ব্ল্যাকআউট

————-জারিন তাসনিম সিঁথি————

শুনলাম আজ নাকি নারীদের ব্ল্যাকআউট ডে??
শুধুই ব্ল্যাকআউট ডে নাকি জাতীয় ব্ল্যাকআউট ডে তে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছে এতক্ষনে?
না মানে এরকম ব্ল্যাকআউট ডের ইতিহাস অন্য কোনো নামে যে এ জাতি দেখে নি তাতো না।
বলছি, ব্ল্যাআউটের সংজ্ঞা আপনারা ঠিক কি দাড় করালেন?
নারী অন্ধকারচ্ছন্ন?
নারী ধর্ষিত?
নারী স্তব্ধ?
নারী চূর্ন?
ক্ষত বিক্ষত?
নারীর অস্তিত্ব নেই?

আমার কাছে তো অন্তত তাই মনে হচ্ছে।
ব্ল্যাকআউড ডে উদযাপন করে জানান দিতে হবে নারী না থাকলে কি হতো?
আই মিন সিরিরয়াসলি?
যে জাতিকে দিবস পালনে বুঝাতে হয় নারী কি, নারী কে, নারীর অস্তিত্ব কোথায় এবং কতটা সে জাতির এরকম একটা ব্ল্যাকআউট ডে তে হবে তো?
আপনারা সত্যিই মনে করেন একটি অন্ধকার প্রোফাইল নারীর নারীত্ব কে যোগ্য সম্মানে তুলে ধরতে পারে?
অবশ্য আপনারা পারেন,
একটা ইস্যু হলো সেটা ট্রেন্ড ও হয়ে গেলো।

এই যে দেখুন নারী অন্ধকার হলো এখন,
এবার নারী কবিতা হবে
আবার ক্যানভাস হবে
তারপর হবে মিছিল
কিন্তু তারপর কি হবে?
আর ইউ সিউর যে নারীর কবিতা, ক্যানভাস, মিছিল হওয়া টাই আপনারা চান?
এটিই কি নারীর চাওয়া?

এ রকম কোনো ইঙ্গিত কি পেয়েছেন সেই নারী লিঙ্গের থেকে?
নারীর নারী হিসেবে স্বীকৃতি চান আপনারা? নারী আছে, নারী নেই এই অস্তিত্ব বুঝাতে দিবস পালন করেন,কিন্তু একটা কথা বলুন, নারীই চান তো?
বাস্তবিক অর্থে আসলে কোনো নারী নারী হতে চায় না, নারী দূর্গা হতে চায় না, নারী তনু হতে চায় না, নারী তিন্নি হতে চায় না, সবশেষে নারী ভিন্ন হতে চায় না, অন্ধকার হতে চায় না
নারী চায় মানুষ হতে।
শুধুই মানুষ
রক্তের মাংসের দাপের তৈরী শুধু একজন মানুষ।

আপনারা বলছেন ব্ল্যাকআউট আপনাদের আন্দোলন? এমন নীরব আন্দোলন?
আন্দোলনের সংজ্ঞা আপনারা জানেন? আন্দোলন নিশ্চুপ হয় না,
আন্দোলন হতে হয় তীব্র, হিংস্র, কঠিন, ঠিক পাহাড়ের মতো
নারী কে এক যোগে আড়াল করে আপনি নারী মুক্তি চাইছেন?
নারীকে অন্ধকারের আন্দোলেনে টেনে আলোকিত সমাজ চান?
নারীর প্রকাশের সক্ষমতা কে ছাপিয়ে নারী শক্তি উন্মোচন চাইছেন?
সম্ভব কখনো?

একটু ভাবুন তো এটাই কি সঠিক পন্থা?
নারী ছোটো, নারী অত্যাচারিত, নারী ধর্ষিত, নারী দূর্বল, নারী আড়াল, নারী আলেয়া
আন্দোলন এটা বুঝানোর তো হওয়ার কথা ছিলো না এবার,
“নারী সুন্দর, নারী সত্য, নারী স্বচ্ছ, নারী প্রনবন্ত, নারী প্রজ্জ্বল, নারী আলোকিত” আন্দোলনের বিষয় চাই এটা। ঠিক এই বিষয়টা৷
তা না করে আন্দোলনের ভাষাই পাল্টে দিচ্ছেন? পায়ে শিকল বেঁধে দৌড়ানো যায় না। আর তাই নিজে অন্ধকার হয়ে নারী কে আলো দেখাতে অন্তত আপনারা পারবেন না।

নারী হতে সাহস লাগে, শক্তি লাগে, আপাতত আপানরা মানুষ হোন পরে না হয় নারী হবেন। তবে তখন কিন্তু অন্ধকার নারী চলবে না, আলোকিত নারী চাই।
আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি নারী নিজেকে যেদিন নারী ছাপিয়ে মানুষ মনে করতে পারবে, নিজের নিরাপত্তার জন্য পুরুষ লিঙ্গের উপর নির্ভরশীল মনে না করবে, ঠিক সেদিন থেকেই নারীর পেছনে নারী কে অন্ধকার আন্দোলনের অংশীদার হতে হবে না।

আমি জানি না, এই ট্রেন্ডের সূচনা কোথায়, তবে নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি এ শুধু নারী কে আরো একবার কৌশলে দাবিয়ে দেয়ার সিস্টেমেটিক চেইন মাত্র।
আর যারা নারী বাদি হয়ে পুরুষদের বিপরীতে সচ্চার হয়েছেন তাদের বলছি, সব পুরুষ ধর্ষক হয় না, ইভেন সব পুরুষ কেন, কোনো পুরুষই ধর্ষক নয় ।
ধর্ষকরা পুরুষের মতো দেখতে কেবল, পুরুষ নয় তারা । তাদের লিঙ্গ যেটিকে তারা অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করে সেটিও পুরুষ লিঙ্গের মতো দেখতে তবে কোনও অর্থেই পুরুষাঙ্গ নয় ।

পুরুষের বিরুদ্ধে কথা বললে বা নারীবাদী হলেই যে আপনি একজন নারীকে স্বতন্ত্র করতে পারেন তা কিন্তু নয়
পুরুষ তান্ত্রিক সমাজ কিংবা ধর্ষনের বিরুদ্ধে লেখা, পার্টিকুলার কোনও লিঙ্গের বিরুদ্ধে নয় । একটা গোটা সিস্টেমের বিরুদ্ধে
একই ভাবে যারা ব্ল্যাকআউটডে উদযাপন করে বোঝাতে চাচ্ছেন আপনারা আন্দোলন করে নারী মুক্তি চাইছেন, তারা এটা মাথার মধ্যে ভালো করে ঢোকান প্লিজ, “everyone is raped everyday, everywhere. Even you are raped today by this blackout system”

-লেখক : জারিন তাসনিম সিঁথি, বাচিক শিল্পী ও জাতীয় পুরুষ্কার প্রাপ্ত বিতার্কিক।

শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

০১৭১৬৫১৯৫৪১ (বার্তা বিভাগ)