কিট মজুদ নেই। আগামী ১-২ দিনের মধ্যে সদর হাসপাতাল বাদে অন্যসব উপজেলায় রেপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট বন্ধ হয়ে যাবে। তবে আরটিসি-পিসিআর ল্যাবের টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে সারা জেলায়।
তিনি আরো জানান, আরটি-পিসিআর টেস্টের জন্যও নমুনা বেশি হওয়ায় চাঁদপুরে প্রতিদিন শত শত নমুনা জমা পড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন যতজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয় তার অর্ধেকও টেস্ট করা সম্ভব হয় না কোনো কোনো দিন। চাঁদপুরস্থ ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ আরটি-পিসিআর ল্যাবে সর্বোচ্চ ৩০০জনের নমুনা পরীক্ষা করা যায় প্রতিদিন। কিন্তু নমুনা সংগ্রহ হয় ৫ শতাধিক। ফলে প্রতিদিন সংগৃহীত অনেক নমুনা পরীক্ষার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এতে প্রতিদিন শনাক্তের পূর্ণাঙ্গ তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে না। গত কয়েক দিনের অতিরিক্ত নমুনা শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামস্থ ল্যাবে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। সম্প্রতি এর আগেও কয়েক দফা নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে বাড়তি নমুনা পাঠানো হয়।
সিভিল সার্জন ডা. সাখাওয়াত উল্লাহ বৃহস্পতিবার রাতে চাঁদপুর প্রবাহকে জানান, চাঁদপুর জেলায় এ পর্যন্ত রেপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের জন্য ১১ হাজার ১১টি কিট এসেছে। এর মধ্যে ৪ হাজার কিট বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। চাঁদপুর সদর হাসপাতালকে দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ১১টি কিট। এছাড়া চাঁদপুর বক্ষব্যাধি (টিবি) ক্লিনিক ও ব্র্যাকের ডটস্ (টিবি) কেন্দ্রে দেওয়া হয়েছে ৫শ’ করে কিট। এর মধ্যে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ৩ হাজার ৭৮৪টি কিট অবশিষ্ট আছে। তিনটি উপজেলার কিট শেষ। বাকীগুলোতে খুব অল্প পরিমান কিট অবশিষ্ট আছে।