নারায়ন ঘোষ হত্যায় আসামী রাজুর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবিন্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
চাঁদপুর শহরের বিপণীবাগ বাজারে ব্যবসায়ী নারায়ন ঘোষকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত খুনী রাজু মঙ্গলবার হত্যাকান্ডের বিষয়ে চাঁদপুরের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। ঘটনার সাথে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করায় আপাতত তার রিমান্ড আবেদন করেনি সিআইডি।

এর আগে ঢাকার সিআইডি কর্তৃক আটকের পর চাঁদপুর সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। সোমবার বিকেলে চাঁদপুর সিআইডির কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। আটকের পর মামলার তদন্ত মডেল থানার পরিবর্তে সিআইডির কাছে হস্তান্তর করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে চাঁদপুরের আদালতে সোপর্দ করে সিআইডি।

প্রযুক্তির ব্যবহার করে রোববার রাতে ঢাকা সিআইডি’র বিশেষ টিম রাজুকে সিলেট শহর থেকে আটক করে। আটকের পর খুনের রহস্যও উন্মোচন করেছে সিআইডি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত রাজু জানিয়েছে, পাওনা টাকার লেনদেনের জেরে এই হত্যাকান্ড।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলার প্রধান আসামী রাজু চন্দ্র শীল (৩০) কে আটকের পর হত্যাকান্ডের বিস্তারিত তথ্য জানতে পারে। আটককৃত রাজু চাঁদপুর শহরের বিপণীবাগ বাজারের টিপটপ সেলুনের কর্মচারী ছিল। সেই সেলুনেই গত ১৫ সেপ্টেম্বর (বুধবার) দিবাগত রাতে ব্যবসায়ী নারায়ন ঘোষকে হত্যা করা হয়।

গত বৃহস্পতিবার নারায়ন চন্দ্র ঘোষের লাশ বিপণীবাগ বাজারের পাবলিক টয়লেটের পাশ থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। নিহত নারায়ন ঘোষ চাঁদপুরের বিভিন্ন দোকানে দীর্ঘদিন ধরে দই-মিষ্টি বিক্রয় করে আসছিলেন। ঘটনার দিন রাতে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য তিনি অভিযুক্ত রাজু চন্দ্র শীলের কাছে যান। এরপরই তাকে হত্যা করা হয়।

বিপণীবাগ বাজারের নৈশপ্রহরী মো. ইসমাইল জানান, গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে ওই বাজারের টিপটপ সেলুনের কর্মচারী রাজু চন্দ্র শীলকে রাত ১টায় সাটার খুলে পানি দিয়ে দোকান পরিষ্কার করতে দেখা যায়। তখন তাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায় যে, ধর্মীয় উৎসব থাকার কারণে দোকান পরিষ্কার করে পুরাতন জামা-কাপড়সহ অন্যান্য ময়লা জিনিসপত্র বস্তায় করে নিয়ে যাচ্ছে।

এরপর সেই বস্তাটি আসামি বিপণীবাগ মার্কেটের পশ্চিম পাশে শরীফ স্টিল ও পানির পাম্পের স্টাফ রুমের পূর্ব পাশের গলির ভেতর (পাবলিক টয়লেট সংলগ্ন) ফেলে রেখে পুনরায় দোকানে ফিরে আসে। এরপর আসামি পানি দিয়ে সেলুন পরিষ্কার করতে থাকে। সেলুন থেকে লাশ ফেলার স্থান পর্যন্ত রক্তের দাগ দেখা যায়।

পরবর্তী সময়ে সেলুনের মালিক শ্রীকৃষ্ণ দোকান খুলে সেলুনের মেঝেতে রক্ত মাখা পানি দেখতে পান। এ ছাড়া সেলুনের দেয়ালে, চেয়ারের কভারে, মেঝেতে, বালতির মধ্যে রক্তের দাগ দেখা যায়। এই ঘটনার পর আসামি রাজু চন্দ্র শীল পলাতক হয়।

ব্যবসায়ী নারায়ণ ঘোষ নিহতের ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার তার ছোট ছেলে রাজীব ঘোষ রাজু বাদী হয়ে টিপটপ সেলুন কর্মচারী রাজুকে ১ নাম্বার এবং অজ্ঞাতনামা আরো বেশকজনকে আসামী করে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং ৩০, তাং ১৬/৯/২০২১। প্রথমে এই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় মডেল থানার ইন্সপেক্টর ইন্টেলিজেন্স এন্ড অপারেশন মোঃ এনামুল হককে। পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডিকে।

চাঁদপুর মডেল থানার ওসি মো. আবদুর রশিদ জানান, ঢাকার সিআইডি সিলেট থেকে আসামী রাজুকে আটক করেছে। তাকে চাঁদপুর সিআইডি’র কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মঙ্গলবার তাকে চাঁদপুরের আদালতে তোলা হয়।

সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর সোমবার গণমাধ্যমকে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি সিআইডি নজরে আসে। এরপর ঘটনাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তিনি বলেন, সিআইডি অভিযুক্তের সম্ভাব্য লুকিয়ে থাকার সকল স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। অবশেষে সিলেট শহর হতে অভিযুক্তকে সিআইডির একটি টিম গ্রেপ্তার করে। আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সিআইডি জানায়, আসামি স্বীকার করেছে টাকার লেনদেনকে কেন্দ্র করেই সে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)