শরীফুল ইসলাম :
করোনায় সব শেষ হয়ে গেছে। দীর্ঘ প্রায় দেড় বছরের করোনার ছোবলে আমাদের পৈত্রিক ব্যবসা প্রায় বন্ধের উপক্রম। এখন আর আগের মত ব্যবসায় কোন প্রাণচাঞ্চলতা নেই। এমনকি গত দেড় বছরে এই পৈত্রিক ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে কেহ কেহ। আবার অনেকে ব্যবসার পরিধিও ছোট করে ফেলেছে। মূল কথা এই মহামারী করোনা কেড়ে নিয়েছে আমাদের রুটি-রুজি।
অথচ কেহই আমাদের কোন খবর রাখে না। অনেকে সরকারি সাহায্য সহযোগীতা পেলেও আমরা বঞ্চিত। খুব আক্ষেপ করে কথাগুলো বললেন চাঁদপুর শহরের আব্দুল করিম পাটওয়ারী সড়কের উত্তম স্টোরের মালিক কামারশিল্পি উত্তম চন্দ্র কর্মকার।
তিনি বলেন, আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও প্রতিবছরই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠতো এ শিল্প। তাইতো আমরা প্রতিবছরই কোরবানীর এই সময়টার অপেক্ষায় থাকি। কারণ, এই সময়ে সারা বছরের ধার- দেনার পরিশোধের সুযোগ থাকে। কিন্তু গত বছরের ন্যায় এবারও করোনায় আমাদের সব আশা শেষ হয়ে গেছে।
যদিও এক সময় সারা বছরের ন্যায় কোরবানির ঈদে টুং টাং শব্দে মুখরিত থাকতো চাঁদপুরের কামারপাড়াগুলো। অন্যান্য বছরের এই সময়ে দম ফেলারও সময় ছিল না তাদের। দিন-রাত দা, ছুড়ি, বটি, চাপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি বানাতে নির্ঘূম ব্যস্ততায় সময় কেটেছে। চাহিদামত নির্দিষ্ট সময়ে কামার সরঞ্জামাদি ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে ঘুমানোরও সময় পায়নি তারা। কিন্তু করোনায় থমকে গেছে জনজীবন। তাইতো ঈদুল আজহা আগমনের শেষ মুহূর্তেও চাঁদপুরের কামারপাড়ায় নেই কোন ব্যস্ততা। এই করোনায় ফুরিয়ে গেছে তাদের মুখের হাসিও।
চাঁদপুর শহরের তালতলা, বিষ্ণুদী, কুমিল্লা রোড, করিম পাটওয়ারী সড়ক, উকিলপাড়া, বকুলতলা রোড ও পুরান বাজারের বিভিন্ন এলাকার বাজার ও কামারপাড়াগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাত-দিন টুং-টাং শব্দ আর নেই। কামার শিল্পীদের দা, ছুড়ি, বটি, চাপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি বানানোর কাজে কোন ব্যস্ততাও নেই।
ফলে দোকানের মালিক থেকে শুরু করে কর্মচারীরাও কাজ না থাকায় অলস সময় পার করছেন। আবার অনেকে বেতন দিতে না পারায় কর্মচারীকে ছুটিও দিয়ে রেখেছেন। এদের মত মতলব উত্তরের চেঙ্গাচর বাজার, লুতুরদি, কালিপুর, কালিপুর বাজার, সুজাতপুর, আনন্দবাজার এলাকাও একই চিত্র দেখা গেছে।
চাঁদপুর শহরের তালতলা এলাকার শংকর স্টোরের মালিক শংকর কর্মকার জানায়, প্রতি বছরই কোরবানীর ঈদের এক দেড় মাস আগ থেকেই শুরু হতো আমাদের ব্যস্ততা। বাধ্য হয়ে এই সময়ে কর্মচারীও বাড়াতে হতো। কিন্তু এ বছর করোনায় কর্মচারী বাড়ানোর পরিবর্তে কমাতে হয়েছে। এরপরও সামলাতে পারছি না।
এ প্রসঙ্গে শহরের চেয়ারম্যান ঘাট এলাকার চাঁদপুর কর্মকার স্টোরের মালিক রবি কর্মকার জানায়, বংশ পরস্পরায় আমরা কামারের কাজ করে আসছি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারনে বর্তমানে এ পেশা বন্ধ হওয়ার উপক্রম।