তালহা জুবায়ের :
বাংলা নববর্ষ তথা পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশ ধরছে জেলেরো। বছরের যে কোন সময়ের চেয়ে বৈশাখে ইলিশের দাম থাকে সবচেয়ে বেশি। অধিক মুনাফার লোভে অসাধু জেলেরা ইলিশ ধরতে হয়ে উঠেছে বেপরোয়া। সরকারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে মাছ ধরতে নদীতে নামছে তারা। জেলেরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে নদীতে মাছ শিকারে নামছে।
জাতীয় মাছ ইলিশ সম্পদ রক্ষায় জাটকা নিধন প্রতিরোধ কর্মসূচির আওতায় চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার এলাকায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাতে জেলেরা যেন নদীতে নামতে না পারে সেজন্য জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ ও মৎস্য বিভাগের লোকজন নিয়মিতভাবে টহল দিচ্ছে।
কিন্তু আসাধু জেলেরা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রকাশ্যে দিনে ও রাতে জাটকা নিধন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে নববর্ষের সময়টাতে ইলিশের চাহিদা থাকে আকাশচুম্বি। সাধারণ সময়ের চেয়ে এই সময়ে ইলিশের দামও থাকে কয়েকগুন বেশি। তাই অধিক লাভের আশায় ইলিশ ধরছে জেলেরা। এতে নির্বিচারে মারা পড়ছে ইলিশের পোণা জাটকা।
চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিনা ফেরিঘাট এলাকার জেলে বিল্লাল মাঝি, বাদশা মিয়া বলেন, নববর্ষের উৎসবকে ঘিরে ইলিশ মাছের চাহিদা বেশি থাকায় দামও অনেক বেশি পাওয়া যায়। তাই অনেক জেলে ধরা পড়ার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে নদীতে যায় ইলিশ ধরতে। জালের মধ্যে দু’-চারটি ইলিশ ধরা পড়লেই লাভবান হয় জেলেরা।
তারা বলেন, প্রকার ভেদে একেকটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন দামে। মাঝারি সাইজের প্রতি পিস ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ থেকে ২ হাজার টাকায়। আর ১ কেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর উপজেলার বহরিয়া, পুরানবাজার, রনগোয়াল এলাকার জেলেরা বলেন, আমরা অনেক জেলে আছি যারা সরকারি কোন সহায়তা পাই না। নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দু’মুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতেই কষ্ট হয়ে যায়। তার উপরে আবার ঋণের কিস্তির ভোজা বইতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই ঝুঁকি নিয়ে নদীতে নামি ইলিশ ধরতে। অনেক সময় প্রশাসনের হাতে ধরা পড়লে জেলে পাঠিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে নৌ-পুলিশ সুপার (চাঁদপুর অঞ্চল) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, জাটকা রক্ষায় নদীতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে। তার পরেও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু অসাধু জেলে নদীতে নেমে মাছ শিকার করে। তাদেরকে ধরে আইনের আওতায়ও আনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এতো বড় নদী পাহাড়া দিয়ে জাটকা সংরক্ষণ করা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয়। এ জন্য জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিধসহ সমাজের সকলস্তরের মানুষজনকে এগিয়ে আসতে হবে। সকলে সচেতন হলে এই অভিযান আরো বেশি সফল হবে।
জেলা মৎস্য অফিসের দেওয়া তথ্য মতে, গত ১মার্চ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত নদীতে ৪শ’ ২৭টি অভিযান চালিয়ে প্রায় ২৮ মেট্রিক টন জাটকা, ৯০ লক্ষ মিটার কারেন্ট জালসহ বিপুল পরিমানে নৌকা জব্দ করা হয়েছে। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ২৩৬জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এই সাথে দুই শতাধিক জেলেকে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডাদেশ দিয়েছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী বলেন, নববর্ষ উপলক্ষ্যে কিছুটা বাড়তি লাভের আশায় অসাধু জেলেরা নদীতে নামে ইলিশ ধরতে। এই সময়টাতে সাধারণ মানুষের মাঝে ইলিশের চাহিদা বেশি থাকায় সুযোগটা কাজে লাগাতে চায় জেলেরা। তবে আমরাও নববর্ষকে কেন্দ্র করে নদীতে পাহাড়া জোরদার করেছি। জেলেরা যেন কোন অবস্থাতেই নদীতে নামতে না পারে সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন।
তিনি বলেন, নববর্ষ উদযাপনে পান্তা ইলিশ খাওয়ার যে একটা প্রথা রয়েছে তা থেকে সকলকে বেড়িয়ে আসতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও সকলকে এই বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ যদি সচেনত হয়ে নিষেধাজ্ঞার এই সময়টাতে ইলিশ খাওয়া বন্ধ রাখে, তবে দেশে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির যে ধারা তা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
চাঁদপুরে পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত রয়েছে ৫১ হাজার ১শ’ ৯০জন জেলে। নিষেধাজ্ঞার সময়টাতে নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে ৪০ হাজার ৫জন জেলেকে ৪০ কেজি করে ৪ মাস চাল দেয়া হয়।